- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ প্রশ্ন নং ৩
তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ৩ এর ক ও খ
৩। ক. চুক্তি সংশোধন ও রদকরণের ক্ষেত্রসমূহ উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
খ. X, Y এর সাথে চুক্তি করেন যে, X বারো মাস Y এর থিয়েটারে গান করবেন এবং X উক্ত সময়ে অন্য কোথাও গান করবেন না। X চুক্তিতি পালন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। চুক্তিটি বলবতযোগ্য কি? সংশ্লিষ্ট আইন উল্লেখে Y কে উপযুক্ত পরামর্শ দিন
৩। ক. চুক্তি সংশোধন ও রদকরণের ক্ষেত্রসমূহ উদাহরণসহ আলোচনা
চুক্তি সংশোধন (Rectification) এবং রদকরণ (Rescission) দুটি ভিন্ন ধারণা, যা চুক্তি আইনের অধীনে আলোচনা করা হয়।
চুক্তি সংশোধন (Rectification)
চুক্তি সংশোধন বলতে বোঝায়, যখন একটি লিখিত চুক্তিতে প্রতারণা (Fraud) অথবা পক্ষগণের পারস্পরিক ভুলের (Mutual Mistake) কারণে চুক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না, তখন সেই ভুলগুলো সংশোধন করে চুক্তিটিকে আসল উদ্দেশ্য অনুযায়ী তৈরি করা। এটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৩১ (Section 31 of the Specific Relief Act, 1877) দ্বারা পরিচালিত।
ধারা ৩১ এর মূল কথা:
যদি প্রতারণা বা পক্ষগণের পারস্পরিক ভুলের জন্য কোনো লিখিত দলিল (চুক্তি) পক্ষগণের প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তবে যেকোনো পক্ষ আদালতকে সেই দলিল সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে।
সংশোধনের ক্ষেত্রসমূহ (উদাহরণসহ):
* প্রতারণা দ্বারা সৃষ্ট ভুল: যেমন, একটি দলিলে প্রতারণা করে বেশি জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না।
* পারস্পরিক ভুল: চুক্তিতে টাকার পরিমাণ ভুলবশত $৫০০,০০০ এর পরিবর্তে $৫০,০০০ লেখা হয়েছে, যা উভয় পক্ষেরই অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল।
* বানান বা টাইপিং ত্রুটি: যেমন, নাম বা ঠিকানায় ভুল বানান।
* সম্পত্তির বিবরণে ভুল: যেমন, জমির দাগ নম্বর ভুল লেখা হয়েছে।
চুক্তি রদকরণ (Rescission)
চুক্তি রদকরণ বলতে বোঝায় একটি চুক্তিকে বাতিল বা অকার্যকর করা, যেন শুরু থেকেই কোনো চুক্তি অস্তিত্বে ছিল না। এটি সাধারণত এমন ক্ষেত্রে ঘটে যখন একটি চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ হয় বা এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৩৫ (Section 35 of the Specific Relief Act, 1877) দ্বারা পরিচালিত।
ধারা ৩৫ এর মূল কথা:
নিম্নোক্ত পরিস্থিতিতে একটি চুক্তি রদকরণের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা যেতে পারে:
(ক) যেখানে চুক্তিটি আবেদনকারী পক্ষের জন্য রদযোগ্য (voidable) বা বাতিলযোগ্য (terminable) হয়;
(খ) যেখানে চুক্তির বৈধতা অবৈধ, যার কারণগুলো দলিলের চেহারাতে প্রকাশিত হয় না;
(গ) যেখানে একটি অস্থায়ী আদেশ বা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং আদালত মনে করে যে এর স্থায়ী রদকরণ প্রয়োজন।
রদকরণের ক্ষেত্রসমূহ (উদাহরণসহ):
* প্রতারণা (Fraud): যদি চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৭ অনুযায়ী এক পক্ষ অন্য পক্ষকে প্রতারণা করে চুক্তি করতে বাধ্য করে। (চুক্তি আইন, ধারা ১৯)
* অযাচিত প্রভাব (Undue Influence): যদি চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৬ অনুযায়ী প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহার করে চুক্তি করানো হয়। (চুক্তি আইন, ধারা ১৯ক)
* জোরপূর্বক বা ভয়ভীতি (Coercion): যদি চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৫ অনুযায়ী হুমকি বা ভয় দেখিয়ে চুক্তি করানো হয়। (চুক্তি আইন, ধারা ১৯)
* ভুল ধারণা (Mistake): যদি চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ২০, ২১, ২২ অনুযায়ী চুক্তির উভয় পক্ষই মৌলিক বিষয়ে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়। (যেমন, যে জিনিস নিয়ে চুক্তি তা চুক্তি করার আগেই নষ্ট হয়ে গেছে)।
* মিথ্যা বর্ণনা (Misrepresentation): যখন চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৮ অনুযায়ী সরল বিশ্বাসে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। (চুক্তি আইন, ধারা ১৯)
* অবৈধ চুক্তি (Voidable Contract): যেমন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সাথে চুক্তি, যা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি চাইলে বাতিল করতে পারে।
