- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান পরীক্ষা ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ প্রশ্ন নং ১১
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০। প্রশ্ন নং ১১ এর ক ও খ
১১। (ক) আইনগত অক্ষমতা কী? আইনগত অক্ষমতা কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত দায়ের করার নির্ধারিত তামাদি মেয়াদকে কিভাবে প্রভাবিত করে? ব্যাখ্যা করুন।
(খ) ধরুন, একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করার নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ শেষ ছিল ১৪/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ। ১৫/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ দেওয়ানী আদালত খোলা ছিল এবং সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারক ঐদিন পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ১৫/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখে বাদীর বাবাও মৃত্যুবরণ করেন। ১৩/১০/২০২০ ও ১৪/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। ১৬/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী বিশেষ ছুটি ছিল। ১২/১০/২০২০ ও ১৭/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ কর্মদিবস ছিল। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট আইন উল্লেখে মোকদ্দমাটি দায়ের করার সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করুন।
আইনগত অক্ষমতা এবং তামাদি আইনের উপর এর প্রভাব
![]() |
আইনগত অক্ষমতা: নাবালকত্ব |
![]() |
আইনগত অক্ষমতা: উম্মাদ বা পাগলত্ব |
![]() |
আইনগত অক্ষমতা: মূর্খ বা নির্বোধত্ব |
আইনগত অক্ষমতা কী?
আইনগত অক্ষমতা (Legal disability) বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়, যখন কোনো ব্যক্তি আইন দ্বারা নির্ধারিত কিছু কাজ করতে বা অধিকার প্রয়োগ করতে অক্ষম হন। তামাদি আইনের প্রেক্ষাপটে, এটি মূলত এমন কিছু বিশেষ পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে, যা একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত দায়ের করা থেকে বিরত রাখে।
তামাদি আইন, ১৯০৮ (Limitation Act, 1908) অনুযায়ী, নিম্নলিখিত তিনটি অবস্থাকে আইনগত অক্ষমতা হিসেবে গণ্য করা হয়:
১. নাবালকত্ব (Minority): যখন কোনো ব্যক্তি নাবালক থাকেন, অর্থাৎ তার বয়স ১৮ বছরের কম।
২. উন্মাদ বা পাগলত্ব (Insanity): যখন কোনো ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থতার কারণে নিজের ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
৩. মূর্খ বা নির্বোধত্ব (Idiocy): যখন কোনো ব্যক্তি জন্মগত বা অন্য কোনো কারণে মানসিকভাবে এমন অক্ষম হন যে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
আইনগত অক্ষমতা কীভাবে তামাদি মেয়াদকে প্রভাবিত করে?
তামাদি আইনের ধারা ৬ (Section 6) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত দায়ের করার নির্ধারিত সময়সীমা শুরুর দিন থেকে আইনগতভাবে অক্ষম থাকেন, তাহলে তার এই অক্ষমতা শেষ হওয়ার পর থেকে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
এই ধারা অনুযায়ী, আইনগত অক্ষমতা নির্ধারিত তামাদি মেয়াদকে নিম্নোক্তভাবে প্রভাবিত করে:
১. মেয়াদ স্থগিতকরণ: যদি কোনো ব্যক্তি তামাদি মেয়াদ শুরু হওয়ার দিন থেকেই আইনগতভাবে অক্ষম হন, তাহলে তার অক্ষমতা যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে না। অর্থাৎ, তার অক্ষমতা শেষ হওয়ার পর থেকে নতুন করে মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
২. আংশিক অক্ষমতা: যদি কোনো ব্যক্তি মামলা দায়ের করার মেয়াদের মাঝখানে আইনগতভাবে অক্ষম হন, তাহলে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। মেয়াদের গণনা শুরু হয়ে যাবে এবং তা চলতে থাকবে। ধারা ৬ শুধুমাত্র তখনই প্রযোজ্য হয় যখন তামাদির মেয়াদ শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই ব্যক্তি অক্ষম হন।
৩.একাধিক অক্ষমতা: যদি কোনো ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক অক্ষমতার শিকার হন (যেমন: নাবালক ও উন্মাদ), তাহলে সব কয়টি অক্ষমতা শেষ হওয়ার পর থেকেই নতুন করে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
