- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান। পরীক্ষার তারিখ ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন নং ১২ এর ক ও খ
১২। ক) 'It is the duty of an advocate to maintain towards the courts a respectful attitude, not for the sake of the temporary incumbent of judicial office, but for the maintenance of its supreme importance.'— The Canons of Professional Conduct and Etiquette এর সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে নীতিটি ব্যাখ্যা করুন।
১২। খ) The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 – এর বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল এর গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করুন।
১২ নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
"It is the duty of an advocate to maintain towards the courts a respectful attitude, not for the sake of the temporary incumbent of judicial office, but for the maintenance of its supreme importance." — The Canons of Professional Conduct and Etiquette এর সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে নীতিটি ব্যাখ্যা করুন।
উক্ত নীতিটি বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্য প্রণীত The Bangladesh Bar Council Canons of Professional Conduct and Etiquette for Advocates-এর মূল মর্মবাণী তুলে ধরে। বিশেষ করে, Canon I (Duty to the Court) এই নীতির ভিত্তি। নীতিটির মূল উদ্দেশ্য হলো আদালত নামক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ও কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখা, যা শুধুমাত্র বিচারকের ব্যক্তিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে।
ব্যাখ্যা:
আইনজীবীদের পেশাগত আচরণবিধির প্রথম এবং প্রধান ক্যাননটি আদালতের প্রতি আইনজীবীর শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এর অর্থ হলো:
১. প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধা, ব্যক্তির প্রতি নয়: আইনজীবীর কর্তব্য হলো আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। এই শ্রদ্ধা কোনো নির্দিষ্ট বিচারকের ব্যক্তিগত পদমর্যাদা বা সাময়িক অধিকারের জন্য নয়, বরং আদালত নামক প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব গুরুত্ব ও মর্যাদার জন্য। আদালত বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক। এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলে সমগ্র বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা নষ্ট হতে পারে।
২. ন্যায়বিচারের প্রশাসন নিশ্চিত করা: আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু প্রশাসন নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। একজন আইনজীবী যখন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন, তখন তিনি আদালতের কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন, আদালতের নির্দেশ মেনে চলেন এবং অযথা সময় নষ্ট করেন না। এটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও কার্যকর রাখে।
৩. আদালতের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বজায় রাখা: আদালতের সিদ্ধান্ত ও আদেশ কার্যকর করার জন্য তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা অবিচল থাকা জরুরি। আইনজীবীর শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ আদালতের কর্তৃত্বকে সুসংহত করে। এর বিপরীত আচরণ আদালতের ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. জনগণের আস্থা অর্জন: বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আইনজীবীরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করেন, তখন জনগণ বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতার উপর আস্থা রাখতে পারে। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
৫. পেশাগত সততা ও নৈতিকতা: আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আইনজীবীর পেশাগত সততা ও নৈতিকতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন আইনজীবী সমাজের একজন কর্মকর্তা এবং ন্যায়বিচারের প্রসারে তার ভূমিকা রয়েছে। আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা তার পেশাগত দায়িত্বের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।
সংক্ষেপে, এই নীতিটি আইনজীবীদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তাদের আচরণ কেবল ব্যক্তি বিচারকদের সম্মান জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিচার ব্যবস্থার সামগ্রিক মহত্ত্ব এবং ন্যায়বিচারের আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য অপরিহার্য।
১২ নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 – এর বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল এর গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করুন।
The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 (বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২) এর বিধান অনুযায়ী, পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তের জন্য "ট্রাইব্যুনাল" (Tribunal) গঠিত হয়। এই ট্রাইব্যুনাল বার কাউন্সিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা আইনজীবীদের পেশাগত আচরণ ও নৈতিক মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ট্রাইব্যুনালের গঠন:
১৯৭২ সালের অর্ডারের অনুচ্ছেদ ৩২(১) অনুযায়ী, কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে।
১. সদস্য সংখ্যা: প্রতিটি ট্রাইব্যুনাল তিন জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।
২. সদস্য নির্বাচন:
* বার কাউন্সিলের একজন সদস্যকে বার কাউন্সিল কর্তৃক নিয়োগ করা হয়, যিনি সাধারণত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
* অন্য দুই জন সদস্যকে বার কাউন্সিল তার অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্ত সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচন করে, যাদের মধ্যে একজন নির্বাচিত সদস্য এবং অন্যজন তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট হতে পারেন।
৩. চেয়ারম্যান: বার কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত বার কাউন্সিলের সদস্যই সাধারণত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হন।
৪. যোগ্যতা: ট্রাইব্যুনালের সকল সদস্যকে অবশ্যই বৈধ অ্যাডভোকেট এবং বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য হতে হবে (তবে নির্বাচিত সদস্য না হলেও কেবল তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট হতে পারেন)।
ট্রাইব্যুনালের কার্যাবলী:
১৯৭২ সালের অর্ডারের অনুচ্ছেদ ৩২(৩) এবং ৩৪ অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ:
১. পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত: ট্রাইব্যুনালের প্রধান কাজ হলো কোনো অ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের (Professional Misconduct) লিখিত অভিযোগ তদন্ত করা।
২. অভিযোগের শুনানি: ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট উভয়কে শুনানির সুযোগ দেয়। উভয় পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করা হয়।
৩. সাক্ষী তলব ও দলিল পরীক্ষা: একটি দেওয়ানি আদালতের (Civil Court) ক্ষমতা ব্যবহার করে, ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী তলব করতে পারে এবং কোনো দলিল বা বস্তু পরীক্ষা করার জন্য হাজির করার নির্দেশ দিতে পারে।
৪. শপথ বাক্য পাঠ করানো: ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীদের শপথ বাক্য পাঠ করাতে এবং হলফনামার মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারে।
৫. তদন্ত প্রতিবেদন পেশ: তদন্ত শেষে, ট্রাইব্যুনাল তার অনুসন্ধানের ফলাফল এবং সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন বার কাউন্সিলের কাছে পেশ করে।
৬. সুপারিশ প্রদান: ট্রাইব্যুনাল তার প্রতিবেদনে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে বিষয়ে সুপারিশ করতে পারে। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে অভিযোগ খারিজ করা, তিরস্কার করা, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্র্যাকটিস থেকে স্থগিত করা, অথবা অ্যাডভোকেটের নাম তালিকা থেকে মুছে ফেলার (Disbarment) মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৭. ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষকে ন্যায্য ও পক্ষপাতহীন শুনানি নিশ্চিত করে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে।
ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ সাধারণত বার কাউন্সিল দ্বারা চূড়ান্ত আদেশ হিসেবে গৃহীত হয়। তবে, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগও থাকে, সাধারণত সুপ্রিম কোর্টে। এভাবে, ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীদের পেশাগত মান বজায় রাখতে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।