- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ উপর আলোচনা
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ৭ এর ক ও খ
৭। ক) The Penal Code, 1860 অনুসারে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহের মধ্যে পার্থক্য লিখুনঃ
i) গুরুতর আঘাত ও আঘাত;
ii) সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য;
iii) মনুষ্যহরণ ও অপহরণ:
iv) অবৈধ বাধা ও অবৈধ অবরোধ।
৭। খ) X মৃত্যু হবে জেনেও Y এর মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়েন। কিন্তু ঐ গুলিতে Z এর মৃত্যু হয়। X এক্ষেত্রে The Penal Code, 1860 এর কোন ধারার অধীনে অপরাধ করেছেন? ব্যাখ্যা করুন।
৭। ক)
i) গুরুতর আঘাত ও আঘাত (Grievous Hurt and Hurt):
আঘাত (Hurt - ধারা ৩১৯): যখন কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্য কোনো ব্যক্তির শারীরিক কষ্ট, অসুস্থতা বা দুর্বলতা ঘটায়, তখন তাকে 'আঘাত' বলে। এটি সাধারণত কম গুরুতর প্রকৃতির আঘাতকে বোঝায়, যেমন ছোটখাটো আঘাত, ফুসকুড়ি, বা সামান্য ব্যাথা।
গুরুতর আঘাত (Grievous Hurt - ধারা ৩২০): গুরুতর আঘাত হল আঘাতের একটি গুরুতর প্রকার, যা নির্দিষ্ট কিছু গুরুতর শারীরিক ক্ষতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে পুরুষত্বহীনতা, স্থায়ীভাবে চোখের দৃষ্টি বা কানের শ্রবণশক্তি হারানো, শরীরের যেকোনো গ্রন্থি বা অঙ্গের কার্যক্ষমতা হারানো, মুখমণ্ডল বা মাথার চিরস্থায়ী বিকৃতি, হাড় বা দাঁত ভাঙা বা স্থানচ্যুত হওয়া, বা এমন কোনো আঘাত যা জীবনের জন্য বিপদজনক বা যা ২০ দিনের বেশি সময় ধরে তীব্র শারীরিক যন্ত্রণার কারণ হয় বা একজন ব্যক্তিকে তার সাধারণ কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখে। গুরুতর আঘাতের জন্য শাস্তির পরিমাণ আঘাতের চেয়ে বেশি।
ii) সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য (Common Intention and Common Object):
সাধারণ অভিপ্রায় (Common Intention - ধারা ৩৪): যখন একাধিক ব্যক্তি একটি সাধারণ অভিপ্রায় নিয়ে কোনো অপরাধমূলক কাজ করে, তখন তাদের প্রত্যেকেই সেই কাজের জন্য এমনভাবে দায়ী হবে যেন সে একা সেই কাজ করেছে। এখানে প্রতিটি অপরাধীর মধ্যে একটি পূর্বপরিকল্পিত ধারণা বা মানসিক ঐক্য থাকে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে বা ঘটনাচলাকালীন এই অভিপ্রায়টি গঠিত হতে পারে।
সাধারণ উদ্দেশ্য (Common Object - ধারা ১৪৯): যখন একটি বেআইনি সমাবেশের কোনো সদস্য সেই সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোনো অপরাধ করে, বা কোনো অপরাধ করে যা সেই সমাবেশের সদস্যরা সম্ভবত জানে যে সাধারণ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য করা হবে, তখন সেই সমাবেশের প্রতিটি সদস্য সেই অপরাধের জন্য দায়ী হবে। এখানে একটি 'বেআইনি সমাবেশ' (পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ, যার একটি নির্দিষ্ট বেআইনি উদ্দেশ্য থাকে) থাকা আবশ্যিক। সাধারণ উদ্দেশ্যটি পূর্বনির্ধারিত থাকে এবং ব্যক্তিরা সেই উদ্দেশ্যে একটি গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে কাজ করে। সাধারণ অভিপ্রায়ে পূর্বপরিকল্পিত ঐকমত্য অত্যাবশ্যক, যেখানে সাধারণ উদ্দেশ্যে বেআইনি সমাবেশের অংশ হওয়া এবং সেই সমাবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকাই যথেষ্ট।