৪. অক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু: যদি কোনো ব্যক্তি তার অক্ষমতা শেষ হওয়ার আগেই মারা যান, তাহলে তার আইনি উত্তরাধিকারীর (legal representative) ক্ষেত্রে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে ওই অক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর দিন থেকে।
৫. সাক্ষী বা প্রতিপাদকের ক্ষেত্রে: কোনো সাক্ষ্য বা প্রতিপাদন (acknowledgment) যদি কোনো অক্ষম ব্যক্তি কর্তৃক করা হয়, তবে সে ক্ষেত্রেও এই ধারা প্রযোজ্য হবে।
এই বিধানের মূল উদ্দেশ্য হলো, একজন অক্ষম ব্যক্তিকে তার আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা। এটি নিশ্চিত করে যে, একজন ব্যক্তি যখন তার অধিকার রক্ষার জন্য সক্ষম হবে, তখনই যেন তাকে আদালতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
১১. খ) মোকদ্দমা দায়েরের সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ
এই মোকদ্দমাটি দায়ের করার সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণের জন্য আমাদের তামাদি আইন, ১৯০৮ (Limitation Act, 1908)-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা এবং সাধারণ ছুটির নিয়মাবলি বিবেচনা করতে হবে।
এখানে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী:
মামলার নির্ধারিত তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ: ১৪/১০/২০২০ খ্রি.।
১৩/১০/২০২০ ও ১৪/১০/২০২০ খ্রি. : সাপ্তাহিক ছুটি।
১৬/১০/২০২০ খ্রি. : সরকার ঘোষিত বিশেষ ছুটি।
আইনের বিশ্লেষণ:
১. তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৪ (Section 4): এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্ত দায়ের করার নির্ধারিত তামাদি মেয়াদ কোনো আদালতের ছুটির দিনে শেষ হয়, তাহলে আদালত যেদিন প্রথমবার আবার খোলা হয়, সেদিন তা দায়ের করা যাবে।
১. ১৪/১০/২০২০ খ্রি. তারিখটি ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। তাই, তামাদি আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী, মোকদ্দমাটি ১৫/১০/২০২০ তারিখে দায়ের করা যেত।
২. ১৫/১০/২০২০ তারিখে বিচারক ছুটিতে ছিলেন: এখানে বলা হয়েছে যে ১৫/১০/২০২০ তারিখে আদালত খোলা ছিল, কিন্তু বিচারক ছুটিতে ছিলেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, মামলা দাখিলের জন্য বিচারকের উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। যদি আদালত খোলা থাকে এবং মামলা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন, তবে মামলা দায়ের করা সম্ভব। তাই, বিচারকের ছুটি থাকা সত্ত্বেও ১৫/১০/২০২০ তারিখটি কর্মদিবস হিসেবে গণ্য হবে।
৩. বাদীর বাবার মৃত্যু: ১৫/১০/২০২০ তারিখে বাদীর বাবার মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি তামাদি আইন অনুযায়ী কোনো ধরনের আইনগত অক্ষমতা (Legal disability) নয়। তাই, এই ঘটনাটি তামাদি মেয়াদকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করবে না।
৪. ১৬/১০/২০২০ তারিখে বিশেষ ছুটি: যেহেতু ১৫/১০/২০২০ তারিখটি কর্মদিবস ছিল এবং মোকদ্দমাটি ওই দিন দায়ের করার সুযোগ ছিল, তাই ১৬/১০/২০২০ তারিখের বিশেষ ছুটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, তামাদি আইনের ধারা ৪ তখনই প্রযোজ্য হয় যখন তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটিই ছুটির দিন হয়। এখানে, ১৪/১০/২০২০ তারিখ ছিল ছুটির দিন, কিন্তু ১৫/১০/২০২০ তারিখ ছুটির দিন ছিল না।
সিদ্ধান্ত:
তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ৪ অনুযায়ী, মোকদ্দমাটি ১৪/১০/২০২০ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেহেতু ১৪/১০/২০২০ তারিখটি সাপ্তাহিক ছুটি ছিল, তাই নির্ধারিত মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তী কর্মদিবস অর্থাৎ ১৫/১০/২০২০ পর্যন্ত গড়াবে। যেহেতু ১৫/১০/২০২০ তারিখে আদালত খোলা ছিল, সেহেতু ঐ দিনই মামলাটি দায়ের করার সর্বশেষ সুযোগ ছিল।
অতএব, এই মোকদ্দমাটি দায়ের করার সর্বশেষ তারিখ ছিল ১৫/১০/২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।