- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন ৭ নং ক ও খ
৭। ক) নিম্নলিখিত ৪টি বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লিখুন-
ক) দুষ্কর্মে সহায়তা;
ঘ) অনিষ্টসাধন;
খ) চোরাই মাল;
গ) মিথ্যা পরিচয় দানের মাধ্যমে প্রতারণা;
ঙ) মিথ্যা দলিল প্রণয়ন;
চ) রাষ্ট্রদ্রোহীতা।
প্রবলেমেটিক প্রশ্ন
৭। খ) নির্বাচনী প্রচারণায় গুজব ছড়ানোর দায়ে X কে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে A, B, C, D ও E একত্রে X এর বাড়ির সামনে লাঠি ও লোহার রডসহ জড়ো হয়। B, X এর বাড়ির মূল ফটক ভেঙ্গে ফেলে এবং ৫ জনই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন X বাড়িতে না থাকায় তার ছোট ভাই Y বের হয়ে এসে প্রতিবাদ করে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে A উত্তেজনাবশত, Y এর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে Y এর মৃত্যু হয়। বাকি চারজন এ ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। The Penal Code, 1860 এর সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে A, B, C, D ও E এর দায় আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত টিকার উত্তর
ক) দুষ্কর্মে সহায়তা (Abetment)
দুষ্কর্মে সহায়তা বলতে বোঝায় কোনো অপরাধ সংঘটনে সাহায্য করা, প্ররোচনা দেওয়া, বা ষড়যন্ত্র করা। এটি সরাসরি অপরাধ না হলেও, অপরাধ সংগঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাংলাদেশে, দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ১০৭ ধারায় দুষ্কর্মে সহায়তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, তিন উপায়ে সহায়তা করা যেতে পারে:
প্ররোচনা (Instigating): কাউকে কোনো কাজ করতে উত্তেজিত করা বা উসকানি দেওয়া।
ষড়যন্ত্র (Conspiracy): এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে মিলে কোনো অবৈধ কাজ করা বা বৈধ কাজ অবৈধ উপায়ে করার পরিকল্পনা করা।
ইচ্ছাকৃত সাহায্য (Intentionally aiding): কোনো কাজ করে বা না করে কোনো অপরাধ সংগঠনের সুবিধা করে দেওয়া।
দুষ্কর্মে সহায়তার জন্য শাস্তি দণ্ডবিধির ১০৯ থেকে ১১৪ ধারায় বর্ণিত হয়েছে, যা মূল অপরাধের শাস্তির মতোই হতে পারে অথবা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
খ) চোরাই মাল (Stolen Property)
চোরাই মাল হলো এমন সম্পত্তি যা চুরি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, বা প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জন করা হয়েছে, অথবা যা অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ৪১০ ধারায় চোরাই মালের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তি যদি উপরোক্ত কোনো অপরাধের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয় এবং যার কাছে আছে সে যদি জানে বা বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে এটি অবৈধভাবে অর্জিত, তবে তা চোরাই মাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
দণ্ডবিধির ৪১১ ধারায় চোরাই মাল জেনেও তা অসৎ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করার শাস্তির বিধান রয়েছে, যার জন্য কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান আছে।
গ) মিথ্যা পরিচয় দানের মাধ্যমে প্রতারণা (Cheating by Personation)
মিথ্যা পরিচয় দানের মাধ্যমে প্রতারণা হলো এমন এক ধরনের প্রতারণা যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে বা নিজেকে অন্য কেউ হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে। দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ৪১৬ ধারায় "ছদ্মবেশ ধারণ (Personation)" এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যক্তি নিজেকে অন্য একজন হিসেবে, বা কোনো কাল্পনিক ব্যক্তি হিসেবে, বা মৃত ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়, তখন সে ছদ্মবেশ ধারণ করে।
যখন এই ছদ্মবেশ ধারণের মাধ্যমে কাউকে প্রতারিত করা হয়, তখন তা দণ্ডবিধির ৪১৭ ও ৪১৯ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৪১৯ ধারায় মিথ্যা পরিচয় দানের মাধ্যমে প্রতারণার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে।
ঘ) অনিষ্টসাধন (Mischief)
