- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ৮ এর ক ও খ
৮. ক) The Evidence Act, 1872 অনুসারে শিশু, বোবা ও বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য কখন ও কতটুকু গ্রহণযোগ্য? মূল দলিলের ফটোকপি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য কি?
খ) X অগ্নিদগ্ধ হয়ে ০২/০৩/২০২৩ তারিখে ডাক্তার D এর নিকট প্রকাশ করেন যে, N ও Z তার গায়ে 'দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। X পরদিন পুলিশ কর্মকর্তা P এর নিকট বলেন যে, N, Y ও Z তার গায়ে 'কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। X ১৫/০৩/২০২৩ তারিখে মুমূর্ষু অবস্থায় মারা যান। X এর বক্তব্যের ভিত্তিতে N, Y ওZ কে সাজা প্রদান করা যাবে কি? The Evidence Act, 1872 এর মৃত্যুকালীন ঘোষণা সংক্রান্ত বিধানানুসারে উত্তর দিন।
৮। ক) শিশু, বোবা ও বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং ফটোকপির গ্রহণযোগ্যতা
দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ অনুসারে শিশু, বোবা এবং বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য কখন এবং কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা নিচে আলোচনা করা হলো:
শিশু সাক্ষীর সাক্ষ্য (Child Witness)
দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর ধারা ১১৮ অনুযায়ী, কোনো শিশু যদি প্রশ্ন বুঝতে এবং সেগুলোর যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে সক্ষম হয়, তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে। এক্ষেত্রে শিশুর বয়স কোনো নির্দিষ্ট সীমা দ্বারা নির্ধারিত নয়, বরং তার বোধগম্যতা এবং জবাব দেওয়ার সক্ষমতাই মুখ্য। আদালত শিশুর সাক্ষ্য গ্রহণ করার আগে তার বুদ্ধিমত্তা, চরিত্র এবং সত্য বলার ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। যদি আদালত মনে করেন যে শিশু সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করতে পারে এবং ঘটনার সঠিক বিবরণ দিতে সক্ষম, তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, সাধারণত শিশু সাক্ষীর সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন হয় এবং এই সাক্ষ্যের সমর্থনে অন্যান্য প্রমাণের (corroboration) প্রয়োজন হতে পারে।
বোবা সাক্ষীর সাক্ষ্য (Dumb Witness)
দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর ধারা ১১৯ অনুযায়ী, একজন বোবা সাক্ষী যদি লেখার মাধ্যমে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে আদালতে তার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারে, তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে। এই ধরনের সাক্ষ্যকে মৌখিক সাক্ষ্যের মতোই গণ্য করা হবে। তবে, শর্ত হলো, ইশারা-ইঙ্গিত বা লেখার মাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্য অবশ্যই বোবা সাক্ষীর নিজের ইচ্ছাধীন এবং বোধগম্য হতে হবে। এক্ষেত্রে, আদালত নিশ্চিত হবেন যে সাক্ষী যা বোঝাতে চাইছেন, তা সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে।
বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য (Hostile Witness)
দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর ধারা ১৫৪ অনুযায়ী, যখন কোনো সাক্ষী তার পূর্বের দেওয়া বক্তব্যের (যেমন, পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দি) সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সাক্ষ্য দেয় অথবা আদালতের কাছে মনে হয় যে সে তার দেওয়া সাক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে বা সত্য গোপন করার চেষ্টা করছে, তখন আদালত তাকে বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করতে পারেন। বৈরী সাক্ষী ঘোষিত হলে, যে পক্ষ তাকে ডেকেছে, সেই পক্ষই তাকে জেরা করতে পারে (cross-examine)। বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে যায় না। তার পূর্বের এবং বর্তমান উভয় বক্তব্যই আদালতে বিবেচিত হয় এবং আদালত অন্যান্য প্রমাণের সাথে মিলিয়ে তার সাক্ষ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ধারণ করেন। বৈরী সাক্ষীর যে অংশটুকু সত্য বলে প্রতীয়মান হয়, সেটুকু গ্রহণ করা যেতে পারে।
মূল দলিলের ফটোকপি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা
সাধারণত, দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ অনুসারে, মূল দলিলই সাক্ষ্য হিসাবে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য (ধারা ৬৪)। এটিকে প্রাথমিক সাক্ষ্য (primary evidence) বলা হয়। তবে, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মূল দলিলের ফটোকপি বা অন্য কোনো মাধ্যমিক সাক্ষ্য (secondary evidence) গ্রহণযোগ্য হতে পারে (ধারা ৬৩ এবং ৬৫)। এই পরিস্থিতিগুলো নিম্নরূপ:
