- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন নং ১৩ এর ক ও খ
১৩। ক) আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর ভূমিকাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
১৩। খ) জনাব X, একজন এ্যাডভোকেট, মিস Y এর পক্ষে একটি পারিবারিক মোকদ্দমায় প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। মামলার রায়ে আদালত দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ ৫০০০০০ টাকা বাদী মিস Y বরাবর প্রদান করার জন্য বিবাদী পক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত টাকা বিবাদীপক্ষ হতে প্রাপ্ত হয়ে জনাব X ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করেন এবং এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মিস Y কে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। পরবর্তীতে মিস Y জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন যে, চেম্বারের খরচ মেটাতে ঐ টাকার একটি অংশ তিনি খরচ করেছেন এবং শীঘ্রই তা ফেরত দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
আপনি কি মনে করেন যে, জনাব X এ কাজ The Canons of Professional Conduct and Etiquette এর লংঘন? এক্ষেত্রে মিস Y জনাব X এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়েরে মনস্থ করে আপনাকে নিযুক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট বিধান উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দায়েরের জন্য একটি দরখাস্ত মুসাবিধা করুন।
১৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর ভূমিকা
আইনজীবীগণ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল (Bangladesh Bar Council) একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য সংস্থা। এর ভূমিকা বহুমুখী এবং নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর মাধ্যমে এর গুরুত্ব মূল্যায়ন করা যায়:
১. আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি ও পেশার মান নিয়ন্ত্রণ: বার কাউন্সিলের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইন পেশায় প্রবেশের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন ও তালিকাভুক্ত করা। শিক্ষাগত যোগ্যতা, আইন পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বার কাউন্সিল নিশ্চিত করে যে, কেবল উপযুক্ত ও দক্ষ ব্যক্তিরাই এই পেশায় আসছেন। এটি পেশার মৌলিক মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. পেশাগত আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগ: বার কাউন্সিল আইনজীবীদের জন্য "Canons of Professional Conduct and Etiquette" অর্থাৎ পেশাগত আচরণবিধি ও শিষ্টাচার বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই বিধিমালা আইনজীবীদের আদালতে, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি এবং সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে। বার কাউন্সিল এই বিধিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করে আইনজীবীদের মধ্যে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
৩. পেশাগত অসদাচরণের তদন্ত ও বিচার: যদি কোনো আইনজীবী পেশাগত অসদাচরণে লিপ্ত হন, তাহলে বার কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করে। এজন্য ট্রাইব্যুনাল (Tribunal) গঠন করা হয়, যা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে এবং দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এই ব্যবস্থাগুলো পেশার মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৪. আইন শিক্ষা তত্ত্বাবধান: যদিও সরাসরি শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব বার কাউন্সিলের নয়, তবে এটি আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানসম্পন্ন আইনের ডিগ্রি প্রয়োজন হয়, যা আইন শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।
৫. আইনজীবীদের স্বার্থরক্ষা ও উন্নয়ন: বার কাউন্সিল আইনজীবীদের পেশাগত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। একই সাথে, এটি আইনজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে, যা তাদের আইনি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
৬. ন্যায়বিচার প্রশাসনে অবদান: আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বার কাউন্সিল আইনজীবীদের নৈতিকতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রশাসনে ইতিবাচক অবদান রাখে। যখন আইনজীবীরা সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল হন, তখন বিচারিক প্রক্রিয়া সহজতর হয় এবং জনগণ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে আস্থা অর্জন করে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, যেমন: অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা বা স্বচ্ছতার অভাব। তা সত্ত্বেও, সামগ্রিকভাবে আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভূমিকা অপরিসীম এবং এটি একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইন পেশার মর্যাদা ও কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখতে অপরিহার্য।
১৩ নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