অনিষ্টসাধন বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি করা, যার ফলে কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষতি বা লোকসানের শিকার হন। দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ৪২৫ ধারায় অনিষ্টসাধনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কাজ করে যার উদ্দেশ্য বা জ্ঞান থাকে যে এর ফলে জনতা বা কোনো ব্যক্তির অবৈধ ক্ষতি বা লোকসান হবে, এবং এই কাজের মাধ্যমে কোনো সম্পত্তির বিনাশ, বা তাতে এমন কোনো পরিবর্তন আনে যার ফলে তার মূল্য বা উপযোগিতা নষ্ট হয় বা প্রভাবিত হয়, তাহলে সে অনিষ্টসাধন করে।
অনিষ্টসাধনের শাস্তি দণ্ডবিধির ৪২৬ ধারায় বর্ণিত আছে, যার মেয়াদ কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে শাস্তির তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে।
ঙ) মিথ্যা দলিল প্রণয়ন (Forgery)
মিথ্যা দলিল প্রণয়ন বা জালিয়াতি হলো এমন একটি অপরাধ যেখানে কোনো ব্যক্তি মিথ্যা দলিল বা ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করে বা পরিবর্তন করে, অসৎ উদ্দেশ্যে বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, যাতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতি বা আঘাত করা যায়, অথবা কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন বা বাতিল করা যায়। দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ৪৬৩ ধারায় জালিয়াতির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
জালিয়াতির মূল উপাদানগুলো হলো:
* একটি মিথ্যা দলিল বা ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি বা পরিবর্তন করা।
* এটি অসৎ উদ্দেশ্যে বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে করা।
* এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতি করা, বা সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন বা বাতিল করা।
মিথ্যা দলিল প্রণয়নের শাস্তি দণ্ডবিধির ৪৬৫ থেকে ৪৭৭এ ধারায় বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির জন্য নির্ধারিত আছে, যা জালিয়াতির প্রকৃতি এবং এর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির উপর নির্ভর করে।
চ) রাষ্ট্রদ্রোহীতা (Sedition)
রাষ্ট্রদ্রোহীতা হলো এমন একটি অপরাধ যেখানে কোনো ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা অবজ্ঞা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, অথবা সরকারকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে, বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব প্রচার করে। দণ্ডবিধির (Penal Code), ১৮৬০ এর ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহীতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মৌখিকভাবে, লিখিতভাবে, সংকেতের মাধ্যমে, বা দৃশ্যমান প্রকাশে মাধ্যমে, অথবা অন্য কোনো উপায়ে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা, অবজ্ঞা, বা অসন্তোষ (disaffection) সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে।
এখানে "অসন্তোষ" এর মধ্যে সরকারের প্রতি আনুগত্যহীনতা এবং শত্রুতার সমস্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যার সাথে জরিমানা হতে পারে, অথবা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড যার সাথে জরিমানা হতে পারে, অথবা শুধুমাত্র জরিমানা।
প্রবলেমেটিক প্রশ্নের উত্তর
৭.খ) প্রদত্ত পরিস্থিতি অনুযায়ী A, B, C, D এবং E এর দায়ভার ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির (The Penal Code, 1860) সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে আলোচনা করা হলো:
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ:
* পাঁচজন ব্যক্তি (A, B, C, D, E) X-কে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে লাঠি ও লোহার রডসহ একত্রিত হয়েছে।
* B বাড়ির মূল ফটক ভেঙেছে।
* পাঁচজনই জোরপূর্বক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে।
* Y (X-এর ভাই) প্রতিবাদ করলে A লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে, যার ফলে Y-এর মৃত্যু হয়।
* বাকি চারজন (B, C, D, E) ঘটনা দেখে পালিয়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতে জড়িত সকলের দায়ভার নির্ণয় করার জন্য কয়েকটি প্রধান ফৌজদারি অপরাধের ধারা আলোচনা করা প্রয়োজন।
১. বেআইনী সমাবেশ (Unlawful Assembly)
