- Get link
- X
- Other Apps
৫টি খাবার যা শিশুদের জন্য বিপদজনক হতে পারে: গোপনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো ঝুঁকি
৫টি খাবার যা শিশুদের জন্য বিপদজনক হতে পারে:
শিশুদের খাদ্যতালিকা তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছু খাবার রয়েছে যা দেখতে নিরীহ মনে হলেও শিশুদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমনকি তাদের জীবনও কেড়ে নিতে পারে। নিচে এমন ৫টি খাবারের কথা আলোচনা করা হলো, যা শিশুদের খাদ্যাভ্যাস থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা উচিত:
১. ছোট ও গোল খাবার (যেমন: আস্ত আঙুর, চেরি, পপকর্ন, বাদাম, মার্বেল-আকারের ক্যান্ডি)
কেন বিপদজনক: এই ধরনের খাবারগুলো শিশুদের শ্বাসনালীতে আটকে যেতে পারে, কারণ তাদের শ্বাসনালী ছোট এবং তারা খাবার পুরোপুরি চিবিয়ে গিলতে শেখে না। এর ফলে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে (choking), যা দ্রুত মৃত্যু ঘটাতে পারে।
করণীয়:
* আঙুর ও চেরি: এগুলিকে লম্বালম্বিভাবে চার টুকরো করে কাটুন।
* বাদাম ও পপকর্ন: ৩-৪ বছর বয়সের নিচে শিশুদের এগুলো দেবেন না।
* ক্যান্ডি: ছোট, শক্ত বা আঠালো ক্যান্ডি এড়িয়ে চলুন।
২. মধু (বিশেষ করে ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য)
কেন বিপদজনক: মধুতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম (Clostridium botulinum) নামক ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থাকতে পারে। ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের পরিপাকতন্ত্র এই স্পোরগুলোকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট পরিপক্ক থাকে না, যার ফলে বোটুলিজম (infant botulism) নামক বিরল কিন্তু মারাত্মক রোগ হতে পারে। এটি পেশী দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
করণীয়: ১ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে কোনো অবস্থাতেই মধু দেবেন না।
৩. কাঁচা বা আধা সেদ্ধ ডিম, মাংস ও মাছ
কেন বিপদজনক: কাঁচা বা আধা সেদ্ধ খাবারে সালমোনেলা (Salmonella), ই. কোলাই (E. coli) বা লিস্টেরিয়া (Listeria) এর মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গুরুতর খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে, যা ডায়রিয়া, বমি, জ্বর এবং ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চরম ক্ষেত্রে এটি কিডনি বিকল বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
করণীয়:
* শিশুদের জন্য সব খাবার ভালোভাবে রান্না করা নিশ্চিত করুন।
* কাঁচা মাংস, মাছ বা ডিমের সংস্পর্শে আসা বাসনপত্র ভালো করে ধুয়ে নিন।
৪. অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার কেন বিপদজনক:
* অতিরিক্ত চিনি: অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার (যেমন: সোডা, মিষ্টি পানীয়, ক্যান্ডি, প্যাকেটজাত জুস) স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। শিশুরা এসব খাবার দ্রুত পছন্দ করে ফেলে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়।
* অতিরিক্ত লবণ: অতিরিক্ত লবণ শিশুদের কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই প্রচুর লবণ থাকে।
করণীয়:
* শিশুদের চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকস থেকে দূরে রাখুন।
* ঘরে তৈরি খাবারে চিনি ও লবণের পরিমাণ সীমিত করুন।
* শিশুদের জন্য প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন ফল বেছে নিন।
৫. প্রসেসড ফুড ও জাঙ্ক ফুড (যেমন: চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, নুডুলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ)
কেন বিপদজনক: এই খাবারগুলোতে প্রায়শই প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর চর্বি (ট্রান্স ফ্যাট), চিনি, লবণ এবং কৃত্রিম রঙ ও প্রিজারভেটিভ থাকে। এগুলো পুষ্টিগুণে অত্যন্ত কম এবং শিশুদের শরীরে স্থূলতা, পুষ্টিহীনতা, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে। নিয়মিত এই খাবারগুলো খেলে শিশুদের মেধা ও শারীরিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
করণীয়:
* যতটা সম্ভব তাজা ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিন।
* প্রসেসড ফুড এবং জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন - ফল, দই বা বাদাম (বয়স অনুসারে) দিন।
শিশুদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে এই খাবারগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তাদের খাদ্যতালিকা থেকে এগুলোকে বাদ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।