- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ২৩
দেওয়ানী কার্যবিধি (Civil Procedure Code):
মামলার রায় (decree) কি? রায় কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
আরজি (plaint) কি? আরজি খারিজ হওয়ার কারণগুলো কি কি?
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (permanent injunction) জন্য প্রতিকার চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করার পদ্ধতি আলোচনা করুন।
মামলার রায় (Decree)
![]() |
রায় (decree) হলো এমন একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যা মামলার সকল বা কোনো একটি বিতর্কিত বিষয় সম্পর্কে পক্ষগণের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে |
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, 1908) এর ২(২) ধারা অনুযায়ী, রায় (decree) হলো এমন একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যা মামলার সকল বা কোনো একটি বিতর্কিত বিষয় সম্পর্কে পক্ষগণের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে। এটি মূলত আদালতের রায়ের আনুষ্ঠানিক রূপ। একটি রায় কোনো মোকদ্দমার চূড়ান্ত মীমাংসা প্রদান করে, এবং এর বিপরীতে আপিল করা যায়।
রায়ের প্রকারভেদ
দেওয়ানী কার্যবিধি অনুযায়ী, রায় প্রধানত তিন প্রকার:
প্রাথমিক রায় (Preliminary Decree): যখন একটি মোকদ্দমার কিছু বিষয় চূড়ান্ত হলেও, বাকি বিষয়গুলো সমাধানের জন্য আরও কার্যধারা বা প্রক্রিয়া বাকি থাকে, তখন আদালত প্রাথমিক রায় প্রদান করে। এটি মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পথ তৈরি করে।
উদাহরণ: একটি বাটোয়ারা মোকদ্দমায়, আদালত প্রথমে পক্ষগণের মধ্যে কে কতটা অংশের অধিকারী তা ঘোষণা করে। এই প্রথম ঘোষণাটি হলো প্রাথমিক রায়।
চূড়ান্ত রায় (Final Decree): যখন একটি মোকদ্দমার সকল বিষয় সম্পূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং আদালতের আর কোনো কার্যধারা বাকি থাকে না, তখন আদালত চূড়ান্ত রায় প্রদান করে। এটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করে।
উদাহরণ: একটি বাটোয়ারা মোকদ্দমায়, যখন সম্পত্তিটি চূড়ান্তভাবে বন্টন করা হয় এবং আদালত তা অনুমোদন করে, তখন যে রায় প্রদান করা হয়, তা হলো চূড়ান্ত রায়।
আংশিক প্রাথমিক ও আংশিক চূড়ান্ত রায় (Partly Preliminary and Partly Final Decree): কিছু কিছু ক্ষেত্রে, একটি রায়ের কিছু অংশ প্রাথমিক এবং কিছু অংশ চূড়ান্ত হতে পারে।
উদাহরণ: একটি অর্থ ও সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মোকদ্দমায়, আদালত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি চূড়ান্ত রায় দিতে পারে, কিন্তু সম্পত্তির দখল সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য প্রাথমিক রায় প্রদান করতে পারে, যা পরবর্তীতে চূড়ান্ত করা হবে।
আরজি (Plaint)
আরজি (plaint) হলো দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৭ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি লিখিত আবেদন, যা বাদী কর্তৃক আদালতে দাখিল করা হয়। এটি একটি দেওয়ানী মামলা শুরু করার প্রাথমিক ও অপরিহার্য ধাপ। এতে বাদীর দাবির বিস্তারিত বিবরণ, মামলার কারণ, এবং প্রার্থিত প্রতিকার উল্লেখ থাকে।
আরজি খারিজ হওয়ার কারণ
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৭, বিধি ১১ অনুযায়ী একটি আরজি কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণে আদালত কর্তৃক খারিজ হতে পারে। প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:
মামলার কারণ না থাকা: যদি আরজি থেকে দেখা যায় যে, বাদীর কোনো আইনি কারণ বা ভিত্তি নেই মামলা করার জন্য।
আন্ডার-ভ্যালুয়েশন (Undervaluation): যদি দাবীকৃত প্রতিকারের মূল্য কম দেখানো হয় এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাদী তা সংশোধন না করে।
অপর্যাপ্ত স্ট্যাম্প পেপার: যদি আরজি অপর্যাপ্ত স্ট্যাম্প পেপার বা কোর্ট ফি দিয়ে দাখিল করা হয় এবং আদালত কর্তৃক নির্দেশিত সময়ের মধ্যে বাদী তা পূরণ না করে।
আইন দ্বারা বারিত মামলা: যদি মামলাটি কোনো বিদ্যমান আইন দ্বারা নিষিদ্ধ বা বারিত হয় (যেমন, তামাদি আইন দ্বারা)।
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (Permanent Injunction) জন্য মোকদ্দমা
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হলো সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (Specific Relief Act, 1877) এর ধারা ৫৪ ও ৫৫ অনুযায়ী আদালতের এমন একটি আদেশ, যা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করা থেকে স্থায়ীভাবে বিরত রাখে। এটি সাধারণত কোনো সম্পত্তির অধিকার রক্ষা বা কোনো আইনি অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়।
মোকদ্দমা দায়ের করার পদ্ধতি:
১. আরজি তৈরি (Drafting the Plaint): স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মোকদ্দমা শুরু করতে হলে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে একটি আরজি প্রস্তুত করতে হয়। এতে মামলার কারণ, প্রার্থিত প্রতিকার এবং আদালতের এখতিয়ার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
২. কোর্ট ফি প্রদান (Paying the Court Fees): সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এবং কোর্ট ফি আইন, ১৮৭০ অনুযায়ী নির্ধারিত কোর্ট ফি আরজির সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
৩. আরজি দাখিল (Filing the Plaint): প্রস্তুতকৃত আরজি এবং কোর্ট ফি সহ সংশ্লিষ্ট দেওয়ানী আদালতে দাখিল করতে হবে।
৪. সমন জারি (Issuing the Summons): আরজি দাখিল হওয়ার পর আদালত বিবাদীর ওপর সমন জারি করবে, যাতে সে নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য পেশ করতে পারে।
৫. শুনানি ও প্রমাণ (Hearing and Evidence): এরপর আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য, সাক্ষী ও প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে শুনানি শুরু করে।
৬. রায় ও ডিক্রি (Judgment and Decree): সব শেষে, আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি ও প্রমাণাদি বিবেচনা করে রায় প্রদান করে। যদি আদালত বাদীর পক্ষে রায় দেয়, তবে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি জারি করা হয়।