খ. X, Y এর সাথে চুক্তি করেন যে, X বারো মাস Y এর থিয়েটারে গান করবেন এবং X উক্ত সময়ে অন্য কোথাও গান করবেন না। X চুক্তিটি পালন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। চুক্তিটি বলবতযোগ্য কি? সংশ্লিষ্ট আইন উল্লেখে Y কে উপযুক্ত পরামর্শ দিন।
আইনগত বিশ্লেষণ:
এই ক্ষেত্রে চুক্তি আইন ১৮৭২ এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর বিধান প্রযোজ্য।
১. সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ (Specific Performance):
* সাধারণত, আদালত ব্যক্তিগত সেবার চুক্তি (যেমন, গান গাওয়া, অভিনয়) সুনির্দিষ্টভাবে কার্য সম্পাদনের আদেশ দেয় না। কারণ, এই ধরনের কাজের গুণগত মান ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল এবং জোর করে আদায় করা সম্ভব নয়। তাই, Y সরাসরি আদালত থেকে X কে Y এর থিয়েটারে গান গাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ পেতে পারবে না।
২. নঞর্থক শর্ত পালনের জন্য নিষেধাজ্ঞা (Injunction to perform negative agreement):
* সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৫৭ এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো চুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট কাজ করার সক্রিয় চুক্তি (affirmative agreement) থাকে এবং এর সাথে একটি নঞর্থক চুক্তি (negative agreement) থাকে যে, একটি নির্দিষ্ট কাজ করা হবে না, তবে আদালত নঞর্থক চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য নিষেধাজ্ঞা (Injunction) জারি করতে পারে, যদিও সক্রিয় চুক্তির জন্য তা সম্ভব নয়।
* এই ধারার অধীনে, যদিও আদালত X কে জোর করে Y এর থিয়েটারে গান গাওয়ার আদেশ দিতে পারবে না, তবে আদালত X কে চুক্তির নঞর্থক শর্ত অর্থাৎ অন্য কোথাও গান না গাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। ধারা ৫৭ এর উদাহরণ (গ) (Illustration (c)) এই পরিস্থিতির সাথে সরাসরি সাদৃশ্যপূর্ণ।
৩. ক্ষতিপূরণের মামলা (Suit for Damages):
* চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৭৩ অনুযায়ী, যখন একটি চুক্তি ভঙ্গ হয়, তখন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ চুক্তি ভঙ্গকারী পক্ষের কাছ থেকে সেই চুক্তি ভঙ্গের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি বা লোকসানের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।
* X এর চুক্তি ভঙ্গের কারণে Y এর থিয়েটারের যে আর্থিক ক্ষতি হবে (যেমন, টিকিট বিক্রিতে লোকসান, সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়া, নতুন শিল্পী খুঁজতে খরচ), Y তার জন্য X এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবে।
Y এর জন্য উপযুক্ত পরামর্শ:
X এবং Y এর মধ্যে চুক্তিটি বলবতযোগ্য (enforceable)। Y নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারে:
১. নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের: Y অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৫৭ এর অধীনে X এর বিরুদ্ধে আদালতে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (Perpetual Injunction) মামলা দায়ের করবে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আদালত X কে চুক্তির মেয়াদকালে (বারো মাস) অন্য কোনো থিয়েটার বা স্থানে গান গাওয়া থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিতে পারে। এটি X এর উপর পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করবে যাতে সে Y এর সাথে চুক্তিটি পালন করে অথবা বেকার থাকে।
২. ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের: একই সাথে বা পৃথকভাবে, Y চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৭৩ অনুযায়ী X এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারে। Y কে প্রমাণ করতে হবে যে X এর চুক্তি ভঙ্গের কারণে তার কী ধরনের এবং কত টাকার ক্ষতি হয়েছে (যেমন, আয় হারানো, বিকল্প শিল্পীর জন্য অতিরিক্ত খরচ, থিয়েটারের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়া ইত্যাদি)। আদালত Y এর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে X কে সেই ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিতে পারে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ১৯ (Section 19) অনুযায়ী, যদি কোনো চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা সম্ভব না হয়, তবে আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিতে পারে।
ইউটিউব ভিডিও - আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ প্রশ্ন নং ৩