প্রথমেই, এই পাঁচজনের একত্রিত হওয়া এবং তাদের কার্যকলাপ 'বেআইনী সমাবেশ' এর সংজ্ঞায় পড়ে।
* ধারা ১৪১ (বেআইনী সমাবেশ): এই ধারা অনুযায়ী, যদি পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে একত্রিত হয় এবং সেই উদ্দেশ্য ফৌজদারি বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের প্রদর্শনের মাধ্যমে কোনো অপরাধ করা হয়, তবে সেই সমাবেশকে 'বেআইনী সমাবেশ' বলা হয়।
* প্রয়োগ: এখানে A, B, C, D ও E মোট পাঁচজন ব্যক্তি একত্রিত হয়েছে। তাদের সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল X-কে ভয় দেখানো, যা 'অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন' (Criminal Intimidation) এর অন্তর্ভুক্ত। তারা লাঠি ও লোহার রড নিয়ে এসেছিল এবং ফটক ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করেছে, যা বলপ্রয়োগের সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
* দায়: অতএব, A, B, C, D ও E সকলেই ধারা ১৪১ এর অধীনে একটি বেআইনী সমাবেশের সদস্য।
* ধারা ১৪৩ (বেআইনী সমাবেশের জন্য শাস্তি): এই ধারায় বেআইনী সমাবেশের সদস্য হওয়ার জন্য শাস্তির বিধান আছে, যা ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
* দায়: A, B, C, D ও E সকলেই ধারা ১৪৩ অনুযায়ী দণ্ডিত হতে পারেন।
* ধারা ১৪৯ (বেআইনী সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য): এটি এই ঘটনার মূল দায়ভার নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা। এই ধারা অনুযায়ী, যদি বেআইনী সমাবেশের কোনো সদস্য সেই সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো অপরাধ করে, অথবা এমন কোনো অপরাধ করে যা সমাবেশের সদস্যরা জানত যে সেই উদ্দেশ্য সাধনের সময় সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে সমাবেশের প্রত্যেক সদস্য সেই অপরাধের জন্য দায়ী হবে।
* প্রয়োগ: A, B, C, D ও E এর সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল X-কে ভয় দেখানো। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা লাঠি ও লোহার রড নিয়ে একটি ব্যক্তিগত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতিতে, যেকোনো প্রতিবাদ বা সংঘাতের সময় গুরুতর আঘাত বা এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটাটা অস্বাভাবিক নয়, বরং যথেষ্ট সম্ভাব্য। যখন কেউ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারো বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে, তখন প্রতিরোধের মুখে সংঘাত এবং গুরুতর ফলাফলের ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের সচেতন থাকা উচিত।
* দায়: যদি আদালত নির্ধারণ করে যে Y-এর মৃত্যু তাদের সাধারণ উদ্দেশ্যেরই একটি সম্ভাব্য পরিণতি ছিল, বা সমাবেশের সদস্যরা জানত যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তবে A-এর পাশাপাশি B, C, D এবং E প্রত্যেকেই Y-এর মৃত্যুর জন্য ধারা ১৪৯ অনুযায়ী সমানভাবে দায়ী হতে পারেন, যদিও A সরাসরি আঘাতটি করেছিল। তাদের "হতবাক হয়ে পালিয়ে যাওয়া" এই দায়ভারকে হ্রাস করে না, বরং এটিকে তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপের একটি অংশ হিসাবে দেখা যেতে পারে।
২. গৃহে অনধিকার প্রবেশ বা গৃহ-ভঙ্গ (House-trespass / House-breaking)
জোরপূর্বক অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা একটি গুরুতর অপরাধ।
* ধারা ৪৪৫ (গৃহ-ভঙ্গ): এই ধারায় গৃহ-ভঙ্গের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যা নির্দিষ্ট কিছু উপায়ে (যেমন: দরজা ভেঙে প্রবেশ) সম্পন্ন করা হলে প্রযোজ্য হয়।
* প্রয়োগ: B মূল ফটক ভেঙে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে, যা স্পষ্টতই 'গৃহ-ভঙ্গ'।
* ধারা ৪৪৭ (ফৌজদারি অনধিকার প্রবেশের শাস্তি): এই ধারায় ফৌজদারি অনধিকার প্রবেশের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, যা তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
* দায়: যেহেতু তারা সকলেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন, A, B, C, D ও E সকলেই ধারা ১৪৯ এর অধীনে এই অপরাধের জন্য দায়ী হবেন।
* ধারা ৪৪৮ (গৃহ-অনধিকার প্রবেশের শাস্তি): যদি কেউ অপরাধ করার উদ্দেশ্যে কোনো বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে, তবে এই ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে।
