- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ প্রশ্ন ১১
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ১১ এর ক ও খ
১১। ক) The Court has no jurisdiction to extend time where the petitioner has been negligent and inactive." The Limitation Act, 1908 এর 'তামাদির সময় বৃদ্ধি' সংক্রান্ত বিধান উল্লেখে বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
১১। খ) X ২০/০২/২০২০ তারিখ খাস দখলের মোকদ্দমায় ডিক্রি পান। Y ঐ ডিক্রি রদ-রহিতের জন্য পৃথক মোকদ্দমা করলে আদালত ২৫/০১/২০২৩ তারিখ ডিক্রির কার্যকারীতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। X ২২ / ১১ / ২০২৩ তারিখ উক্ত ডিক্রি জারির জন্য দরখাস্ত দাখিল করতে চান। তামাদি সংশ্লিষ্ট বিধান উল্লেখে X কে পরামর্শ দিন।
১১। ক) "The Court has no jurisdiction to extend time where the petitioner has been negligent and inactive." The Limitation Act, 1908 এর 'তামাদির সময় বৃদ্ধি' সংক্রান্ত বিধান উল্লেখে বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
এই উক্তিটি তামাদি আইনের একটি মৌলিক নীতিকে তুলে ধরে। যদিও তামাদি আইন নির্দিষ্ট সময়সীমার পর কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত গ্রহণের অনুমতি দেয় না, তবে এর ধারা ৫ (Section 5) কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষমতা আদালতকে প্রদান করেছে।
তামাদি আইনের ধারা ৫:
ধারা ৫ অনুযায়ী, আপিলের ক্ষেত্রে এবং কতিপয় দরখাস্তের ক্ষেত্রে (যা ধারা ৪৮, সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮ এর অধীন ডিক্রি জারির আবেদন নয়) আদালত নির্ধারিত সময়সীমার পরেও আবেদন গ্রহণ করতে পারে, যদি আপিলকারী বা দরখাস্তকারী আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে, সময়মতো আপিল বা দরখাস্ত দাখিল করতে না পারার 'যথেষ্ট কারণ' (Sufficient Cause) ছিল।
বক্তব্যের ব্যাখ্যা:
"The Court has no jurisdiction to extend time where the petitioner has been negligent and inactive." – এই বক্তব্যটি এই সত্যকে নির্দেশ করে যে, ধারা ৫ এর অধীনে সময় বৃদ্ধির ক্ষমতা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary Power), কোনো পরম অধিকার নয়।
যথেষ্ট কারণের অনুপস্থিতি: আদালত তখনই সময় বৃদ্ধি করে যখন আবেদনকারী প্রমাণ করতে পারেন যে তার বিলম্বের পেছনে যুক্তিসঙ্গত এবং অনিবার্য কারণ ছিল, যা তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। উদাহরণস্বরূপ, গুরুতর অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আদালতের কার্যক্রমে ভুল বোঝাবুঝি, বা আইনজীবীর ভুলের কারণে সৃষ্ট বিলম্ব।
অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তা (Negligence and Inactivity): যদি দেখা যায় যে আবেদনকারী তার নিজের অবহেলা, অলসতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে সময়মতো আবেদন দাখিল করেননি, তাহলে আদালত সাধারণত সময় বৃদ্ধি করেন না। আইন অলস বা অসতর্ক ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করে না। একজন ব্যক্তি যদি তার অধিকার সম্পর্কে সজাগ না থাকেন এবং স্বেচ্ছায় বিলম্ব করেন, তবে আদালত তাকে তামাদির সুবিধার বাইরে বিবেচনা করবে।
আদালতের এখতিয়ার (Jurisdiction): এখানে 'jurisdiction' বলতে আদালতের ক্ষমতা বা এখতিয়ারকে বোঝানো হয়েছে। আদালত স্বেচ্ছায় বা বিনা কারণে সময় বৃদ্ধি করতে পারে না। সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদনকারীর পক্ষ থেকে 'যথেষ্ট কারণ' প্রমাণ করা আবশ্যিক। যদি যথেষ্ট কারণ না থাকে এবং কেবল অবহেলাই বিলম্বের কারণ হয়, তবে আদালত আইনিভাবে সময় বৃদ্ধির এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে না, কারণ ধারা ৫ এর শর্ত পূরণ হয় না।
অতএব, তামাদি আইনের ধারা ৫ একটি সুরক্ষা কবচ, যা কেবল সৎ এবং যুক্তিসঙ্গত কারণে বিলম্বকারীকে সুরক্ষা দেয়, কিন্তু যারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসতর্ক এবং অবহেলাপূর্ণ, তাদের জন্য এটি কোনো ঢাল নয়।
