- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০
বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০। প্রশ্ন নং ৩ এর ক ও খ
৩। (ক) The Specific Relief Act, 1877 এর অধীনে মঞ্জুরযোগ্য বিভিন্ন প্রকার সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার প্রতিকার পেতে হলে কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হবে? এ ধরণের মোকদ্দমায় কী কী সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বিকল্প হিসাবে প্রার্থনা করা যায়?
(খ) X ও Y তিন মাসের মধ্যে একটি ব্যবসা করার লক্ষ্যে অংশীদারী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই Y অংশীদার হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। চুক্তিটিতে অংশীদারীত্বের মেয়াদকাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। X এর প্রার্থনার প্রেক্ষিতে Y এর বিরুদ্ধে চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা যাবে কি? যুক্তিসহ উত্তর দিন।
এখানে Specific Relief Act, 1877 এর অধীনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার এবং একটি অংশীদারী চুক্তির উদাহরণ নিয়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
ক) সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের প্রকারভেদ এবং স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি বলবৎকরণ
Specific Relief Act, 1877 অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রধানত পাঁচ ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (Specific Relief) মঞ্জুর করা হয়:
Possession of Property (সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার): কোনো ব্যক্তি যদি তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থেকে বেআইনিভাবে বেদখল হয়, তাহলে এই আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী সে আদালতের মাধ্যমে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে।
Specific Performance of Contracts (চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন): কোনো চুক্তি যদি যথাযথভাবে সম্পাদিত না হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তা সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারে। এটি আইনের ১০ থেকে ২১ ধারায় বর্ণিত আছে।
Rectification of Instruments (দলিল সংশোধন): যখন কোনো চুক্তিতে বা দলিলে প্রতারণা বা পারস্পরিক ভুলের কারণে কিছু ভুল বা বাদ পড়ে যায়, তখন তা সংশোধনের জন্য এই প্রতিকার চাওয়া হয় (আইনের ৩১ থেকে ৩৩ ধারা)।
Rescission of Contracts (চুক্তি বাতিল): কোনো পক্ষ যদি চুক্তি ভঙ্গের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সে আদালত থেকে চুক্তিটি বাতিল করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারে (আইনের ৩৫ থেকে ৩৮ ধারা)।
Injunctions (নিষেধাজ্ঞা): এই প্রতিকার হলো আদালতের এমন একটি আদেশ, যা কোনো পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট কাজ করা থেকে বিরত রাখে। এটি অস্থায়ী বা স্থায়ী হতে পারে (আইনের ৫২ থেকে ৫৭ ধারা)।
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার শর্তাবলি:
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হয়:
চুক্তির বৈধতা: চুক্তিটি অবশ্যই একটি বৈধ চুক্তি হতে হবে, যা আইনের সকল শর্ত পূরণ করে।
চুক্তির শর্তাবলি সুনির্দিষ্ট: চুক্তির সকল শর্ত, যেমন - সম্পত্তির বর্ণনা, বিক্রয়ের মূল্য, এবং সম্পাদনের সময়, অবশ্যই সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
আবেদনকারীর প্রস্তুতির প্রমাণ: যিনি চুক্তিটি বলবৎ করতে চাইছেন, তাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি চুক্তির অধীনে তার অংশের দায়িত্ব পালনে সর্বদা প্রস্তুত ও ইচ্ছুক ছিলেন।
অর্থের অপ্রতুলতা: আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে চুক্তি ভঙ্গের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।
এ ধরনের মোকদ্দমায় বিকল্প প্রতিকার:
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার পাশাপাশি, একজন বাদী বিকল্প হিসাবে নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো প্রার্থনা করতে পারেন:
ক্ষতিপূরণ (Compensation): যদি আদালত চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার আদেশ না দেন, তাহলে বাদী চুক্তি ভঙ্গের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন।
দলিল সংশোধন (Rectification of document): যদি চুক্তিতে কোনো ভুল থাকে, তাহলে একই মোকদ্দমায় সেই ভুল সংশোধন করে চুক্তিটি বলবৎ করার আবেদন করা যেতে পারে।
বিকল্প হিসেবে চুক্তি বাতিল (Rescission of contract in the alternative): যদি চুক্তিটি কোনো কারণে সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প হিসেবে চুক্তিটি বাতিল করার আবেদনও করা যেতে পারে।
খ) অংশীদারী চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎকরণ
না, X এর প্রার্থনার প্রেক্ষিতে Y এর বিরুদ্ধে চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা যাবে না। এর কারণগুলো হলো:
১. ব্যক্তিগত প্রকৃতির চুক্তি (Contract of Personal Nature):
অংশীদারী চুক্তি (Partnership Agreement) হলো একটি ব্যক্তিগত প্রকৃতির চুক্তি। এই চুক্তিতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা অপরিহার্য।
Specific Relief Act, 1877 এর ২১ (খ) ধারা অনুযায়ী, যে চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত প্রকৃতির, আদালত সাধারণত সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার আদেশ দেন না। কারণ আদালত জোর করে দুইজনের মধ্যে এমন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারে না যেখানে একজন কাজ করতে ইচ্ছুক নয়।
২. চুক্তির মেয়াদ অনির্দিষ্ট (Indefinite Term):
প্রশ্নমতে, চুক্তিতে অংশীদারীত্বের মেয়াদকাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। এটি কেবল তিন মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করার কথা বলেছে। যদি কোনো চুক্তি নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়া হয়, তাহলে তা যে কোনো পক্ষ যে কোনো সময় বাতিল করতে পারে।
আইনের ১৪(ক) ধারা অনুযায়ী, এমন কোনো চুক্তি যা যে কোনো পক্ষ কর্তৃক বাতিলযোগ্য, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা যাবে না। যেহেতু Y এর পক্ষে এই চুক্তি থেকে সরে আসার স্বাধীনতা রয়েছে, তাই X এর পক্ষে তা জোর করে বলবৎ করা সম্ভব নয়।
৩. বিকল্প প্রতিকার হিসেবে ক্ষতিপূরণ (Alternative Remedy of Compensation):
এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে, যদি এক পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সাধারণত আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে তার ক্ষতি পূরণ করতে পারে। আদালত বিবেচনা করবে যে, Y এর অস্বীকৃতির কারণে X এর যে ক্ষতি হয়েছে, তা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব।
সুতরাং, উপরোক্ত কারণগুলোর ভিত্তিতে, X এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিকার হবে Y এর বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা করা, কিন্তু চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা নয়।