- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রশ্নপত্রের সমাধান লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নম্বর ৪ এর ক ও খ
৪। ক) The Code of Criminal Procedure, 1898 এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিখ্যাত মামলার রায়ের উল্লেখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকারসমূহ আলোচনা করুন।
৪। খ) X, Y কে প্রহার করেন। এতে Y প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হন। Z, Y এর ক্রোধের সুযোগ নিয়ে Y কর্তৃক X কে হত্যার অভিপ্রায়ে Y এর হাতে একটি ছুরি তুলে দেন। Y ঐ ছুরির সাহায্যে ০৩/১১/২০২৩ তারিখ সকাল ৯.০০ টায় সদর থানাধীন রসুলপুর বাজারে X কে হত্যা করেন। এই ঘটনায় পুলিশ Y ওZ কে অভিযুক্ত করে The Penal Code, 1860 এর ১০৯, ৩৪, ৩২৩ ও ৩২৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করে। The Penal Code, 1860 অনুযায়ী Y Z এর ফৌজদারী দায় নিরূপণপূর্বক পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিলের নিমিত্ত একটি নারাজি দরখাস্ত প্রস্তুত করুন
৪। ক) গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকারসমূহ (The Code of Criminal Procedure, 1898 এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিখ্যাত মামলার রায়ের উল্লেখে)
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকার ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ, যা সংবিধান এবং ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারায় সুরক্ষিত। এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করে যে কোনো ব্যক্তিকে অযথা বা বেআইনিভাবে আটক করা যাবে না এবং আটককৃত ব্যক্তির সাথে মানবিক আচরণ করা হবে। নিচে প্রধান অধিকারগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. গ্রেফতারের কারণ জানার অধিকার: ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৬১ অনুযায়ী, পুলিশ অফিসার ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখতে পারবেন না, যদি না বিশেষ আদেশ থাকে। এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হয়। ধারা ৬২ অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে অবশ্যই তার গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে। এটি তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।
২. আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার অধিকার: বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩(১) অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক ব্যক্তির পছন্দসই আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার এবং তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থাকবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৪২ এই অধিকারকে সমর্থন করে।
৩. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার অধিকার: ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৬১ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সময় ব্যতীত) গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। এই বিধানটি বেআইনি আটক বা গুম প্রতিরোধ করে।
৪. শারীরিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শারীরিক পরীক্ষা করার অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে যদি সে দাবি করে যে তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। পাশাপাশি, আটক অবস্থায় তার স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে এই অধিকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেমন ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ মামলায়।
৫. জামিনের আবেদন করার অধিকার: জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ অনুযায়ী, পুলিশ বা আদালত জামিনযোগ্য অপরাধে আটক ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিতে বাধ্য। অ-জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করতে পারে।
৬. নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির উপর কোনো প্রকার শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন করা যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।
৪। খ) নারাজি দরখাস্ত প্রস্তুতি
ঘটনার বিবরণ:
X, Y কে প্রহার করেন। এতে Y প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হন। Z, Y এর ক্রোধের সুযোগ নিয়ে Y কর্তৃক X কে হত্যার অভিপ্রায়ে Y এর হাতে একটি ছুরি তুলে দেন। Y ঐ ছুরির সাহায্যে ০৩/১১/২০২৩ তারিখ সকাল ৯.০০ টায় সদর থানাধীন রসুলপুর বাজারে X কে হত্যা করেন। এই ঘটনায় পুলিশ Y ও Z কে অভিযুক্ত করে The Penal Code, 1860 এর ১০৯, ৩৪, ৩২৩ ও ৩২৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করে।
ফৌজদারি দায় নিরূপণ:
Y এর ফৌজদারি দায়:
পুলিশ কর্তৃক Y এর বিরুদ্ধে ১০৯ ধারা (প্ররোচনা), ৩৪ ধারা (সাধারণ অভিপ্রায়), ৩২৩ ধারা (স্বেচ্ছামূলকভাবে আঘাত), ও ৩২৬ ধারা (বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায়ে স্বেচ্ছামূলকভাবে গুরুতর আঘাত) প্রয়োগ করা হয়েছে, যা সঠিক নয়। Y সরাসরি X কে হত্যা করেছেন।
Y এর ক্ষেত্রে The Penal Code, 1860 এর ৩০২ ধারা (হত্যা) প্রযোজ্য হবে, কারণ Y সরাসরি পূর্বপরিকল্পিতভাবে X কে ছুরি দ্বারা হত্যা করেছেন।
Z এর ফৌজদারি দায়:
Z, Y এর ক্রোধের সুযোগ নিয়ে Y কে X কে হত্যার জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং তার হাতে ছুরি তুলে দিয়েছেন। Z এর উদ্দেশ্য ছিল Y কর্তৃক X কে হত্যা করানো।
Z এর ক্ষেত্রে The Penal Code, 1860 এর ১০৯ ধারা (হত্যার প্ররোচনা) প্রযোজ্য হবে।
পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে দাখিলের নিমিত্ত নারাজি দরখাস্ত:
বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,
নারায়ণগঞ্জ।
ফৌজদারি মামলা নং: [আপনার মামলার নম্বর লিখুন]
তারিখ: ০৮/০৭/২০২৫
বিষয়: পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দরখাস্ত পেশ প্রসঙ্গে।
১. রাষ্ট্র
বনাম
২. Y, পিতা: [Y এর পিতার নাম], সাং: [Y এর ঠিকানা], থানা: সদর, জেলা: নারায়ণগঞ্জ।
৩. Z, পিতা: [Z এর পিতার নাম], সাং: [Z এর ঠিকানা], থানা: সদর, জেলা: নারায়ণগঞ্জ।
বিষয়: পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দরখাস্ত পেশ প্রসঙ্গে।
সবিনয় নিবেদন এই যে, উপরোক্ত মামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি যথাযথভাবে প্রণীত হয়নি এবং এটি প্রকৃত ফৌজদারি দায়কে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না। নিম্নলিখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে এই নারাজি দরখাস্ত পেশ করা হচ্ছে:
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
গত ০৩/১১/২০২৩ তারিখ সকাল ৯.০০ ঘটিকায় সদর থানাধীন রসুলপুর বাজারে Y, Z কর্তৃক প্রদত্ত ছুরি ব্যবহার করে X কে হত্যা করেন। এর পূর্বে Y এবং X এর মধ্যে প্রহারের ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে Y ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। Z এই ক্রোধের সুযোগ গ্রহণ করে Y কে X কে হত্যার জন্য প্ররোচিত করেন এবং একটি ছুরি Y এর হাতে তুলে দেন।
নারাজি দরখাস্তের কারণসমূহ:
১. অভিযুক্ত Y এর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ১০৯, ৩৪, ৩২৩ ও ৩২৬ ধারার প্রয়োগের অসারতা:
পুলিশ কর্তৃক Y এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা (প্ররোচনা), ৩৪ ধারা (সাধারণ অভিপ্রায়), ৩২৩ ধারা (স্বেচ্ছামূলকভাবে আঘাত) এবং ৩২৬ ধারা (বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায়ে স্বেচ্ছামূলকভাবে গুরুতর আঘাত) প্রয়োগ করা হয়েছে। Y সরাসরি হত্যাকারী এবং তার কাজ ৩০২ ধারার আওতাভুক্ত। উপরোক্ত ধারাগুলো হত্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। Y এবং Z এর মধ্যে কোনো পূর্বনির্ধারিত 'সাধারণ অভিপ্রায়' ছিল না।
২. অভিযুক্ত Y এর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা প্রয়োগের আবশ্যকতা:
Y সরাসরি ছুরি ব্যবহার করে X কে হত্যা করেছেন। অতএব, Y এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) প্রয়োগ করা উচিত ছিল।
৩. অভিযুক্ত Z এর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা প্রয়োগের সঠিকতা:
Z, Y এর ক্রোধের সুযোগ নিয়ে Y কে X কে হত্যার জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং একটি ছুরি Y এর হাতে তুলে দিয়েছেন। Z এর এই কর্ম স্পষ্টতই দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা (অপরাধে প্ররোচনা) এর আওতায় পড়ে। পুলিশ কর্তৃক Z এর বিরুদ্ধে ১০৯ ধারা প্রয়োগ সঠিক হয়েছে।
অতএব, মহোদয়ের নিকট প্রার্থনা, উপরোক্ত কারণসমূহ বিবেচনায় নিয়ে, পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি বাতিলক্রমে অভিযুক্ত Y এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা এবং অভিযুক্ত Z এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করতে মর্জি হয়।
বিনীত নিবেদক,
[দরখাস্তকারীর নাম/আইনজীবীর নাম]
[ঠিকানা]
[স্বাক্ষর]
[তারিখ: ০৮/০৭/২০২৫]