- Get link
- X
- Other Apps
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ৬ এর ক ও খ
৬। ক. কখন একটি সমাবেশ বেআইনী সমাবেশ হিসাবে গণ্য হয়? বেআইনী সমাবেশ ও দাঙ্গার মধ্যে পার্থক্যসমূহ কী?
খ. X, একজন চোর, পুলিশ হেফাজত থেকে পলায়ন করেন। পুলিশ কর্মকর্তা Y, X কে থামানোর জন্য তার প্রতি গুলি ছোঁড়েন, যা Z এর গায়ে লাগে এবং Z মারা যান। পুলিশ কর্মকর্তা Y কোনো অপরাধ করেছেন কি? আপনার উত্তরের সমর্থনে যুক্তি প্রদর্শন করুন।
৬। ক. দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী, একটি সমাবেশ কখন বেআইনী সমাবেশ হিসাবে গণ্য হয় এবং বেআইনী সমাবেশ ও দাঙ্গার মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হলো:
বেআইনী সমাবেশ (Unlawful Assembly)
দণ্ডবিধির ১৪১ ধারায় বেআইনী সমাবেশের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কোনো সমাবেশকে বেআইনী সমাবেশ হিসেবে গণ্য করা হবে যদি তাতে পাঁচ বা তার বেশি সংখ্যক ব্যক্তি উপস্থিত থাকে এবং তাদের সাধারণ উদ্দেশ্য (Common Object) নিম্নলিখিত পাঁচটির যেকোনো একটি হয়:
১. সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর বল প্রয়োগ: ফৌজদারি বল বা বল প্রয়োগের হুমকি দিয়ে সরকার, সংসদ, বা কোনো সরকারি কর্মচারীকে তাদের বৈধ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা দেওয়া।
২. আইনের প্রয়োগে প্রতিরোধ: কোনো আইন বা আইনি প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নে বাধা দেওয়া।
৩. অপরাধ সংঘটন: কোনো অপরাধমূলক কাজ যেমন অনিষ্ট সাধন (mischief), অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ (criminal trespass), বা অন্য কোনো অপরাধ করা।
৪. জবরদস্তি করে সম্পত্তি দখল: ফৌজদারি বল বা বল প্রয়োগের হুমকি দিয়ে কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি দখল করা, রাস্তা ব্যবহার বা পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, অথবা কোনো অধিকার প্রয়োগ করা।
৫. জবরদস্তি করে কাজ করানো বা বিরত রাখা: কাউকে এমন কোনো কাজ করতে বাধ্য করা যা সে আইনত করতে বাধ্য নয়, অথবা এমন কোনো কাজ থেকে বিরত রাখা যা সে আইনত করতে পারে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটি সমাবেশ শুরুতেই বেআইনী নাও হতে পারে, কিন্তু পরবর্তীতে এর সাধারণ উদ্দেশ্য উপরে বর্ণিত কোনো একটি উদ্দেশ্য হলে তা বেআইনী সমাবেশে পরিণত হতে পারে।
বেআইনী সমাবেশ ও দাঙ্গার মধ্যে পার্থক্য
বেআইনী সমাবেশ এবং দাঙ্গার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো বল প্রয়োগ বা সহিংসতা (use of force or violence)।
ধারা | বেআইনী সমাবেশ - দণ্ডবিধির ১৪১ ধারায় সংজ্ঞায়িত। দণ্ডবিধির ১৪৬ ধারায় দাঙ্গা সংজ্ঞায়িত।
মূল উপাদান | বেআইনী সমাবেশ- সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য থাকে, কিন্তু সেখানে বল প্রয়োগ বা সহিংসতা নাও থাকতে পারে। দাঙ্গা - বেআইনী সমাবেশের সদস্যরা যখন তাদের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বল বা সহিংসতা প্রয়োগ করে, তখন তা দাঙ্গায় পরিণত হয়। অর্থাৎ, দাঙ্গা হলো বেআইনী সমাবেশের একটি উন্নত অবস্থা।
সদস্য সংখ্যা | বেআইনী সমাবেশ - ন্যূনতম পাঁচ বা তার বেশি সদস্য প্রয়োজন। দাঙ্গা - দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার জন্য অবশ্যই একটি বেআইনী সমাবেশ থাকতে হবে, তাই এখানেও পাঁচ বা তার বেশি সদস্য প্রয়োজন।
শাস্তি | বেআইনী সমাবেশ - দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারা অনুযায়ী, বেআইনী সমাবেশে অংশ নিলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দাঙ্গা - দণ্ডবিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী, দাঙ্গা সংঘটিত করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
