- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান ২৮ জুন ২০২৫ প্রশ্ন নং ৫ ক ও খ
৫. ক) The Code of Criminal Procedure, 1898 এর অধীনে কোন কোন দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলে না? বর্ণনা করুন ।
৫. খ) Y এর আয়কর পরিশোধের জন্য আয়কর আইনজীবী X টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে X উক্ত টাকা আত্মসাৎ করে। Y দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারার অধীনে একটি নালিশী দরখাস্ত দায়ের করেন। The Code of Criminal Procedure, 1898 এর 241A ধারার অধীনে শুনানীকালে অভিযুক্ত X নালিশকারীর আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে একটি অডিট রিপোর্ট দাখিল করে। এই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত X কে অব্যাহতি প্রদান করে। নালিশকারীর পক্ষে একটি রিভিশন দরখাস্ত প্রস্তুত করুন।
৪.ক) The Code of Criminal Procedure, 1898 এর অধীনে কোন কোন দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলে না? বর্ণনা করুন।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) কিছু নির্দিষ্ট দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অধিকার সীমিত করেছে বা বাতিল করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো তুচ্ছ মামলা এবং যেসকল ক্ষেত্রে আপিলের প্রয়োজন নেই বলে আইন মনে করে, সেগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা। নিম্নোক্ত দণ্ডাদেশগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণত আপিল চলে না:
১. দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে দণ্ডাদেশ (Conviction on plea of guilty) (ধারা ৪১২): যখন কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের সামনে স্বেচ্ছায় তার অপরাধ স্বীকার করে এবং আদালত সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে দণ্ড প্রদান করে, তখন সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সাধারণত আপিল চলে না। এর কারণ হলো, অভিযুক্ত নিজেই অপরাধ স্বীকার করেছেন, তাই আপিলের মাধ্যমে বিচারিক ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ থাকে না। তবে, দণ্ডাদেশের বৈধতা বা পরিমাণের (legality or extent of the sentence) বিরুদ্ধে আপিল করা যেতে পারে, অর্থাৎ, আদালত যে দণ্ড দিয়েছে তা আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা বা দণ্ডের পরিমাণ অতিরিক্ত কিনা, সেই বিষয়ে আপিল করা যেতে পারে।
২. তুচ্ছ মামলার ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশ (Conviction in petty cases) (ধারা ৪১৩): ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৩ ধারা অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের তুচ্ছ মামলার ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। এই ধারাটি দণ্ডাদেশের প্রকৃতি এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে আপিল চলে না:
* হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা জজ কর্তৃক প্রদত্ত ৬ মাসের কম মেয়াদের কারাদণ্ড বা ২০০ টাকার কম অর্থদণ্ড।
* মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত ২ মাসের কম মেয়াদের কারাদণ্ড বা ৫০ টাকার কম অর্থদণ্ড।
* প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত ১ মাসের কম মেয়াদের কারাদণ্ড বা ৫০ টাকার কম অর্থদণ্ড।
* আপিল করা যেত এমন মামলার অংশ হিসেবে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ ব্যতীত অন্য কোনো জরিমানা বা দণ্ডাদেশ, যা শুধুমাত্র জরিমানা আকারে ছিল।
এই বিধানের মূল উদ্দেশ্য হলো ছোটখাটো অপরাধের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং আদালতের সময় বাঁচানো।
৩. সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশ (Conviction in summary trials) (ধারা ৪১৪): যখন কোনো অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে (summary trial) অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই বিচারে অভিযুক্তকে দণ্ড প্রদান করা হয়, তখন সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সাধারণত আপিল চলে না, যদি না দণ্ডাদেশের পরিমাণ তুচ্ছ মামলার আপিলহীন সীমার বাইরে হয়। সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে সাধারণত দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। তাই এর বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও সীমিত করা হয়েছে।
সংক্ষেপে: এই ধারাগুলো মূলত তুচ্ছ প্রকৃতির অপরাধ বা যেখানে অভিযুক্ত নিজেই অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে, সেসকল ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য প্রণীত হয়েছে। তবে, আপিল না চললেও, এই ধরনের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫, ৪৩৯ এবং ৪৩৯এ ধারার অধীনে রিভিশন (Revision) দায়েরের সুযোগ থাকে। রিভিশনের মাধ্যমে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের কার্যধারার বৈধতা, আইনগত ত্রুটি বা এখতিয়ারের অপব্যবহার পর্যালোচনা করতে পারে।
৪.খ) নালিশকারীর পক্ষে একটি রিভিশন দরখাস্ত প্রস্তুত করুন।
নালিশকারীর পক্ষে রিভিশন দরখাস্ত
বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালত, [জেলা]
ফৌজদারি রিভিশন মামলা নং: [তারিখ অনুযায়ী রিভিশন মামলার নং] / ২০২৪
(মূল মামলা নং: সি.আর. নং [নালিশী মামলার নং] / [সাল], বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, [জেলা])
পক্ষসমূহ:
১. Y, পিতা: [Y এর পিতার নাম], মাতা: [Y এর মাতার নাম], সাং: [Y এর ঠিকানা], থানা: [Y এর থানা], জেলা: [Y এর জেলা]
(… দরখাস্তকারী/নালিশকারী)
- বনাম -
১. X, পিতা: [X এর পিতার নাম], মাতা: [X এর মাতার নাম], সাং: [X এর ঠিকানা], থানা: [X এর থানা], জেলা: [X এর জেলা]
(… অভিযুক্ত/প্রতিপক্ষ)
প্রসঙ্গ: ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৩৯এ ও ৪৩৮ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪০৬/৪২০ অনুযায়ী আনীত নালিশী মামলায় বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত অব্যাহতির আদেশ বাতিলক্রমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন।
দরখাস্তকারী পক্ষে সবিনয় নিবেদন এই যে, -
১. দরখাস্তকারী/নালিশকারী অত্র মামলার একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। অভিযুক্ত ব্যক্তি দরখাস্তকারীর আয়কর পরিশোধের জন্য টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করায় এই নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
২. দরখাস্তকারী গত [তারিখ] তারিখে বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, [জেলা]-এ প্রতিপক্ষ X এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারার অধীনে একটি নালিশী দরখাস্ত (সি.আর. নং [নালিশী মামলার নং] / [সাল]) দায়ের করেন। দরখাস্তে উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিপক্ষ X, দরখাস্তকারীর আয়কর পরিশোধের জন্য [টাকার পরিমাণ] টাকা গ্রহণ করেন কিন্তু পরবর্তীতে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন এবং আয়কর পরিশোধ করেননি।
৩. বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত নালিশী দরখাস্তের উপর ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ২০০ অনুযায়ী দরখাস্তকারীর জবানবন্দী গ্রহণ করেন এবং ধারা ২০২ অনুযায়ী তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নেন এবং অভিযুক্ত X এর বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেন।
৪. অভিযুক্ত X আদালতে হাজির হওয়ার পর, বিজ্ঞ আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ২৪১এ এর অধীনে মামলার শুনানী গ্রহণ করেন। শুনানীকালে অভিযুক্ত X তার আইনজীবীর মাধ্যমে একটি 'অডিট রিপোর্ট' দাখিল করেন, যেখানে দাবি করা হয় যে, নালিশকারীর আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে।
৫. বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট শুধুমাত্র অভিযুক্ত কর্তৃক দাখিলকৃত অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে, কোনো প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ না করেই, নালিশী মামলা থেকে অভিযুক্ত X কে গত [অব্যাহতি প্রদানের তারিখ] তারিখে অব্যাহতি প্রদান করেন।
৬. বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত অব্যাহতির আদেশটি সম্পূর্ণরূপে আইনসিদ্ধ নয় এবং নিম্নোক্ত কারণে বাতিলযোগ্য:
ক) বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট শুধুমাত্র অভিযুক্তের দাখিলকৃত একটি অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অব্যাহতি প্রদান করেছেন, যা নালিশকারীর অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। নালিশকারীকে তার অভিযোগ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
খ) নালিশকারীর মূল অভিযোগ ছিল যে, অভিযুক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং আয়কর পরিশোধ করেনি। যদিও অভিযুক্ত একটি অডিট রিপোর্ট দাখিল করেছে, সেই রিপোর্টটি কতটুকু নির্ভরযোগ্য বা তা আসলেই নালিশকারীর আয়কর পরিশোধ নিশ্চিত করে কিনা, সে বিষয়ে কোনো পক্ষকে সাক্ষ্য প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। একটি অডিট রিপোর্ট কেবলমাত্র একটি দলিল, যা উপযুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন।
গ) বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের এই পদক্ষেপটি "ন্যায্য বিচারের নীতি" (Principles of Natural Justice) লঙ্ঘন করেছে। নালিশকারীর অভিযোগের বিপরীতে অভিযুক্তের বক্তব্য বা প্রমাণ গ্রহণ করা হলেও, সেই প্রমাণের সত্যতা যাচাই এবং নালিশকারীর পাল্টা যুক্তি বা প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ না দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা উচিত হয়নি।
ঘ) বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ২৫৩ বা ২৬৫সি ধারার অধীনে আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারতেন, কিন্তু ২৪১এ ধারার অধীনে শুধুমাত্র প্রাথমিক শুনানিতে অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে অব্যাহতি প্রদান করা বিচারিক ত্রুটি। ২৪১এ ধারায়, অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মনে না হলে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা উচিত ছিল এবং তারপর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত ছিল।
ঙ) যে অডিট রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে, তার সত্যায়নকারী বা এর উৎস সম্পর্কে কোনো অনুসন্ধান বা সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। এটি কেবল একটি কাগজের টুকরা হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে, যদি না তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হয়।
৭. বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত অব্যাহতির আদেশটি বহাল থাকলে দরখাস্তকারী গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।
৮. এই রিভিশন দায়েরের জন্য অন্য কোনো কার্যকর প্রতিকার নেই।
অতএব, উপরোক্ত বর্ণিত পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে, অত্র বিজ্ঞ আদালতের নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গত [অব্যাহতি প্রদানের তারিখ] তারিখে প্রদত্ত অব্যাহতির আদেশটি বাতিলপূর্বক অভিযুক্ত X এর বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে মর্জি হয়।
এবং আপনার এই অনুগ্রহের জন্য দরখাস্তকারী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
তারিখ: [আজকের তারিখ]
[স্থান: ]
[নালিশকারীর স্বাক্ষর]
(Y)
[নালিশকারীর মোবাইল নম্বর]
দরখাস্তকারীর পক্ষে:
[আইনজীবীর স্বাক্ষর]
(আইনজীবীর নাম)
[আইনজীবীর বার অ্যাসোসিয়েশন রোল নং]
[আইনজীবীর চেম্বারের ঠিকানা]
ইউটিউব ভিডিও - বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান ২৮ জুন ২০২৫ প্রশ্ন ৫ ক ও খ