- Get link
- X
- Other Apps
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ প্রশ্ন নং ১০ এর ক ও খ
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার। প্রশ্ন নং ১০ এর ক ও খ
১০. ক) “Limitation bars the remedy but does not destroy the right." The Limitation Act, 1908 অনুসারে এই ধারণাটি ব্যতিক্রমসহ (যদি থাকে) আলোচনা করুন।
১০। খ) নাবালক X এর সম্পত্তি তার মাতা Y বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই ২০১২ সালে বিক্রয় করেন। X ২০১৮ সালে সাবালকত্ব অর্জন করেন। X উক্ত সম্পত্তির দখল উদ্ধারের জন্য ২০২৩ সালে মোকদ্দমা করতে চান। মোকদ্দমাটি দায়েরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তামাদি উল্লেখে X কে পরামর্শ দিন।
ক) "Limitation bars the remedy but does not destroy the right" (তামাদি প্রতিকারকে বারিত করে কিন্তু অধিকারকে ধ্বংস করে না)
"Limitation bars the remedy but does not destroy the right" - এই ধারণাটি তামাদি আইনের একটি মৌলিক নীতি। এর অর্থ হলো, তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে আদালত কোনো অধিকারের প্রতিকার দিতে অস্বীকার করতে পারে, কিন্তু এর ফলে মূল অধিকারটি বিলুপ্ত হয়ে যায় না। অধিকারটি সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি একটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় এবং ঋণের পাওনাদার তামাদি মেয়াদের মধ্যে মামলা দায়ের না করে, তাহলে পাওনাদার আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে পারবে না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের নৈতিক বা আইনগত বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে। ঋণটি এখনও বিদ্যমান থাকে, কিন্তু আদালতের মাধ্যমে এর প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
তামাদি আইন, ১৯০৮ (The Limitation Act, 1908) অনুসারে এই ধারণার ব্যাখ্যা:
তামাদি আইনের বিভিন্ন ধারায় এই নীতির প্রতিফলন দেখা যায়। বিশেষভাবে, এই আইনের ধারা ৩ এ বলা হয়েছে যে, তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর দায়েরকৃত কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত আদালত খারিজ করে দেবে, যদিও তামাদির বিষয়টি প্রতিপক্ষ কর্তৃক উত্থাপিত না হয়ে থাকে। এটি স্পষ্ট করে যে, তামাদি আইন মূলত আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার প্রাপ্তির অধিকারকে সীমিত করে, মূল অধিকারকে নয়।
ব্যতিক্রম (যদি থাকে):
কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে তামাদি মেয়াদের প্রভাবে অধিকার সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো:
স্বত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে: তামাদি আইনের ধারা ২৮ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিকূল দখলের মাধ্যমে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দখল বজায় রাখে, তাহলে মূল মালিকের স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয়। এই ক্ষেত্রে তামাদি কেবল প্রতিকারকে বারিত করে না, বরং মূল অধিকারকেই ধ্বংস করে নতুন অধিকার সৃষ্টি করে। এটি "Limitation bars the remedy but does not destroy the right" নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম।
অতএব, তামাদি আইন সাধারণত আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রতিকার লাভের সময়সীমা নির্ধারণ করে। এই সময়সীমা পার হয়ে গেলে আদালত সাধারণত কোনো মামলা গ্রহণ করে না। তবে, এর মানে এই নয় যে সংশ্লিষ্ট অধিকারটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বরং অধিকারটি বিদ্যমান থাকলেও তার প্রতিকার আদালতের মাধ্যমে চাওয়া সম্ভব হয় না। ব্যতিক্রম হিসেবে স্বত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে তামাদি অধিকারকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে পারে।
খ) নাবালক X এর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে পরামর্শ
নাবালক X এর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে তামাদি আইন, ১৯০৮ এর নিম্নলিখিত ধারাগুলো প্রযোজ্য হবে এবং X কে নিম্নোক্ত পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে:
ঘটনা:
নাবালক X এর সম্পত্তি তার মাতা Y বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই ২০১২ সালে বিক্রয় করেন।
X ২০১৮ সালে সাবালকত্ব অর্জন করেন।
X ২০২৩ সালে উক্ত সম্পত্তির দখল উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা করতে চান।
প্রযোজ্য ধারা ও পরামর্শ:
এই ক্ষেত্রে তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৬ (তামাদির বিশেষ সুবিধা) এবং অনুচ্ছেদ ১৪২ বা ১৪৪ (স্থাবর সম্পত্তি দখলের মামলা) প্রযোজ্য হবে।
তামাদি আইনের ধারা ৬ (আইনগত অক্ষমতা): এই ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হওয়ার সময় আইনগতভাবে অক্ষম (যেমন নাবালক) থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রে তামাদি মেয়াদ তার অক্ষমতা দূর হওয়ার পর থেকে গণনা করা হবে।
X ২০১২ সালে যখন সম্পত্তি বিক্রি হয় তখন নাবালক ছিল এবং সে আইনগতভাবে অক্ষম ছিল।
X ২০১৮ সালে সাবালকত্ব অর্জন করে, অর্থাৎ তার অক্ষমতা দূর হয়।
অনুচ্ছেদ ১৪২ বা ১৪৪:
অনুচ্ছেদ ১৪২: সাধারণত, স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ১২ বছরের তামাদি মেয়াদ প্রযোজ্য হয়, যা বেদখলের তারিখ থেকে গণনা করা হয়।
অনুচ্ছেদ ১৪৪: যদি বাদী দখলে না থাকে এবং তার অধিকার প্রমাণ করতে হয়, তবে দখল পাওয়ার অধিকার সৃষ্টির তারিখ থেকে ১২ বছরের তামাদি মেয়াদ প্রযোজ্য হয়।
যেহেতু X এর সম্পত্তি বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই বিক্রি করা হয়েছে এবং X এখন তার দখল পুনরুদ্ধার করতে চাইছে, এক্ষেত্রে ১২ বছরের তামাদি মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।
X এর মোকদ্দমা দায়েরের সময়সীমা গণনা:
X এর সম্পত্তি ২০১২ সালে বিক্রি হয়েছিল।
X ২০১৮ সালে সাবালকত্ব অর্জন করে। ধারা ৬ অনুযায়ী, X এর জন্য তামাদি মেয়াদ ২০১৮ সাল থেকে গণনা শুরু হবে।
স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তামাদি মেয়াদ ১২ বছর।
অতএব, X ২০২৩ সালে মোকদ্দমা করতে চাইলে তা তামাদি দ্বারা বারিত হবে না। X এর মোকদ্দমা দায়েরের শেষ তারিখ হবে ২০১৮ + ১২ = ২০৩০ সাল।
পরামর্শ:
X ২০২৩ সালে যেহেতু মোকদ্দমা দায়ের করতে চায়, তাই সে তামাদি মেয়াদের মধ্যেই আছে এবং মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবে। তাকে দ্রুত একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।