জনাব X এর কাজ The Canons of Professional Conduct and Etiquette এর লংঘন এবং অভিযোগ দায়েরের দরখাস্ত মুসাবিধা
হ্যাঁ, জনাব X এর কাজটি The Canons of Professional Conduct and Etiquette এর গুরুতর লঙ্ঘন।
লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা:
জনাব X এর কাজটি মূলত Canon II (Duty to the Client) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ক্যাননটি মক্কেলের প্রতি আইনজীবীর বিশ্বস্ততা, সততা এবং স্বচ্ছতার বাধ্যবাধকতা নির্দেশ করে। সুনির্দিষ্টভাবে, নিম্নোক্ত কারণে এটি লঙ্ঘন:
* মক্কেলের অর্থ আত্মসাৎ/অপব্যবহার (Misappropriation of Client's Money): দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ প্রাপ্ত ৫০০,০০০ টাকা মক্কেল মিস Y-এর সম্পদ ছিল, যা তার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করা এবং চেম্বারের খরচ মেটাতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবৈধ। আইনজীবীর কখনোই মক্কেলের অর্থ নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত নয়।
* স্বচ্ছতার অভাব ও তথ্য গোপন করা: জনাব X এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মিস Y কে টাকা প্রাপ্তির বিষয়ে জানাননি, যা মক্কেলের প্রতি স্বচ্ছতা ও সততার অভাব প্রমাণ করে। একজন আইনজীবীর মক্কেলের সকল আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ও সুস্পষ্টভাবে অবহিত করা কর্তব্য।
* বিশ্বাস ভঙ্গ: একজন আইনজীবী মক্কেলের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কাজ করেন। জনাব X মক্কেলের টাকা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
এই কাজগুলো আইনজীবীর পেশাগত অসদাচরণ (Professional Misconduct) হিসেবে গণ্য হয়, যা বার কাউন্সিলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়েরের জন্য দরখাস্ত মুসাবিধা:
বরাবর,
সচিব,
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল,
বার কাউন্সিল ভবন, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০।
বিষয়: অ্যাডভোকেট জনাব X (সনদ নং [যদি জানা থাকে], চেম্বার: [ঠিকানা]) এর বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে।
মহোদয়,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী মিস Y, পিতা/স্বামী: [পিতার/স্বামীর নাম], সাং: [পূর্ণ ঠিকানা], পেশা: [পেশা], এই মর্মে অভিযোগ দাখিল করিতেছি যে, অ্যাডভোকেট জনাব X (যার সনদ নং [যদি জানা থাকে] এবং চেম্বার [ঠিকানা]) আমার পক্ষে একটি পারিবারিক মোকদ্দমায় (মামলা নং [যদি জানা থাকে], আদালত: [আদালতের নাম]) প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে পেশাগত অসদাচরণ করিয়াছেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:
১. জনাব X আমার পক্ষে [মামলার ধরন, যেমন: দেনমোহর ও খোরপোষ প্রাপ্তির জন্য] একটি পারিবারিক মোকদ্দমায় [আদালতের নাম] আদালতে প্রতিনিধিত্ব করিতেছিলেন।
২. উক্ত মামলার রায়ে মাননীয় আদালত বিবাদী পক্ষকে দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ মোট ৫০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা বাদী হিসাবে আমাকে প্রদান করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
৩. গত [তারিখ, যেদিন টাকা প্রাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ] তারিখে বিবাদী পক্ষ হইতে জনাব X উক্ত ৫০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা প্রাপ্ত হন।
৪. জনাব X আমাকে উক্ত টাকা প্রাপ্তির বিষয়ে এক মাসেরও অধিক সময় ধরিয়া কোনো প্রকার অবহিত করেন নাই। আমি নিজে তাহার সহিত যোগাযোগ করিলে তিনি গত [তারিখ, যেদিন তিনি স্বীকার করেন] তারিখে স্বীকার করেন যে, তিনি উক্ত টাকা তাহার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে জমা করিয়াছেন এবং চেম্বারের খরচ মিটাইবার জন্য উহার একটি অংশ খরচ করিয়াছেন।
৫. তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়াছেন যে, তিনি শীঘ্রই সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিবেন, কিন্তু অদ্যাবধি তিনি টাকা ফেরত দেন নাই।
জনাব X এর এই কার্যকলাপ The Bangladesh Bar Council Canons of Professional Conduct and Etiquette for Advocates-এর Canon II (Duty to the Client)-এর সুস্পষ্ট ও গুরুতর লঙ্ঘন। মক্কেলের অর্থ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা এবং টাকা প্রাপ্তির তথ্য গোপন করা একজন আইনজীবীর জন্য সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। তাহার এই আচরণ আমার ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং আইন পেশার প্রতি আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করিয়াছে।
অতএব, মহোদয়ের নিকট সবিনয় নিবেদন এই যে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়া জনাব X এর বিরুদ্ধে The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972-এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনার সদয় মর্জি হয়।
তারিখ: [বর্তমান তারিখ]
বিনীত নিবেদক,
(মিস Y)
[মিস Y এর স্বাক্ষর]
মোবাইল নং: [মিস Y এর মোবাইল নম্বর]
ই-মেইল: [মিস Y এর ই-মেইল ঠিকানা, যদি থাকে]
সংযুক্তি (যদি থাকে):
১. আদালতের রায়ের অনুলিপি।
২. বিবাদী পক্ষের টাকা প্রদানের প্রমাণপত্র (যদি থাকে)।
৩. অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক নথি।