- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিশিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ২
নিষেধাজ্ঞামূলক প্রতিকার (Injunctive Relief) সংক্রান্ত:
১. স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction): 'ক' এর জমির উপর দিয়ে 'খ' জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করছে। 'ক' কি 'খ' এর বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করতে পারবে?
২. অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction): একটি দেওয়ানি মামলা চলাকালীন, বিবাদী মামলার বিষয়বস্তু বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাদী কি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারবে? আদালত কখন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করে?
৩. বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction): 'ক' তার জমিতে একটি দেয়াল নির্মাণ করেছে যা 'খ' এর আলো ও বাতাসের পথ রুদ্ধ করছে। 'খ' কি 'ক' এর বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করতে পারবে যাতে দেয়ালটি ভেঙে ফেলা হয়?
আলোচনা
১. স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction):
হ্যাঁ, 'ক' অবশ্যই 'খ' এর বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করতে পারবে।
কারণ:
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা একটি দেওয়ানি প্রতিকার যা আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে জারি করা হয়। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা 'মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করে' (on the merits) চূড়ান্তভাবে দেওয়া হয় এবং এটি বিবাদীকে কোনো নির্দিষ্ট কাজ করা থেকে চিরতরে বিরত রাখে।
প্রযোজ্য আইন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (The Specific Relief Act, 1877) এর ধারা ৫৪ অনুযায়ী, যখন কোনো চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ছাড়া অন্য কোনোভাবে বাদীর সম্পত্তির অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন আদালত বিবাদীর সেই ক্ষতির কারণ থেকে তাকে বিরত রাখার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
এই ক্ষেত্রে: 'ক' এর জমির উপর দিয়ে 'খ' জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করে 'ক' এর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার লঙ্ঘন করছে। এটি একটি সুস্পষ্ট অবৈধ কাজ যা 'ক' এর সম্পত্তির অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই, 'ক' আদালতে মামলা করে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারে যাতে 'খ' ভবিষ্যতে আর কখনো এই ধরনের কাজ করতে না পারে।
২. অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction):
হ্যাঁ, একটি দেওয়ানি মামলা চলাকালীন, বাদী বিবাদীর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারবে।
কারণ:
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হল মামলার চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বিবাদীকে কোনো নির্দিষ্ট কাজ করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার জন্য আদালতের একটি আদেশ। এর উদ্দেশ্য হল মামলার বিষয়বস্তুর স্থিতাবস্থা (status quo) বজায় রাখা, যাতে মামলা শেষ হওয়ার আগেই বাদী তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ না হারায়।
প্রযোজ্য আইন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৫৩ অনুযায়ী, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদালতের আদেশের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এর প্রক্রিয়া দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (C.P.C.) এর অর্ডার ৩৯, রুল ১ ও ২ দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই ক্ষেত্রে: বিবাদী যখন মামলার বিষয়বস্তু বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন বাদী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারে। আদালত যদি এই নিষেধাজ্ঞা না দেয়, তাহলে মামলায় জয়ী হলেও বাদী তার প্রতিকার (যেমন, সম্পত্তিটি ফিরে পাওয়া) থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
আদালত কখন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করে?
আদালত সাধারণত তিনটি প্রধান শর্ত পূরণ হলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করে:
প্রাথমিক দৃষ্টিতে মামলা (Prima Facie Case): বাদীর মামলাটি শক্তিশালী এবং এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আদালতকে প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ, বাদীর দাবির পক্ষে একটি যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে।
অপূরণীয় ক্ষতি (Irreparable Loss): বাদী যদি নিষেধাজ্ঞা না পায়, তাহলে তার এমন ক্ষতি হবে যা পরবর্তীতে শুধু অর্থের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে, বিবাদী যদি সম্পত্তিটি বিক্রি করে দেয়, তাহলে তা পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব।
সুবিধার ভারসাম্য (Balance of Convenience): আদালতকে দেখতে হবে যে, নিষেধাজ্ঞা জারি করলে বিবাদীর ক্ষতির চেয়ে তা জারি না করলে বাদীর ক্ষতি বেশি হবে কি না। অর্থাৎ, আদালত উভয় পক্ষের সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
৩. বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction):
হ্যাঁ, 'খ' অবশ্যই 'ক' এর বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করতে পারবে যাতে দেয়ালটি ভেঙে ফেলা হয়।
কারণ:
বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা এমন একটি আদেশ যার মাধ্যমে আদালত বিবাদীকে এমন কোনো কাজ করতে বাধ্য করে যা সে করতে অস্বীকার করেছে, বা এমন কোনো কাজকে উল্টে দেয় যা সে ভুলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি সাধারণত এমন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেখানে কোনো অবৈধ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং সেই অবস্থার প্রতিকার করতে একটি ইতিবাচক কাজ করা প্রয়োজন।
প্রযোজ্য আইন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৫৫ অনুযায়ী, যখন কোনো কাজ করে কোনো চুক্তি বা অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, এবং সেই লঙ্ঘন সংশোধন করা বা সেই লঙ্ঘনের ফলস্বরূপ সৃষ্ট ভুলকে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন, তখন আদালত বাধ্যবাধকতামূলক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে পারে।
এই ক্ষেত্রে: 'ক' ইতোমধ্যেই দেয়ালটি নির্মাণ করে 'খ' এর আলো এবং বাতাসের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এটি একটি সম্পন্ন হওয়া (completed) কাজ। তাই, এই ভুলটি সংশোধন করার জন্য আদালত 'ক' কে দেয়ালটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে একটি বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। এটি একটি নিবারক (prohibitory) নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং একটি বাধ্যতামূলক (compulsory) আদেশ।