অপরাধের প্রকৃতি | বেআইনী সমাবেশ - এটি একটি প্রাথমিক অপরাধ। দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার পূর্বশর্ত হলো বেআইনী সমাবেশ। দাঙ্গা - এটি বেআইনী সমাবেশের একটি পরিণতি বা ফলাফল। যখন বেআইনী সমাবেশের সদস্যরা সহিংস আচরণ করে, তখন দাঙ্গা সংঘটিত হয়।
সংক্ষেপে, বলা যায়, প্রতিটি দাঙ্গা একটি বেআইনী সমাবেশ, কিন্তু প্রতিটি বেআইনী সমাবেশ দাঙ্গা নয়। যখন একটি বেআইনী সমাবেশ সহিংস হয়ে ওঠে এবং বল প্রয়োগ করে, তখনই তা দাঙ্গায় পরিণত হয়।
৬। খ. এই ঘটনাটি দণ্ডবিধির (Penal Code, 1860) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার সাথে সম্পর্কিত। এখানে মূল প্রশ্ন হলো, পুলিশ কর্মকর্তা Y যখন গুলি ছোঁড়েন, তখন তিনি কি আইনত সঠিক কাজ করেছেন নাকি কোনো অপরাধ করেছেন?
১. দণ্ডবিধি ১৮৬০ ধারা ৭৬
দণ্ডবিধির ধারা ৭৬ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে আইন দ্বারা কোনো কাজ করতে বাধ্য বলে বিশ্বাস করে এবং সেই বিশ্বাস সরল বিশ্বাসে (good faith) হয়, তবে সেই কাজটি কোনো অপরাধ নয়।
পুলিশ কর্মকর্তা Y-এর ক্ষেত্রে, তার পেশাগত দায়িত্ব হলো একজন পলাতক অপরাধীকে গ্রেফতার করা। তিনি বিশ্বাস করতে পারেন যে, চোর X-কে থামাতে গুলি চালানো তার আইনি দায়িত্বের অংশ। যদি তিনি সরল বিশ্বাসে এই কাজটি করে থাকেন, তবে ধারা ৭৬ তাকে আইনি সুরক্ষা দিতে পারে।
তবে, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, Y-এর এই বিশ্বাসটি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং তিনি যে বল প্রয়োগ করেছেন, তা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
২. বল প্রয়োগের মাত্রা (Proportionality of Force)
আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বল প্রয়োগের মাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাধারণ চোরকে থামাতে প্রাণঘাতী শক্তি (Lethal force) ব্যবহার করা সাধারণত অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়। যদি চোর X পুলিশ কর্মকর্তা Y-এর জীবন বা অন্য কোনো ব্যক্তির জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলেন, তবে তার প্রতি গুলি চালানো অতিরিক্ত বল প্রয়োগ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
এছাড়াও, একজন পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে জনবহুল এলাকায় গুলি চালানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রত্যাশিত। যেহেতু Z নামের একজন নিরপরাধ ব্যক্তি মারা গেছেন, তাই এটি প্রমাণ করে যে Y-এর কাজে অবহেলা বা অপরিণামদর্শিতা ছিল।
সিদ্ধান্ত
পুলিশ কর্মকর্তা Y-এর কাজটি সম্পূর্ণভাবে অপরাধমুক্ত হবে না। যদিও তিনি ধারা ৭৬ এর অধীনে নিজেকে আইন দ্বারা বাধ্য বলে দাবি করতে পারেন, কিন্তু তার কাজের ফলস্বরূপ একজন নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে।
আদালত এই ঘটনাটিকে সম্ভবত অবহেলাজনিত নরহত্যা (ধারা ৩০৪ক) হিসেবে বিচার করবে। কারণ, Y তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় যে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, তা করেননি। তার অপরিণামদর্শী কাজের কারণেই Z মারা গেছেন।
অতএব, Y কোনো অপরাধ করেননি—এমনটা বলা কঠিন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রকৃতি নির্ভর করবে আদালত কীভাবে তার কাজের উদ্দেশ্য, বল প্রয়োগের মাত্রা এবং তার অবহেলার বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তার ওপর।