১। যখন মূল দলিলটি প্রতিপক্ষের দখলে থাকে এবং সে নোটিশ সত্ত্বেও তা আদালতে হাজির করতে অস্বীকার করে।
২। যখন মূল দলিলটি হারিয়ে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায়।
৩। যখন মূল দলিলটি সহজে বহনযোগ্য না হয় বা এর ফটোকপি তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়।
৪। যখন মূল দলিলটি জনস্বার্থের দলিল হয়।
উপরে বর্ণিত ক্ষেত্রগুলোতে, মূল দলিলের সত্যায়িত ফটোকপি (certified copy) বা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য ফটোকপি মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যদি প্রমাণ করা যায় যে ফটোকপিটি মূল দলিলের সঠিক অনুলিপি।
৮। খ) X এর মৃত্যুকালীন ঘোষণা এবং N, Y ও Z এর সাজা
দ্য এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর ধারা ৩২(১) অনুযায়ী, মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying Declaration) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য। যখন কোনো ব্যক্তি তার মৃত্যুর কারণ বা সেই ঘটনার পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেন, যা তার মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছে, তখন সেই বক্তব্য আদালতের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং গ্রহণযোগ্য হয়, এমনকি যদি সেই বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে আদালতে জেরা করার সুযোগ না-ও পাওয়া যায়।
আলোচ্য ক্ষেত্রে:
* প্রথম ঘোষণা (০২/০৩/২০২৩): X অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ডাক্তার D এর নিকট প্রকাশ করেন যে, N ও Z তার গায়ে 'দাহ্য পদার্থ' ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
* দ্বিতীয় ঘোষণা (পরদিন): X পুলিশ কর্মকর্তা P এর নিকট বলেন যে, N, Y ও Z তার গায়ে 'কেরোসিন' ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
* মৃত্যু (১৫/০৩/২০২৩): X মুমূর্ষু অবস্থায় মারা যান।
এখানে X এর উভয় বক্তব্যই মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসাবে গণ্য হবে, কারণ এই বক্তব্যগুলো তার মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেওয়া হয়েছে এবং এর পরেই তিনি মারা গেছেন।
সাজা প্রদানের সম্ভাবনা:
* N এবং Z এর ক্ষেত্রে: X এর উভয় বক্তব্যেই N এবং Z এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ঘোষণায় 'দাহ্য পদার্থ' এবং দ্বিতীয় ঘোষণায় 'কেরোসিন' উল্লেখ থাকলেও, মূল অভিযুক্ত N এবং Z এর বিষয়ে সামঞ্জস্য রয়েছে। যদি আদালত এই মৃত্যুকালীন ঘোষণাটিকে বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বতঃস্ফূর্ত বলে মনে করেন, তাহলে N এবং Z কে সাজা প্রদান করা সম্ভব। তবে, এটি শুধু একমাত্র প্রমাণ হিসেবে পর্যাপ্ত নাও হতে পারে; অন্যান্য পারিপার্শ্বিক প্রমাণ (circumstantial evidence) বা সমর্থক প্রমাণ (corroborative evidence) থাকলে সাজা প্রদানের সম্ভাবনা আরও দৃঢ় হবে।
* Y এর ক্ষেত্রে: X এর প্রথম ঘোষণায় Y এর নাম উল্লেখ ছিল না, কিন্তু দ্বিতীয় ঘোষণায় Y এর নাম যুক্ত করা হয়েছে। এই অসামঞ্জস্যতাটি আদালতের বিবেচনাধীন থাকবে। যদি এই অসামঞ্জস্যতার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকে বা তা সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে শুধু দ্বিতীয় ঘোষণার ভিত্তিতে Y কে সাজা দেওয়া কঠিন হতে পারে। Y এর বিরুদ্ধে সাজা প্রদানের জন্য অতিরিক্ত প্রমাণ বা এই অসামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যা করার মতো দৃঢ় কারণ প্রয়োজন হবে। আদালত অবশ্যই এই দুটি বিবৃতির মধ্যেকার পার্থক্যটি গুরুত্ব সহকারে বিচার করবেন।
সংক্ষেপে: N এবং Z এর ক্ষেত্রে সাজা প্রদানের সম্ভাবনা বেশি, কারণ তাদের নাম উভয় ঘোষণাতেই এসেছে। Y এর ক্ষেত্রে, প্রথম ঘোষণায় নাম না থাকার কারণে তার সাজা প্রদানের জন্য অতিরিক্ত প্রমাণের প্রয়োজন হবে, যতক্ষণ না এই অসামঞ্জস্যতাটি সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। মৃত্যুকালীন ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হলেও, এর উপর ভিত্তি করে রায় প্রদানের আগে আদালতের কাছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা, ধারাবাহিকতা এবং অন্যান্য প্রমাণের সাথে এর সামঞ্জস্যতা যাচাই করা অপরিহার্য।
ইউটিউব ভিডিও- আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