- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিশিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১
১. চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন (Specific Performance of Contracts) সংক্রান্ত:
সম্পত্তির চুক্তি: 'ক' 'খ' এর সাথে একটি জমি বিক্রির চুক্তি করেছে এবং 'খ' চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অগ্রিম অর্থও প্রদান করেছে। কিন্তু 'ক' এখন জমি বিক্রি করতে অস্বীকার করছে। 'খ' কি 'ক' এর বিরুদ্ধে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য মামলা করতে পারবে?
২. ব্যক্তিগত সেবা চুক্তি:
একজন বিখ্যাত গায়ক একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। শেষ মুহূর্তে তিনি গান গাইতে অস্বীকার করেন। আয়োজকরা কি তার বিরুদ্ধে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য মামলা করতে পারবেন?
৩. ক্ষতিপূরণের পর্যাপ্ততা:
একটি চুক্তি ভঙ্গের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট প্রতিকার হলে, আদালত কি চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করবে? কখন আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করে না?
আলোচনা
১. সম্পত্তির চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (Specific Relief Act, 1877) ধারা ১২ অনুযায়ী 'খ' অবশ্যই 'ক'-এর বিরুদ্ধে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য মামলা করতে পারবে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭-এর ধারা ১২ অনুসারে, স্থাবর সম্পত্তি (যেমন জমি) বিক্রির চুক্তির ক্ষেত্রে, যদি কোনো পক্ষ চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে অস্বীকার করে, তবে অন্য পক্ষ আদালতের কাছে চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য আবেদন করতে পারে। আদালত সাধারণত এই ধরনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের আদেশ দেন, কারণ:
আর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়: জমি বা এই ধরনের স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে, এর মূল্য বা গুরুত্ব প্রায়ই আর্থিক পরিমাপের বাইরে থাকে। অনেক সময় এর অবস্থান, আকার বা অন্য কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এর কোনো বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। তাই শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণকে যথেষ্ট প্রতিকার হিসেবে ধরা হয় না।
চুক্তির শর্ত ভঙ্গ: যখন 'ক' চুক্তি করে এবং অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করে, তখন সে চুক্তির শর্ত পূরণ করতে আইনত বাধ্য। যদি সে তা না করে, তবে 'খ' এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে।
২. ব্যক্তিগত সেবা চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন (ধারা ২১)
না, আয়োজকরা গায়কের বিরুদ্ধে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য মামলা করতে পারবেন না।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭-এর ধারা ২১ অনুযায়ী, আদালত সাধারণত ব্যক্তিগত সেবা বা দক্ষতার উপর নির্ভরশীল চুক্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের আদেশ দেন না। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা: কাউকে জোর করে গান গাইতে বাধ্য করা হলে তা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন হতে পারে।
বাস্তবায়নের জটিলতা: আদালত কোনো ব্যক্তিকে জোর করে তার সেবা দিতে বাধ্য করতে পারে না এবং এটি কার্যকর করাও কঠিন। একজন গায়ককে জোর করে গান গাওয়াতে বাধ্য করা হলেও সেই পারফরম্যান্সের মান হয়তো আশানুরূপ হবে না।
ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট: এই ধরনের ক্ষেত্রে চুক্তি ভঙ্গের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণই সাধারণত যথেষ্ট প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। আয়োজকরা অন্য একজন গায়ককে দিয়ে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে পারবেন এবং চুক্তির কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা মামলা করে আদায় করতে পারবেন।
৩. ক্ষতিপূরণের পর্যাপ্ততা এবং কখন আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করে না (ধারা ২১)
একটি চুক্তি ভঙ্গের জন্য যদি আর্থিক ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট প্রতিকার হয়, তাহলে আদালত সাধারণত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করে না। এটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের মূল নীতিগুলোর একটি।
কখন আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করে না:
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭-এর ধারা ২১ অনুসারে, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আদালত কোনো চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করবেন না। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:
যখন আর্থিক ক্ষতিপূরণই পর্যাপ্ত প্রতিকার: যদি কোনো চুক্তি এমন হয় যে এর ভঙ্গের জন্য শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট করা সম্ভব, তাহলে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করবে না। যেমন: একটি সাধারণ পণ্য সরবরাহের চুক্তি।
যে চুক্তির শর্তাবলী অনিশ্চিত: চুক্তির শর্তগুলো যদি অস্পষ্ট বা অনিশ্চিত হয়, যা কার্যকর করা কঠিন, তাহলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন না।
ব্যক্তিগত সেবা বা দক্ষতার উপর নির্ভরশীল চুক্তি: যেমনটি গায়কের উদাহরণে বলা হয়েছে, কোনো শিল্প, দক্ষতা বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল চুক্তি কার্যকর করা হলে তা ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
অত্যন্ত জটিল বা দীর্ঘমেয়াদী তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয় এমন চুক্তি: যদি কোনো চুক্তির কার্যসম্পাদন কার্যকর করতে আদালতের দীর্ঘ এবং বিস্তারিত তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়, তাহলে আদালত সাধারণত সেই আদেশ দেবেন না।
চুক্তিটি ন্যায়সঙ্গত নয়: যদি আদালতের কাছে মনে হয় যে চুক্তিটি কোনো একটি পক্ষের প্রতি অত্যন্ত অন্যায্য বা অবিচারমূলক, তাহলে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর নাও করতে পারে।
সাধারণভাবে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার শুধুমাত্র তখনই দেওয়া হয় যখন আইন অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ কোনো উপযুক্ত সমাধান নয়।