- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ প্রশ্ন নং ৮
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০। প্রশ্ন নং ৮ এর ক ও খ
৮। (ক) “যথাযথ হেফাজত থেকে উপস্থাপিত ৩০ বৎসরের পুরাতন দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রমাণিত।”—সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা করুন।
(খ) The Evidence Act, 1872 অনুযায়ী দলিলের সংজ্ঞা দিন এবং দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন ।
আলোচনা
(ক) ৩০ বছরের পুরাতন দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রমাণিত
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৯০ ধারার বিধান অনুযায়ী, যদি কোনো দলিল ৩০ বছর বা তার বেশি পুরোনো হয় এবং তা যথাযথ হেফাজত থেকে উপস্থাপিত হয়, তাহলে আদালত স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি প্রমাণিত বলে ধরে নিতে পারেন। এর অর্থ হলো, আদালত অনুমান করতে পারেন যে:
১. দলিলের উপর যে স্বাক্ষর আছে তা যিনি দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়, তিনি নিজেই দিয়েছেন।
২. দলিলের যে অংশ হাতে লেখা আছে তা সেই ব্যক্তির হাতের লেখা, যিনি লিখেছেন বলে দাবি করা হয়।
৩. দলিলের উপর যে সিলমোহর বা সীল আছে, তা যথাযথভাবে লাগানো হয়েছে।
৪. দলিলের সম্পাদন ও প্রত্যয়ন (execution and attestation) আইন অনুযায়ী হয়েছে।
এখানে "যথাযথ হেফাজত" বলতে সেই স্থান বা ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যেখানে বা যার কাছে স্বাভাবিক অবস্থায় দলিলটি থাকার কথা। যেমন, কোনো পারিবারিক দলিল পরিবারের প্রধান বা পরিবারের পক্ষে কোনো আইনি প্রতিনিধির কাছে থাকতে পারে। যদি আদালত সন্তুষ্ট হন যে দলিলটি এমন কোনো স্থান বা ব্যক্তির কাছে থেকে এসেছে, তবে দলিলটির সত্যতা প্রমাণের জন্য আলাদা করে সাক্ষ্য বা প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে, মনে রাখতে হবে, এই বিধানটি একটি অনুমান (presumption) মাত্র, এবং এর বিরুদ্ধে প্রমাণ হাজির করে দলিলটি মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব।
(খ) দলিলের সংজ্ঞা এবং বিষয়বস্তু প্রমাণের পদ্ধতি
দলিলের সংজ্ঞা
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ ধারায় দলিল (Document) এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো বিষয় প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে, কোনো অক্ষর, সংখ্যা বা চিহ্নের সাহায্যে বা একাধিক চিহ্নের সমন্বয়ে কোনো বস্তুর উপর কিছু প্রকাশ বা বর্ণনা করা হলে তাকে দলিল বলা হয়। যেমন, কোনো চুক্তিপত্র, উইল, মানচিত্র, ছবি বা কোনো লোহা বা পাথরের উপর খোদাই করা লেখা সবই দলিলের উদাহরণ। সহজ কথায়, যা কোনো কিছুকে স্থায়ীভাবে রেকর্ড করে এবং ভবিষ্যতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা-ই দলিল।
দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণের পদ্ধতি
সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী, একটি দলিলের বিষয়বস্তু দুই উপায়ে প্রমাণ করা যায়:
১. প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary Evidence): এটি হলো মূল দলিলটি। যখন মূল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তখন তাকে প্রাথমিক সাক্ষ্য বলা হয়। আইনের ৬৪ ধারা অনুযায়ী, সাধারণত কোনো দলিলের বিষয়বস্তু প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারাই প্রমাণ করতে হয়। এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী প্রমাণ।
২. মাধ্যমিক সাক্ষ্য (Secondary Evidence): যখন কোনো কারণে মূল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না, তখন দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণের জন্য মাধ্যমিক সাক্ষ্য ব্যবহার করা হয়। মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসেবে যা যা ব্যবহার করা যায় তা আইনের ৬৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে:
১. মূল দলিলের অনুলিপি বা কপি যা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছে (যেমন ফটোকপি) এবং সেই প্রক্রিয়ায় তৈরি অনুলিপিগুলোর সঙ্গে মূল দলিলের কোনো পার্থক্য নেই।
২. মূল দলিল থেকে তৈরি করা অনুলিপি যা হাতে লেখা বা তুলনামূলকভাবে তৈরি।
৩. মূল দলিলের সঙ্গে তুলনা করে তৈরি করা অনুলিপি।
৪. কোনো পক্ষকে প্রদত্ত দলিলের প্রতিলিপি (Counterpart of documents)।
৫. মূল দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌখিক বর্ণনা।
আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতেই কেবল মাধ্যমিক সাক্ষ্য দিয়ে দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ করা যায়, যেমন:
১. মূল দলিলটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে।
২. মূল দলিলটি যদি প্রতিপক্ষের কাছে থাকে এবং তারা তা উপস্থাপন করতে অস্বীকার করে।
৩. মূল দলিলটি যদি এমন কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে থাকে যারা তা আদালতে আনতে বাধ্য নয়।
৪. মূল দলিলটি যদি কোনো সরকারি দলিল হয়।
৫. মূল দলিলটি যদি সহজে আদালতে আনা সম্ভব না হয়।
সুতরাং, দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণের জন্য প্রথমে প্রাথমিক সাক্ষ্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, এবং বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতেই কেবল মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়।