- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ প্রশ্ন নং ১
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রশ্নপত্র সমাধান পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১। প্রশ্ন নং ১
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ১ এর ক ও খ
১। ক. “Plaint cannot be rejected on Mixed question of law and fact.” The Code of Civil Procedure, 1908 এর বিধান অনুযায়ী আরজি প্রত্যাখ্যানের সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ উল্লেখপূর্বক মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
খ. D এবং C যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী। C তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ঢাকায় D এর নিকট থেকে কিছু পণ্য ক্রয়ের চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক D তা সরবরাহ করলেও C তার মূল্য পরিশোধ করেননি। D মূল্য আদায়ের জন্য ঢাকার উপযুক্ত আদালতে মামলা করেন। C মামলাটি চট্টগ্রামের উপযুক্ত আদালতে বদলী করতে চান। C এর বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে আপনার করণীয় কী? সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান উল্লেখে উত্তর দিন।
১. ক. "আইন ও তথ্যের মিশ্র প্রশ্নে আরজি খারিজ হতে পারে না।" দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর বিধান অনুযায়ী আরজি প্রত্যাখ্যানের সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ উল্লেখপূর্বক মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) এর আদেশ ৭, বিধি ১১ (Order 7, Rule 11) অনুযায়ী একটি আরজি কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে খারিজ হতে পারে। এই কারণগুলো হলো:
১. যখন আরজিতে মামলার কারণ প্রকাশ না পায় (No cause of action): যদি আরজি পড়ে আদালত দেখেন যে, বাদীর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই মামলা করার।
২. যখন দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য কম দেখানো হয় এবং ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ হয় (Undervalued relief): যদি বাদীর দাবির মূল্য কম দেখানো হয় এবং আদালত সংশোধন করতে বলার পরও তিনি তা না করেন।
৩. যখন দাবিকৃত প্রতিকারের জন্য অপর্যাপ্ত কোর্ট ফি দেওয়া হয় এবং ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ হয় (Insufficient court fee): যদি আরজিতে যথেষ্ট কোর্ট ফি না দেওয়া হয় এবং আদালত বলার পরও তা পরিশোধ না করা হয়।
৪. যখন আরজি দাখিলকৃত বিবৃতি থেকে বারিত হয় (Barred by law): যদি আরজির বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয় যে, মামলাটি আইন দ্বারা বারিত, যেমন তামাদি হয়ে গেছে।
৫. যখন এটি নকল (Not in duplicate): যদি আরজি প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি বা সঠিক ফরমেটে দাখিল করা না হয়।
৬. যখন বাদী বিধি ৯ এর বিধান মেনে চলতে ব্যর্থ হয় (Failure to comply with Rule 9): যদি আরজি দাখিলের পর বাদী সমন জারি বা প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে ব্যর্থ হন।
"আইন ও তথ্যের মিশ্র প্রশ্নে আরজি খারিজ হতে পারে না" - মন্তব্যটির ব্যাখ্যা:
এই মন্তব্যটির অর্থ হলো, আরজি খারিজের সিদ্ধান্ত কেবল তখনই নেওয়া যাবে যখন আরজিটি শুধুমাত্র আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সুস্পষ্টভাবে ত্রুটিপূর্ণ হয় বা আইন দ্বারা বারিত হয়। অর্থাৎ, আরজি খারিজ করার জন্য আদালতকে সাধারণত সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ বা পক্ষগণের মধ্যে বিতর্কিত তথ্যের (disputed facts) বিচারিক বিশ্লেষণ করতে হয় না।