১১। খ) X ২০/০২/২০২০ তারিখ খাস দখলের মোকদ্দমায় ডিক্রি পান। Y ঐ ডিক্রি রদ-রহিতের জন্য পৃথক মোকদ্দমা করলে আদালত ২৫/০১/২০২৩ তারিখ ডিক্রির কার্যকারীতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। X ২২ / ১১ / ২০২৩ তারিখ উক্ত ডিক্রি জারির জন্য দরখাস্ত দাখিল করতে চান। তামাদি সংশ্লিষ্ট বিধান উল্লেখে X কে পরামর্শ দিন।
এটি ডিক্রি জারির (Execution of Decree) ক্ষেত্রে তামাদি আইনের প্রয়োগ সম্পর্কিত একটি বাস্তব সমস্যা।
তামাদি সংক্রান্ত বিধান ও X এর জন্য পরামর্শ:
ডিক্রি জারির জন্য দরখাস্ত দাখিলের সময়সীমা তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৮২ (Article 182) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ডিক্রি জারির জন্য সাধারণত ৩ বছর সময় নির্ধারিত। এই সময়কাল গণনা শুরু হয় যখন ডিক্রিটি কার্যকরযোগ্য হয়।
এছাড়া, তামাদি আইনের ধারা ১৫ (Section 15) এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তামাদি আইনের ধারা ১৫ (১):
ধারা ১৫ (১) অনুযায়ী, "কোনো মামলা বা ডিক্রি জারির আবেদন দাখিলের সময় গণনার ক্ষেত্রে, যে সময়ের জন্য মামলা বা জারির কাজ কোনো নিষেধাজ্ঞা (injunction) বা স্থগিতাদেশ (stay order) দ্বারা স্থগিত ছিল, সেই সময়কাল বাদ যাবে।"
ঘটনার বিশ্লেষণ ও গণনা:
১. ডিক্রির তারিখ: ২০/০২/২০২০। সাধারণত, ডিক্রি কার্যকরযোগ্য হওয়ার তারিখ থেকেই তামাদির ৩ বছর গণনা শুরু হয়। তাই, যদি কোনো স্থগিতাদেশ না থাকত, তাহলে ডিক্রি জারির জন্য তামাদির মেয়াদ ২০/০২/২০২৩ তারিখে শেষ হয়ে যেত।
২. ডিক্রির কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশ: ২৫/০১/২০২৩ তারিখে আদালত ডিক্রির কার্যকারিতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন।
৩. স্থগিতাদেশের মেয়াদ: ২৫/০১/২০২৩ থেকে শুরু হয়ে ৬ মাস পর্যন্ত।
* জানুয়ারি: ৬ দিন (২৫ থেকে ৩১)
* ফেব্রুয়ারি: ২৯ দিন (২০২৪ সালের লিপ ইয়ার ধরে)
* মার্চ: ৩১ দিন
* এপ্রিল: ৩০ দিন
* মে: ৩১ দিন
* জুন: ৩০ দিন
* জুলাই: ২৫ দিন (২৫/০৭/২০২৩ তারিখে ৬ মাস পূর্ণ হয়)
* মোট স্থগিতাদেশের সময়কাল = ৬ মাস।
৪. তামাদি গণনা:
* ডিক্রি কার্যকরযোগ্য হয় ২০/০২/২০২০ তারিখে।
* ২৫/০১/২০২৩ তারিখে স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়। এই তারিখ পর্যন্ত অতিবাহিত সময়: ২ বছর, ১১ মাস, ৫ দিন।
* তামাদি আইনের ধারা ১৫(১) অনুযায়ী, এই ৬ মাসের স্থগিতাদেশের সময়কাল (২৫/০১/২০২৩ থেকে ২৫/০৭/২০২৩ পর্যন্ত) তামাদির মেয়াদ গণনা থেকে বাদ যাবে।
* সুতরাং, ডিক্রি জারির ৩ বছরের মেয়াদ (যা ২০/০২/২০২৩ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল) ৬ মাস বৃদ্ধি পাবে।
* বর্ধিত তামাদির মেয়াদ শেষ হবে: ২০/০২/২০২৩ + ৬ মাস = ২০/০৮/২০২৩ তারিখে (আনুমানিক)।
৫. X এর দরখাস্ত দাখিলের তারিখ: ২২/১১/২০২৩।
X এর জন্য পরামর্শ:
উপরিউক্ত গণনা অনুযায়ী, X এর ডিক্রি জারির জন্য তামাদির মেয়াদ আনুমানিক ২০/০৮/২০২৩ তারিখে শেষ হয়ে গেছে। যেহেতু X ২২/১১/২০২৩ তারিখে দরখাস্ত দাখিল করতে চাচ্ছেন, যা বর্ধিত সময়সীমার (২০/০৮/২০২৩) প্রায় ৩ মাস পরেও, সেহেতু তার দরখাস্তটি তামাদি দোষে বারিত (time-barred) হয়ে যাবে।
সুতরাং, তামাদি আইন অত্যন্ত কঠোর এবং সময়সীমার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। একবার নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে, যদি না ধারা ৫ এর অধীনে 'যথেষ্ট কারণ' প্রমাণ করা যায় (যা সাধারণত ডিক্রি জারির আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ ধারা ৫ ডিক্রি জারির আবেদনকে স্পষ্টভাবে বাদ দেয়), তাহলে আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করতে পারে না। X এর ক্ষেত্রে, ধারা ১৫ এর সুবিধা পাওয়ার পরও, তিনি বর্ধিত সময়সীমার পরেও আবেদন করেছেন। তাই, তার আবেদন আদালত গ্রহণ করবে না এবং ডিক্রিটি কার্যকরের সুযোগ হারাবে।
ইউটিউব ভিডিও - আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ প্রশ্ন ১১