- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিশিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ৭
১. অভিযোগপত্র (Charge-sheet) ও তদন্ত (Investigation) সংক্রান্ত:
ক। একটি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। কিন্তু ভুক্তভোগী মনে করেন যে তদন্তে ত্রুটি ছিল এবং আরও কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর প্রতিকার কি?
![]() |
১৭৩ অনুযায়ী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (Charge Sheet) বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন (Final Report) দাখিল করে |
খ। পুলিশ একজন ব্যক্তিকে কোনো প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রেপ্তার কি বৈধ? পুলিশ কখন পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারে?
গ। একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি আমলযোগ্য (Cognizable) অপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন। তিনি কি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারেন, নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করবেন?
আলোচনা
একটি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। কিন্তু ভুক্তভোগী মনে করেন যে তদন্তে ত্রুটি ছিল এবং আরও কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর প্রতিকার কি?
যখন পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৭৩ অনুযায়ী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (Charge Sheet) বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন (Final Report) দাখিল করে, তখন ভুক্তভোগী যদি মনে করেন যে তদন্তে ত্রুটি ছিল এবং আরও কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়নি, তবে তার জন্য প্রতিকার রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আদালতে একটি নারাজি পিটিশন (Naraji Petition) দাখিল করতে পারেন।
নারাজি পিটিশনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে পুলিশের তদন্ত ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। আদালত যদি ভুক্তভোগীর দাখিল করা তথ্য এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হন, তাহলে তারা নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:
অভিযোগপত্র বাতিল করে নতুন তদন্তের নির্দেশ: আদালত পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রটি বাতিল করে মামলাটির নতুন করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।
সরাসরি মামলা আমলে নেওয়া: আদালত যদি মনে করেন যে ভুক্তভোগীর দাখিল করা তথ্য যথেষ্ট শক্তিশালী, তাহলে তারা পুলিশের অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে সরাসরি মামলাটি আমলে নিতে পারেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
পুলিশ একজন ব্যক্তিকে কোনো প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রেপ্তার কি বৈধ? পুলিশ কখন পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারে? (ধারা ৪৬, ৫৪)
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৬ অনুযায়ী, পুলিশ সাধারণত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। তবে ধারা ৫৪ কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি নির্ধারণ করে দিয়েছে, যেখানে পুলিশ আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই একজন ব্যক্তিকে আইনত গ্রেপ্তার করতে পারে। এই ধরনের গ্রেপ্তারের বৈধতা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। যদি পুলিশ ধারা ৫৪-এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে তবে গ্রেপ্তারটি বৈধ।
পুলিশ নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারে:
আমলযোগ্য অপরাধ: কোনো ব্যক্তি যদি পুলিশের সামনে একটি আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable Offence) করে বা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আমলযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ থাকে।
চোরাই মাল: যদি কোনো ব্যক্তির দখলে কোনো এমন বস্তু থাকে যা চোরাই মাল বলে সন্দেহ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
পুলিশি দায়িত্বে বাধা: কোনো ব্যক্তি যদি পুলিশের আইনানুগ কাজে বাধা দেয় অথবা আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়।
সশস্ত্র বাহিনীর পলাতক: যদি কোনো ব্যক্তি সশস্ত্র বাহিনীর একজন পলাতক সদস্য বলে সন্দেহ করা হয়।
অন্যান্য স্থানের অপরাধী: যখন অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন কোনো অনুরোধ আসে যে কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধ করেছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি আমলযোগ্য (Cognizable) অপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন। তিনি কি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারেন, নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করবেন? (ধারা ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬)
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৫৪, ১৫৫, এবং ১৫৬ অনুযায়ী, একজন পুলিশ কর্মকর্তা যদি একটি আমলযোগ্য (Cognizable) অপরাধ সংঘটিত হতে দেখেন, তাহলে তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
ধারা ১৫৪: এই ধারা অনুযায়ী, আমলযোগ্য অপরাধের বিষয়ে প্রাপ্ত সকল তথ্য থানায় লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং পুলিশ কর্মকর্তা কোনো বিলম্ব না করে তদন্ত শুরু করতে পারেন।
ধারা ১৫৬: এই ধারা পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়াই আমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়। পুলিশ এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্ত শুরু করতে পারে।
এর বিপরীতে, অআমলযোগ্য (Non-Cognizable) অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হবে (ধারা ১৫৫)। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া অআমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত বা গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের নেই।