যদি একটি আইনি প্রশ্ন নিষ্পত্তির জন্য কিছু তথ্যগত বিতর্কের নিষ্পত্তি প্রয়োজন হয় (যেমন, চুক্তিটি আদৌ হয়েছিল কিনা, বা চুক্তির নির্দিষ্ট শর্তগুলো কী ছিল), তবে সেটিকে "আইন ও তথ্যের মিশ্র প্রশ্ন" বলা হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে, আরজি খারিজ করা যায় না। কারণ, তথ্যের সত্যতা প্রমাণ ছাড়া আইনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আদালতকে তখন মামলাটি পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গ্রহণ করতে হবে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তথ্যগত বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে হবে, তারপর আইনি সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আরজি খারিজের ক্ষমতা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য, তবে তা কেবল সুস্পষ্ট ত্রুটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, বিতর্কমূলক তথ্যের ক্ষেত্রে নয়।
১. খ. D এবং C যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী। C তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ঢাকায় D এর নিকট থেকে কিছু পণ্য ক্রয়ের চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক D তা সরবরাহ করলেও C তার মূল্য পরিশোধ করেননি। D মূল্য আদায়ের জন্য ঢাকার উপযুক্ত আদালতে মামলা করেন। C মামলাটি চট্টগ্রামের উপযুক্ত আদালতে বদলী করতে চান। C এর বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে আপনার করণীয় কী? সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান উল্লেখে উত্তর দিন।
C এর বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে, আমার প্রধান করণীয় হলো মামলাটি ঢাকার আদালত থেকে চট্টগ্রামের আদালতে স্থানান্তরের জন্য দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) এর ধারা ২২ (Section 22) এবং ধারা ২৪ (Section 24) এর অধীনে উপযুক্ত আদালতে আবেদন (Application for Transfer) দাখিল করা।
আমার করণীয়:
১. কারণ নির্ণয়: প্রথমে C এর সাথে আলোচনা করে মামলা স্থানান্তরের জন্য যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে বের করব। যেমন, C ও তার বেশিরভাগ সাক্ষী চট্টগ্রামে থাকেন, তাই তাদের ঢাকায় এসে মামলা পরিচালনা করা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হবে। ন্যায়ের স্বার্থে এবং উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য চট্টগ্রামে মামলা হওয়া উচিত।
২. আবেদন প্রস্তুত ও দাখিল:
ধারা ২২: এই ধারা অনুযায়ী, যেখানে একাধিক আদালতের মামলার এখতিয়ার আছে (যেমন, এই ক্ষেত্রে চুক্তি ঢাকায় হয়েছে বলে ঢাকার এখতিয়ার আছে, কিন্তু C চট্টগ্রামে থাকে বলে তার জন্য চট্টগ্রামেও মামলা পরিচালনার সুবিধা থাকতে পারে), সেখানে বিবাদী (C) মামলা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে পারে। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই আবেদনটি মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে করা হচ্ছে।
ধারা ২৪: এটি জেলা জজ (District Judge) এবং হাইকোর্ট বিভাগ (High Court Division) কে মামলা স্থানান্তরের ক্ষমতা দেয়।
C এর আইনজীবী হিসেবে, আমি প্রথমে ঢাকার জেলা জজ আদালতে একটি আবেদনপত্র দাখিল করব, যেখানে স্থানান্তরের কারণগুলো (যেমন, সাক্ষীদের সুবিধা, C এর ব্যবসায়িক অবস্থান, আর্থিক সুবিধা, ন্যায়ের স্বার্থ) বিস্তারিত উল্লেখ করব এবং একটি শপথপত্র সংযুক্ত করব।
যদি জেলা জজ আদালত আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন বা পরিস্থিতি এমন হয় যে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করা অধিক কার্যকর, তাহলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একই ধরনের আবেদন দাখিল করব। হাইকোর্ট বিভাগ ন্যায়ের স্বার্থে যেকোনো দেওয়ানি মামলা এক আদালত থেকে অন্য আদালতে স্থানান্তর করতে পারে।
৩. নোটিশ প্রদান: আবেদনের আগে বা দাখিলের সাথে সাথে বাদী D এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে স্থানান্তরের আবেদনের বিষয়ে নোটিশ দিতে হবে, যাতে তারা শুনানিতে তাদের বক্তব্য জানাতে পারে।
৪. শুনানি ও যুক্তি: আদালতে আবেদনটির শুনানির সময়, আমি C এর পক্ষে জোরালোভাবে যুক্তি উপস্থাপন করব যে কেন চট্টগ্রামের আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য জরুরি।
মূলত, আমি আইনগতভাবে সমর্থনযোগ্য কারণ দেখিয়ে ধারা ২২ ও ২৪ এর ক্ষমতা বলে আদালতকে মামলাটি চট্টগ্রামে স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ করব।