- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ৫ এর ক ও খ
৫। ক. আমলযোগ্য অপরাধ নিরোধে পুলিশের ক্ষমতা বর্ণনা করুন।
খ.ফৌজদারী মামলার তদন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন না হলে আটককৃত ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
ক. আমলযোগ্য অপরাধ নিরোধে পুলিশের ক্ষমতা (বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী)
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী, আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable Offence) বলতে এমন অপরাধকে বোঝায় যেখানে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় (without warrant) একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই তদন্ত শুরু করতে পারে। এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের জন্য পুলিশকে নিম্নলিখিত ক্ষমতাগুলো দেওয়া হয়েছে:
অপরাধ প্রতিরোধ করা (ধারা ১৪৯): ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৪৯ অনুযায়ী, প্রত্যেক পুলিশ অফিসার আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবেন। এর মানে হলো, পুলিশ কোনো অপরাধ ঘটার আগেই সক্রিয়ভাবে তা ঠেকানোর চেষ্টা করবে।
অপরাধের তথ্য জানানো (ধারা ১৫০): ধারা ১৫০ নির্দেশ দেয় যে, কোনো পুলিশ অফিসার যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংবাদ পান, তাহলে তিনি অবিলম্বে সেই তথ্য তার ঊর্ধ্বতন অফিসার অথবা যে ম্যাজিস্ট্রেটের স্থানীয় এখতিয়ারে অপরাধটি ঘটতে পারে, তাকে জানাবেন। এটি পুলিশকে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিরোধের সুযোগ দেয়।
অপরাধ পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার (ধারা ১৫১): ধারা ১৫১ পুলিশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা দেয়। যদি কোনো পুলিশ অফিসার জানতে পারেন যে কোনো ব্যক্তি একটি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করছে এবং সেই অপরাধ প্রতিরোধের জন্য তাকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা জরুরি, তাহলে তিনি সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। তবে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ আদেশ ছাড়া চব্বিশ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা যাবে না।
জনসম্পত্তির ক্ষতি নিবারণ (ধারা ১৫২): ধারা ১৫২ অনুযায়ী, পুলিশ অফিসাররা রেলপথ, খাল, টেলিগ্রাফ লাইন বা অন্য কোনো সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি বা আঘাত প্রতিরোধ করতে পারবেন। এটি জনগুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষায় পুলিশের প্রতিরোধমূলক ভূমিকা নিশ্চিত করে।
খ. ফৌজদারী মামলার তদন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন না হলে আটককৃত ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের পদ্ধতি (বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী)
যদি কোনো ফৌজদারী মামলার তদন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা সম্ভব না হয় এবং আটককৃত ব্যক্তিকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়:
চব্বিশ ঘণ্টার বেশি আটক না রাখার নির্দেশ (ধারা ৬১): ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৬১ অনুযায়ী, পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ আদেশ ছাড়া চব্বিশ ঘণ্টার বেশি আটক রাখতে পারবে না। এই চব্বিশ ঘণ্টা গণনার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পৌঁছানোর জন্য যে সময় লাগে, তা বাদ যাবে। এই বিধানটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ এবং আটকাদেশ (ধারা ১৬৭):
যদি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ না হয় এবং পুলিশ বিশ্বাস করে যে আটককৃত ব্যক্তিকে আরও সময় হেফাজতে রাখা প্রয়োজন, তাহলে ধারা ১৬৭(১) অনুযায়ী, থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে অবিলম্বে আটককৃত ব্যক্তিকে নিকটস্থ জুডিশিয়াল বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে হবে। এর সাথে মামলার ডায়েরি এবং কেন আরও আটক রাখার প্রয়োজন, তার কারণও জানাতে হবে।
ধারা ১৬৭(২) অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থাপিত কারণগুলো পর্যালোচনা করে আটককৃত ব্যক্তিকে অনধিক পনেরো দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে (পুলিশ রিমান্ড) অথবা বিচারিক হেফাজতে (জেল হাজত) রাখার আদেশ দিতে পারবেন। এই ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাবে।
যদি ১৫ দিনের মধ্যেও তদন্ত শেষ না হয় এবং অভিযোগ গুরুতর হয়, ধারা ১৬৭(৫) অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আরও আটকাদেশ দিতে পারেন:
যদি অপরাধটি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের বেশি মেয়াদের কারাদণ্ড যোগ্য হয়, তাহলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোট আটকাদেশ ৯০ দিনের বেশি হবে না।
অন্যান্য ক্ষেত্রে, মোট আটকাদেশ ৬০ দিনের বেশি হবে না।
জামিন: যদি নির্ধারিত ৯০ দিন বা ৬০ দিনের (অপরাধের ধরন অনুযায়ী) মধ্যে তদন্ত শেষ না হয় এবং পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আটককৃত ব্যক্তি জামিনে মুক্তির অধিকারী হবেন (এটি 'ডিফল্ট বেইল' নামে পরিচিত), যদি না তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা থাকে।
এই ধারাগুলো নিশ্চিত করে যে, একদিকে যেমন অপরাধ তদন্তের জন্য পুলিশ যথেষ্ট সময় পায়, তেমনি অন্যদিকে আটককৃত ব্যক্তির মৌলিক অধিকারও সুরক্ষিত থাকে এবং তাকে অযথা বা অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা যায় না।
youtube ভিডিও - বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান