- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ৫ এর ক ও খ
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ৫ এর ক ও খ
৫। ক) অব্যাহতি ও খালাসের মধ্যে পার্থক্য কী? অভিযোগ গঠনকালে আসামীপক্ষের কাগজপত্র দেখে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি?
৫। খ) ১৫/০২/২০২৩ তারিখ সকাল ১০.০০ টায় X তার বন্ধু P, Q R এর সাথে স্থানীয় বাজারে যাওয়ার পথে সদর থানাধীন রাজাপুর নামক স্থানে Y ও Z তাদেরকে আটক করে ৩০,০০০ টাকা চাদা দাবী করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। হঠাৎ N, Y Z, X কে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে থাকেন। M রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে ফুটন্ত পানি এনে X এর শরীরে ঢেলে দেন। X মারাত্মক আহত হন। এই ঘটনায় The Penal Code, 1860 অনুসারে প্রত্যেক আসামীর ফৌজদারী দায় নিরূপণপূর্বক একটি নালিশ প্রস্তুত করুন।
৫। ক) প্রশ্নের উপর আলোচনা
অব্যাহতি ও খালাসের মধ্যে পার্থক্য এবং অভিযোগ গঠনকালে অব্যাহতি (ধারা সহ)
অব্যাহতি (Discharge) এবং খালাস (Acquittal) এর পার্থক্য:
অব্যাহতি (Discharge):
পর্যায়: সাধারণত মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে, অর্থাৎ অভিযোগ গঠনের (framing of charge) পূর্বে ঘটে।
কারণ: আদালত যখন মনে করেন যে আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত কারণ (sufficient ground) নেই বা অভিযোগটি ভিত্তিহীন, তখন আসামীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আইনগত ভিত্তি: ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১ক ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং দায়রা আদালত ২৬৫গ ধারা অনুসারে, অভিযোগ গঠনের আগে যদি আদালত মনে করেন, আসামীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চালানোর জন্য পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে আসামীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।
প্রভাব: এটি চূড়ান্ত বিচার নয়। অব্যাহতির পর যদি নতুন ও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে একই অভিযোগে আসামীর বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা করা সম্ভব হতে পারে।
খালাস (Acquittal):
পর্যায়: মামলার চূড়ান্ত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ঘটে।
কারণ: সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আদালত যখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বা আসামী নির্দোষ, তখন তাকে খালাস দেওয়া হয়।
আইনগত ভিত্তি: ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫জ 265 H ধারায় দায়রা আদালত (Sessions Case) এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২৪৫ ধারা (Warrant Case) অনুসারে, যদি আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ ও পরীক্ষা করার পর বা উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেনি, তবে তাকে খালাস প্রদান করবেন। সিআর মামলায় ২৪৭ ধারায় নালিশকারীর অনুপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিকে খালাস দিতে পারে।
সিআর মামলায় ২৪৮ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিকে খালাস দিতে পারে যদি মামলার চূড়ান্ত আদেশ হবার পূর্বে আদালতের অনুমতি নিয়ে নালিশকারী নালিশ প্রত্যাহার করে নেয়। ২৬৫ ট ধারায় দায়রা আদালত যুক্তি তর্ক শুনানির পর আসামী যদি নির্দোষ হয় তবে আসামিকে খালাস দিতে পারে।
ধারা ৪৯৪ (ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮): যদি পাবলিক প্রসিকিউটর সরকারের অনুমতি নিয়ে মামলা প্রত্যাহার (Withdrawal from prosecution) করেন, তাহলে আদালত আসামিকে খালাস দিতে পারেন।
প্রভাব: এটি একটি চূড়ান্ত রায়। সাধারণত একই অভিযোগে আসামীকে পুনরায় বিচার করা যায় না (Double Jeopardy নীতি)।
অভিযোগ গঠনকালে আসামীপক্ষের কাগজপত্র দেখে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, অভিযোগ গঠনকালে আসামীপক্ষের কাগজপত্র (বা দাখিলকৃত নথি) দেখে অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব।
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১ক ধারা (ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) এবং ২৬৫গ ধারা (দায়রা আদালত) অনুসারে, অভিযোগ গঠনের আগে আদালত উভয় পক্ষের (রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামীপক্ষ) দাখিলকৃত কাগজপত্র ও তথ্যাদি (যেমন, এজাহার, চার্জশিট, জব্দ তালিকা, জবানবন্দি, আসামীপক্ষের দাখিলকৃত নথি ও বক্তব্য) পর্যালোচনা করবেন। যদি এই পর্যালোচনার পর আদালত মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভিত্তি নেই বা আনীত অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই, তাহলে আদালত অভিযোগ গঠনের আগেই আসামীকে অব্যাহতি দিতে পারেন। আসামীপক্ষ তাদের নির্দোষিতার স্বপক্ষে বিভিন্ন নথি বা তথ্য উপস্থাপন করতে পারে, যা আদালত বিবেচনা করে থাকেন।