* দায়: A, B, C, D ও E সকলেই X-কে ভয় দেখানোর (অপরাধ) উদ্দেশ্যে প্রবেশ করায় এই ধারায় দায়ী হতে পারেন।
* ধারা ৪৫৭ (চুরি বা অপরাধ করার উদ্দেশ্যে রাতের বেলায় গৃহ-ভঙ্গ বা গৃহ-অনধিকার প্রবেশ): যদি এই ঘটনা রাতের বেলায় ঘটে থাকে, তবে এই ধারার শাস্তি আরও গুরুতর হবে।
* দায়: যদি ঘটনাটি রাতে ঘটে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য এই ধারা প্রযোজ্য হবে।
৩. অনিষ্টসাধন (Mischief)
সম্পত্তির ক্ষতিসাধন একটি অপরাধ।
* ধারা ৪২৫ (অনিষ্টসাধন): এই ধারায় অনিষ্টসাধনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন বা এর মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা অন্তর্ভুক্ত।
* ধারা ৪২৬ (অনিষ্টসাধনের শাস্তি): অনিষ্টসাধনের জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
* ধারা ৪২৭ (৫০ টাকার বেশি মূল্যের ক্ষতির অনিষ্টসাধন): যদি ৫০ টাকার বেশি মূল্যের ক্ষতি হয়, তবে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
* প্রয়োগ: B দ্বারা মূল ফটক ভাঙা একটি 'অনিষ্টসাধন' এর কাজ।
* দায়: যেহেতু এটি বেআইনী সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্যের অংশ ছিল, A, B, C, D ও E সকলেই ধারা ১৪৯ এর অধীনে এই অনিষ্টসাধনের জন্যও দায়ী হতে পারেন, বিশেষ করে B সরাসরি দায়বদ্ধ।
৪. Y-এর মৃত্যু এবং A-এর দায়ভার (অপরাধজনক নরহত্যা/খুন)
Y-এর মৃত্যুর জন্য A সরাসরি দায়ী।
* ধারা ২৯৯ (অপরাধজনক নরহত্যা): এই ধারায় অপরাধজনক নরহত্যার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
* ধারা ৩০০ (নরহত্যা যখন খুন হয়): এই ধারায় কখন অপরাধজনক নরহত্যা খুন হিসেবে গণ্য হবে, তা বিস্তারিত বলা আছে। Y-এর মৃত্যুর ক্ষেত্রে A-এর কাজটি সম্ভবত খুনের সংজ্ঞায় পড়বে।
* প্রয়োগ: A লোহার রড দিয়ে Y-এর মাথায় আঘাত করেছে। মাথায় লোহার রডের আঘাত সাধারণত এমন একটি আঘাত যা স্বাভাবিক গতিপথে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। A-এর উদ্দেশ্য Y-কে গুরুতর শারীরিক আঘাত করা ছিল এবং সেই আঘাত Y-এর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। এটি ধারা ৩০০ এর ৩য় দফা অনুযায়ী 'খুন' হিসেবে বিবেচিত হতে পারে (যদি আঘাতটি স্বাভাবিক গতিপথে মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট হয়)।
* 'উত্তেজনাবশত' আঘাত করার বিষয়টি A-এর অপরাধকে 'অপরাধজনক নরহত্যা যা খুন নয়' (Culpable Homicide not amounting to Murder) এর দিকে নিতে পারে, যদি এটি ধারা ৩০০-এর কোনো ব্যতিক্রমের অধীনে আসে (যেমন: আকস্মিক ও গুরুতর প্ররোচনা বা আকস্মিক মারামারি)। তবে, একটি লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করা সাধারণত খুন হিসেবেই বিবেচিত হয়, কারণ এই ধরনের কাজের ফলাফল সম্পর্কে আঘাতকারী অবগত থাকে।
* ধারা ৩০২ (খুনের শাস্তি): যদি A খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানার শাস্তি পেতে হবে।
* ধারা ৩০৪ (অপরাধজনক নরহত্যার শাস্তি যা খুন নয়): যদি A-এর কাজটি খুন হিসেবে গণ্য না হয়ে শুধু অপরাধজনক নরহত্যা হয়, তবে এই ধারায় শাস্তি নির্ধারিত হবে।
সমন্বিত দায়ভার (উপসংহার):
* A এর দায়: Y-এর খুনের (ধারা ৩০২/৩০০) জন্য A সরাসরি এবং প্রধানত দায়ী। এছাড়াও, বেআইনী সমাবেশ (ধারা ১৪৩), গৃহ-ভঙ্গ/অনধিকার প্রবেশ (ধারা ৪৪৮/৪৫৭), এবং অনিষ্টসাধন (ধারা ৪২৭) এর জন্যও সে দায়ী।
* B, C, D ও E এর দায়: তাদের ক্ষেত্রে ধারা ১৪৯ এর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু Y-এর মৃত্যু বেআইনী সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের সময় ঘটেছে এবং এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যেখানে এই ধরনের ফলাফল সম্ভাব্য ছিল, তাই B, C, D ও E প্রত্যেকেই A এর দ্বারা সংঘটিত Y-এর খুনের জন্য ধারা ১৪৯ এর অধীনে যৌথভাবে দায়ী হতে পারে। এর পাশাপাশি, তারা বেআইনী সমাবেশ (ধারা ১৪৩), গৃহ-ভঙ্গ/অনধিকার প্রবেশ (ধারা ৪৪৮/৪৫৭), এবং অনিষ্টসাধন (ধারা ৪২৭) এর জন্যও দায়ী থাকবেন।
মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নির্ভর করবে সকল প্রমাণ এবং আদালতের ব্যাখ্যার উপর, বিশেষ করে ধারা ১৪৯ এর অধীনে 'সাধারণ উদ্দেশ্য' এবং 'সম্ভাব্যতার জ্ঞান' এর বিষয়টি আদালত কীভাবে ব্যাখ্যা করে।
ইউটিউব ভিডিও - বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন ৭ নং ক ও খ