- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান ৯
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ৯ এর ক ও খ
৯। (ক) কোন ক্ষেত্রে একটি দলিলের লিখিত বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য? The Evidence Act, 1872 এর সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে ব্যা করুন।
(খ) আপনার মক্কেল আপনাকে জানান যে, তিনি একটি জাল দলিল ব্যবহার করে কোনো সম্পত্তির দখল নিতে চান বিধায় তিনি আপনাকে তার পক্ষে মোকদ্দমা পরিচালনা করার অনুরোধ করেন। আপনি বিষয়টি স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি কে জানান। আপনি এর দ্বারা কোনো আইন লঙ্ঘন করেছেন কি? পেশাগত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রাপ্ত প্রকাশে একজন আইনজীবীর স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যাপূর্বক The Evidence Act, 1872 এর আলোকে উত্তর দিন।
আলোচনা
৯। (ক) কোন ক্ষেত্রে একটি দলিলের লিখিত বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য?
সাধারণত, কোনো চুক্তি, অনুদান বা সম্পত্তির অন্য কোনো হস্তান্তর সংক্রান্ত লিখিত দলিলের শর্তাবলী পরিবর্তন, বৈপরীত্য, যোগ, বা বিয়োগ করার জন্য মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৯১ এবং ৯২ ধারার মূলনীতি। তবে, ৯২ ধারায় এই নীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম রয়েছে, যেখানে দলিলের লিখিত বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। এই ব্যতিক্রমগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
১। জালিয়াতি, ভয়ভীতি বা অবৈধতা: যদি কোনো দলিল জালিয়াতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন (duress) বা অবৈধতার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে, তবে তা প্রমাণের জন্য মৌখিক সাক্ষ্য দেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করা হলে দলিলটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
২। পৃথক মৌখিক চুক্তি: এমন কোনো বিষয় সম্পর্কিত পৃথক মৌখিক চুক্তি থাকলে, যা দলিলের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ নয়, তবে তা মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যেতে পারে। যেমন, দলিলের সাথে সম্পর্কিত কোনো মৌখিক শর্ত যা পরবর্তীতে পালন করার কথা ছিল।
৩। পূর্ববর্তী শর্ত: যদি কোনো দলিলের কার্যকরতা কোনো শর্তের ওপর নির্ভরশীল হয় এবং সেই শর্তটি মৌখিকভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে সেই শর্ত প্রমাণ করার জন্য মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।
৪। পরবর্তী মৌখিক চুক্তি: যদি কোনো লিখিত চুক্তি পরবর্তীকালে মৌখিকভাবে বাতিল বা পরিবর্তন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই পরবর্তী মৌখিক চুক্তি প্রমাণ করা যেতে পারে, যদি দলিলটি আইন অনুসারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হয়।
৫। স্থানীয় প্রথা ও ঐতিহ্য: যদি কোনো স্থানীয় প্রথা বা ঐতিহ্য লিখিত দলিলের শর্তাবলীতে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও তা সেই চুক্তির অংশ বলে বিবেচিত হয়, তবে সেই প্রথা প্রমাণ করার জন্য মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।
৬। অস্পষ্টতা দূরীকরণ: যদি দলিলের ভাষা অস্পষ্ট হয় এবং সেই অস্পষ্টতা দূর করার জন্য মৌখিক সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয়, তবে সেই সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
উপরিউক্ত ব্যতিক্রমগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, মৌখিক সাক্ষ্য লিখিত দলিলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
৯। (খ) আইনজীবীর পেশাগত গোপনীয়তা ও প্রকাশে সীমাবদ্ধতা
আমার মক্কেল যখন জাল দলিল ব্যবহার করে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেন, তখন আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি তা আইনসম্মত এবং পেশাগত দায়িত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১২৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধারা ১২৬: এই ধারা অনুযায়ী, একজন আইনজীবী তার মক্কেলের পেশাগত সম্পর্ক চলাকালীন প্রাপ্ত কোনো যোগাযোগ বা তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নন। এটি মক্কেল এবং আইনজীবীর মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষার একটি মৌলিক নীতি, যা পেশাগত দায়িত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, এই ধারায় কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে:
১। অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে যোগাযোগ: যদি কোনো মক্কেল কোনো অপরাধ বা জালিয়াতি করার উদ্দেশ্যে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে বা পরামর্শ চায়, তবে সেই যোগাযোগ গোপনীয়তার আওতায় পড়ে না।
২। অপরাধ সংঘটনের পর প্রাপ্ত তথ্য: যদি কোনো অপরাধ বা জালিয়াতি সংঘটিত হওয়ার পর কোনো মক্কেল তার আইনজীবীকে এ বিষয়ে জানায়, তাহলে সেই তথ্যও গোপনীয়তার আওতায় পড়ে না।
৩। মক্কেলের সম্মতি: যদি মক্কেল নিজেই তথ্য প্রকাশের জন্য সম্মতি দেয়, তবে আইনজীবী তা প্রকাশ করতে পারেন।
আমার ক্ষেত্রে, যেহেতু মক্কেল আমাকে একটি জাল দলিল ব্যবহার করে সম্পত্তি দখলের মতো একটি অপরাধমূলক কাজ করার উদ্দেশ্যে মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেছেন, তাই এটি ধারা ১২৬ এর প্রথম ব্যতিক্রমের আওতায় পড়ে। অর্থাৎ, এই যোগাযোগটি আইনগতভাবে গোপনীয়তার সুরক্ষা পায় না।
অতএব, আমি যখন এই বিষয়টি স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে জানিয়েছি, তখন আমি কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। বরং, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমি একটি সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে এবং আইন পেশাকে রক্ষা করেছি। এটি আইনজীবীর পেশাগত নীতি ও নৈতিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।