খ) ১৫/০২/২০২৩ তারিখের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারী দায় নিরূপণ এবং নালিশ প্রস্তুত
ফৌজদারী দায় নিরূপণ (The Penal Code, 1860 অনুসারে):
উল্লিখিত ঘটনায় প্রত্যেক আসামীর ফৌজদারী দায় নিম্নরূপ:
* Y ও Z:
* দফা: ৩৮৫, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (চাঁদা আদায়ের চেষ্টা): Y ও Z, X ও তার বন্ধুদের কাছ থেকে ৩০,০০০ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এটি জবরদস্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা।
* দফা: ৫০৬, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (অপরাধজনক ভীতিপ্রদর্শন): Y ও Z, X ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন, যা একটি অপরাধজনক ভীতিপ্রদর্শন।
* N:
* দফা: ৩২৩, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (স্বেচ্ছামূলকভাবে আঘাত): N, X কে এলোপাতাড়ি ঘুষি মেরেছেন, যার ফলে X আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ আঘাত (simple hurt) ঘটানোর অপরাধ।
* M:
* দফা: ৩২৬, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায়ে স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাত ঘটানো): M, ফুটন্ত পানি এনে X এর শরীরে ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে X মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ফুটন্ত পানি একটি 'বিপজ্জনক অস্ত্র বা মাধ্যম' হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর দ্বারা সৃষ্ট আঘাত গুরুতর শারীরিক ক্ষতি (grievous hurt) ঘটিয়েছে।
নালিশ (Complaint) প্রস্তুত:
মাননীয় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা।
ফৌজদারি নালিশ মামলা নং: ____ /২০২৩
(তারিখ: ০৮/০৭/২০২৫)
নালিশকারী:
মোঃ X, পিতা: [পিতার নাম], মাতা: [মাতার নাম], গ্রাম: [গ্রামের নাম], ডাকঘর: [ডাকঘরের নাম], থানা: সদর, জেলা: ঢাকা।
(যোগাযোগের ঠিকানা: [ফোন নম্বর/ইমেল - যদি থাকে])
বিবাদীগণ:
১। Y, পিতা: [পিতার নাম], গ্রাম: [গ্রামের নাম], থানা: সদর, জেলা: ঢাকা।
২। Z, পিতা: [পিতার নাম], গ্রাম: [গ্রামের নাম], থানা: সদর, জেলা: ঢাকা।
৩। N, পিতা: [পিতার নাম], গ্রাম: [গ্রামের নাম], থানা: সদর, জেলা: ঢাকা।
৪। M, পিতা: [পিতার নাম], গ্রাম: [গ্রামের নাম], থানা: সদর, জেলা: ঢাকা।
(সকল বিবাদীর বর্তমান/পূর্ণ ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক)
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
১। এই যে, গত ১৫/০২/২০২৩ তারিখ সকাল ১০:০০ ঘটিকার সময় নালিশকারী মোঃ X তার বন্ধু P, Q এবং R এর সাথে স্থানীয় বাজারে যাওয়ার পথে সদর থানাধীন রাজাপুর নামক স্থানে পৌঁছালে বিবাদীগণ Y ও Z অন্যায়ভাবে নালিশকারী ও তার বন্ধুদের পথরোধ করে এবং তাদের নিকট ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা চাঁদা দাবি করে।
২। এই যে, যখন নালিশকারী ও তার বন্ধুরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন বিবাদীগণ Y ও Z নালিশকারী ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
৩। এই যে, এরই এক পর্যায়ে বিবাদী N আকস্মিকভাবে নালিশকারী মোঃ X কে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করে।
৪। এই যে, একই সময় বিবাদী M রাস্তার পাশের একটি চায়ের দোকান থেকে ফুটন্ত গরম পানি এনে নালিশকারী মোঃ X এর শরীরে ঢেলে দেয়, যার ফলস্বরূপ নালিশকারী মোঃ X মারাত্মকভাবে আহত হন এবং বর্তমানে [হাসপাতালের নাম, যদি থাকে] চিকিৎসাধীন আছেন।
৫। এই যে, উল্লেখিত ঘটনার সময় সাক্ষী P, Q, R এবং অন্যান্য স্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সম্পূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।
৬। এই যে, বিবাদীগণ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধসমূহ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৮৫ (চাঁদা আদায়ের চেষ্টা), ৫০৬ (অপরাধজনক ভীতিপ্রদর্শন), ৩২৩ (স্বেচ্ছামূলকভাবে আঘাত) এবং ৩২৬ (বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায়ে স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাত ঘটানো) এর আওতাভুক্ত একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
প্রার্থনা:
অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, উপরোক্ত বিবরণ বিবেচনাপূর্বক বিবাদীগণের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৮৫, ৫০৬, ৩২৩ এবং ৩২৬ অনুযায়ী অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সদয় নির্দেশ প্রদান করতে মর্জি হয়।
তারিখ: ০৮/০৭/২০২৫
স্থান: ঢাকা
(নালিশকারী/অভিযোগকারীর স্বাক্ষর)
(নাম: মোঃ X)
সত্যপাঠ:
আমি, মোঃ X, পিতা: [পিতার নাম], অত্র নালিশকারী এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, এই নালিশে বর্ণিত সকল তথ্য আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে সত্য ও সঠিক।
(নালিশকারী/অভিযোগকারীর স্বাক্ষর)
(নাম: মোঃ X)