iii) মনুষ্যহরণ ও অপহরণ (Kidnapping and Abduction):
মনুষ্যহরণ (Kidnapping - ধারা ৩৬০ ও ৩৬১):
বাংলাদেশ থেকে মনুষ্যহরণ (Kidnapping from Bangladesh - ধারা ৩৬০): কোনো ব্যক্তিকে তার সম্মতি ছাড়া বা যদি সে নাবালক হয় (১৪ বছরের কম বয়সী পুরুষ বা ১৬ বছরের কম বয়সী মহিলা) বা বিকৃতমস্তিষ্ক হয়, তাহলে তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া।
আইনসম্মত অভিভাবকত্ব থেকে মনুষ্যহরণ (Kidnapping from lawful guardianship - ধারা ৩৬১): কোনো নাবালক (১৪ বছরের কম বয়সী পুরুষ বা ১৬ বছরের কম বয়সী মহিলা) বা বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তিকে তার আইনসম্মত অভিভাবকের তত্ত্বাবধান থেকে নিয়ে যাওয়া বা প্রলুব্ধ করা।
মনুষ্যহরণের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়; কেবল ব্যক্তিটিকে নির্দিষ্ট সীমানা বা আইনসম্মত অভিভাবকত্ব থেকে সরানোই অপরাধ। এটি একটি স্থির অপরাধ।
অপহরণ (Abduction - ধারা ৩৬২): কোনো ব্যক্তিকে বলপূর্বক কোনো স্থান থেকে নিয়ে যাওয়া বা কোনো প্রতারণামূলক উপায়ে তাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বাধ্য করা। অপহরণের ক্ষেত্রে, ব্যক্তির বয়স বা অভিভাবকত্বের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। অপহরণ একটি চলমান অপরাধ, যতক্ষণ না ব্যক্তিটিকে সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়। অপহরণ সাধারণত কোনো অতিরিক্ত অপরাধ (যেমন খুন, ধর্ষণ) সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
iv) অবৈধ বাধা ও অবৈধ অবরোধ (Wrongful Restraint and Wrongful Confinement):
অবৈধ বাধা (Wrongful Restraint - ধারা ৩৩৯): যখন কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে বাধা দেয় যাতে সে একটি নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করতে বা যেতে না পারে যেখানে তার যাওয়ার অধিকার আছে, তখন তাকে 'অবৈধ বাধা' বলে। এটি আংশিক বাধা, অর্থাৎ ব্যক্তিটি অন্য কোনো দিকে যেতে পারে, শুধু একটি নির্দিষ্ট পথ বা দিক থেকে তাকে বিরত রাখা হয়।
অবৈধ অবরোধ (Wrongful Confinement - ধারা ৩৪০): যখন কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে আটক করে যাতে সে একটি নির্দিষ্ট পরিসীমার বাইরে যেতে না পারে, তখন তাকে 'অবৈধ অবরোধ' বলে। এটি সম্পূর্ণ বাধা, যেখানে একজন ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট স্থান বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং সে কোনো দিকেই যেতে পারে না। অবৈধ অবরোধ হল অবৈধ বাধার একটি গুরুতর রূপ।
৭। খ) X মৃত্যু হবে জেনেও Y এর মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়েন। কিন্তু ঐ গুলিতে Z এর মৃত্যু হয়। X এক্ষেত্রে The Penal Code, 1860 এর কোন ধারার অধীনে অপরাধ করেছেন? দায় সহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
এই ক্ষেত্রে X The Penal Code, 1860 এর ধারা ৩০১ (একজনের মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে অন্যের মৃত্যু ঘটানো) এর অধীনে অপরাধ করেছেন এবং এর ফলে ধারা ৩০০ (খুন) এর আওতায় তার দায় (liability) নির্ধারিত হবে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং দায়:
এই পরিস্থিতিতে, X এর অপরাধের ক্ষেত্রে "Doctrine of Transferred Malice" বা "বিদ্বেষের হস্তান্তর নীতি" প্রযোজ্য। এই নীতির মূল কথা হলো, যদি একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিপ্রায় নিয়ে কাজ করে এবং সেই কাজের ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোনো নির্দোষ তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষতি হয়, তাহলে প্রথমোক্ত ব্যক্তির অভিপ্রায় সেই তৃতীয় ব্যক্তির প্রতি হস্তান্তরিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সে তার মূল অভিপ্রায় অনুযায়ী দায়ী হবে।
ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে X এর দায় নিম্নরূপ:
অভিপ্রায় (Intention): X এর সুস্পষ্ট অভিপ্রায় ছিল Y এর মৃত্যু ঘটানো। "মৃত্যু হবে জেনেও" গুলি ছোঁড়া হয়েছে, যা খুনের (Murder) একটি মৌলিক উপাদান। X জানতেন তার কাজটি Y এর মৃত্যু ঘটাতে পারে।
অপরাধমূলক কাজ (Criminal Act): X গুলি ছুঁড়েছেন, যা একটি সক্রিয় এবং অপরাধমূলক কাজ।
ফলাফল (Result): যদিও X এর লক্ষ্য ছিল Y, তার কাজের ফলে Z এর মৃত্যু হয়েছে।
Penal Code, 1860 এর প্রাসঙ্গিক ধারা এবং দায়:
ধারা ৩০১: "একজনের মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে অন্যের মৃত্যু ঘটানো" (Culpable Homicide by causing death of person other than person whose death was intended)
এই ধারাটি সরাসরি এই ধরনের পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করে:
"যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করে, যা সে যদি সেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে করে যার মৃত্যু সে ঘটাতে চায়, তবে তা খুন বলে গণ্য হবে, এবং সেই কাজের দ্বারা যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে, তাহলে সেই ব্যক্তি খুনের অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে, যেন সে যার মৃত্যু ঘটিয়েছে তার মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই সেই কাজ করেছিল।"
এই ধারা অনুযায়ী, X এর Y কে হত্যা করার অভিপ্রায় ছিল। তার এই কাজের ফলেই Z এর মৃত্যু হয়েছে। তাই, আইনত এটি ধরা হবে যে X, Z এর মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই কাজটি করেছিল।
ধারা ৩০০: "খুন" (Murder)
ধারা ৩০১ এর মাধ্যমে X এর কাজটি ধারা ৩০০ এর অধীনে "খুন" বলে বিবেচিত হবে। ধারা ৩০০ এর ৪টি অবস্থার মধ্যে অন্তত একটি (সাধারণত প্রথম অবস্থা - যদি কাজটি মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায়ে করা হয়) এখানে প্রযোজ্য হয় যখন Z এর উপর X এর অভিপ্রায় হস্তান্তরিত হয়।
X এর দায়:
যেহেতু X "মৃত্যু হবে জেনেও" গুলি ছুঁড়েছিল এবং তার অভিপ্রায় ছিল Y কে হত্যা করা, এবং সেই কাজের ফলস্বরূপ Z এর মৃত্যু ঘটেছে, তাই X ধারা ৩০১ এর অধীনে Z এর খুনের জন্য দায়ী হবেন। তার দায় ঠিক ততটাই হবে, যতটা Y কে হত্যা করলে হতো। অর্থাৎ, X খুনের (ধারা ৩০০) অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং এর জন্য Penal Code, 1860 এর ধারা ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা) পেতে পারেন।
এখানে X এর মূল অভিপ্রায় (Y কে হত্যা করা) তার উপরই বর্তাবে, যদিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ভিন্ন ব্যক্তির (Z) মৃত্যু হয়েছে। এটাই বিদ্বেষের হস্তান্তর নীতির মূল ভিত্তি।