- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষার তারিখ ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন নং ১১ ক এবং খ
১১.ক) “কিছু কিছু ক্ষেত্রে The Limitation Act, 1908 দলিল ছাড়া মালিকানা, অধিকার ও স্বত্ব সৃষ্টি করে।” সংশ্লিষ্ট ধারা (সমূহ) উল্লেখে ব্যাখ্যা করুন।
১১. খ) তামাদির মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলাফল কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন। Y পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১০ শতক জমি ভোগদখলীয় থাকা অবস্থায় গত ১/৩/২০০৮ তারিখ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায়। ৪/৬/২০০৮ তারিখ Z, Y কে উক্ত জমি হতে বেদখল করে এবং নিজের বলে দাবী করে। Y ৯/৭/২০২০ তারিখ সুস্থ হয়। পরবর্তীতে ২৮/৬/২০২৫ তারিখ Y স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখলের মামলা করে। উক্ত মামলার তামাদির বিষয়ে The Limitation Act, 1908 এর প্রাসঙ্গিক বিধান উল্লেখে আপনার মতামত প্রদান করুন।
১১ নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
তামাদি আইন, ১৯০৮ অনুযায়ী মালিকানা, অধিকার ও স্বত্ব সৃষ্টি
তামাদি আইন, ১৯০৮ (The Limitation Act, 1908) সাধারণত অধিকার প্রয়োগের সময়সীমা নির্ধারণ করে, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি দলিল ছাড়াই মালিকানা, অধিকার ও স্বত্ব সৃষ্টি করতে পারে। এই ধারণাটি মূলত প্রতিকূল দখল (adverse possession) এর উপর ভিত্তি করে গঠিত।
প্রতিকূল দখলের মাধ্যমে স্বত্ব সৃষ্টি
তামাদি আইনের ধারা ২৮ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়সীমার (সাধারণত ১২ বছর) জন্য কোনো সম্পত্তির প্রকৃত মালিকের বিরুদ্ধে প্রতিকূলভাবে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করে, তাহলে প্রকৃত মালিকের ওই সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকার তামাদি হয়ে যায় এবং দখলকারীর অনুকূলে স্বত্ব সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, প্রকৃত মালিকের অধিকার বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে দখলদারের অধিকার পরিপূর্ণতা লাভ করে, এমনকি যদি তার কোনো বৈধ দলিল না-ও থাকে। একেই প্রতিকূল দখলের মাধ্যমে স্বত্ব অর্জন (acquisition of title by adverse possession) বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ: যদি 'ক' নামক ব্যক্তি 'খ'-এর একটি জমি ১২ বছর বা তার বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণভাবে, প্রকাশ্যভাবে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজের বলে দাবি করে ভোগদখল করে, এবং 'খ' এই সময়ের মধ্যে জমি উদ্ধারের জন্য কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে 'খ'-এর জমি উদ্ধারের অধিকার তামাদি হয়ে যাবে এবং 'ক' ওই জমির মালিকানা লাভ করবে, এমনকি তার কাছে কোনো দলিল না থাকলেও।
১১ নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
তামাদির মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলাফল
তামাদি আইনের ধারা ১৮ প্রতারণার ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ গণনার ফলাফল সম্পর্কে আলোকপাত করে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো মামলা বা দরখাস্তের কারণ প্রতারণার মাধ্যমে গোপন রাখা হয়, অথবা কোনো দলিলের জন্য মামলা করা হলে সেই দলিলটিও যদি প্রতারণার মাধ্যমে গোপন রাখা হয়, তাহলে তামাদির মেয়াদ সেই সময় থেকে গণনা করা শুরু হবে, যখন প্রতারণা সম্পর্কে বাদী জানতে পারবে বা যুক্তিসঙ্গত অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জানতে পারত।
অর্থাৎ, প্রতারণার ঘটনা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রতারণা আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত তামাদির ঘড়ি চলতে শুরু করে না। এটি প্রতারিত ব্যক্তিকে তার অধিকার প্রয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়, যা প্রতারণার কারণে পূর্বে সম্ভব হয়নি।
উদাহরণ: ধরুন, 'ক' এবং 'খ' এর মধ্যে একটি জমি কেনাবেচার চুক্তি হয়। 'ক' (বিক্রেতা) 'খ' (ক্রেতা) কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমিটির একটি অংশ গোপন করে বিক্রি করে, এবং এই প্রতারণা 'খ' জানতে পারে না। তিন বছর পর, 'খ' ঘটনাক্রমে জানতে পারে যে তাকে প্রতারণা করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, তামাদির মেয়াদ সেই দিন থেকে গণনা করা শুরু হবে যেদিন 'খ' প্রতারণা সম্পর্কে জানতে পারল, যেদিন চুক্তি হয়েছিল সেদিন থেকে নয়।
Y এর মামলার তামাদির বিষয়ে মতামত
Y এর মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইন, ১৯০৮ এর নিম্নলিখিত ধারাগুলো প্রাসঙ্গিক:
* ধারা ৬: আইনগত অক্ষমতার ক্ষেত্রে তামাদি (Legal disability)
* ধারা ৯: সময়ের অবিরাম চলন (Continuous running of time)
ঘটনার বিশ্লেষণ:
* Y ১/৩/২০০৮ তারিখে অপ্রকৃতিস্থ হন (আইনগত অক্ষমতা)।
* Z ৪/৬/২০০৮ তারিখে Y কে বেদখল করে।
* Y ৯/৭/২০২০ তারিখে সুস্থ হন।
* Y ২৮/৬/২০২৫ তারিখে স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখলের মামলা করেন।
আইনের প্রয়োগ:
ধারা ৬ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মামলা বা দরখাস্ত করার অধিকারী হওয়ার সময় অপ্রকৃতিস্থ থাকে, তবে তার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হয় না। Y অপ্রকৃতিস্থ থাকাকালীন (১/৩/২০০৮ থেকে ৯/৭/২০২০) Z তাকে বেদখল করে (৪/৬/২০০৮)। যেহেতু Y তখন অপ্রকৃতিস্থ ছিল, তার অপ্রকৃতিস্থতার কারণে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হয়নি।
Y সুস্থ হয়েছেন ৯/৭/২০২০ তারিখে। এখন তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে এই তারিখ থেকে। স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখলের মামলার তামাদির মেয়াদ সাধারণত বেদখলের তারিখ থেকে ১২ বছর (তামাদি আইনের প্রথম তফসিলের অনুচ্ছেদ ৬৪ বা ৬৫ অনুযায়ী)।
এখানে, Y ৯/৭/২০২০ তারিখে সুস্থ হওয়ার পর থেকে তার মামলা করার অধিকার উন্মুক্ত হয়েছে। ১২ বছরের তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে ৯/৭/২০২০ থেকে। এই হিসাবে, Y এর মামলা করার শেষ সময় হলো ৯/৭/২০৩২।
Y মামলা করেছেন ২৮/৬/২০২৫ তারিখে, যা ৯/৭/২০৩২ তারিখের আগেই।
মতামত:
উপরিউক্ত আলোচনা ও তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৬ এর বিধান অনুযায়ী, Y এর মামলাটি তামাদিজনিত কারণে বারিত হবে না। যেহেতু Y অপ্রকৃতিস্থ থাকাকালীন বেদখল হয়েছিলেন এবং সুস্থ হওয়ার পর থেকেই তার তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হয়েছে, তাই ২৮/৬/২০২৫ তারিখে দায়েরকৃত মামলাটি তামাদির নির্ধারিত ১২ বছরের মেয়াদের মধ্যেই রয়েছে।