- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ৮
গ্রেপ্তার ও জামিন (Arrest & Bail) সংক্রান্ত:
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনের আবেদন করেছেন। আদালত কখন জামিন মঞ্জুর করতে পারে এবং কখন পারে না? জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচ্য বিষয়গুলি কি কি?
একজন অ-আমলযোগ্য (Non-cognizable) অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি কি জামিন পাওয়ার অধিকারী?
একজন মহিলাকে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে কি রাতে পুলিশ হেফাজতে রাখা যাবে?
![]() |
মহিলাকে সূর্যাস্তের পর বা সূর্যোদয়ের আগে গ্রেপ্তার করা যাবে না |
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুসারে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের আবেদন এবং আদালত কখন জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে পারে, সে বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
আদালত কখন জামিন মঞ্জুর করতে পারে এবং কখন পারে না?
আদালত সাধারণত ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৬, ৪৯৭ এবং ৪৯৮ অনুযায়ী জামিনের আবেদন বিবেচনা করে।
জামিন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে:
ধারা ৪৯৬: এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জামিনযোগ্য (Bailable) অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হন, তবে আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য। এখানে আদালতের কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন দিতে প্রস্তুত থাকেন, তবে আদালতকে জামিন মঞ্জুর করতে হবে।
ধারা ৪৯৭: এই ধারায় অ-জামিনযোগ্য (Non-bailable) অপরাধের জামিনের বিষয়ে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা বা না করা আদালতের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আদালত জামিন দিতে পারে, যেমন:
যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক, অসুস্থ বা মহিলা হন।
যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকে এবং এটি প্রমাণিত হয় যে তিনি ওই অপরাধ করেননি।
ধারা ৪৯৮: এই ধারাটি হাইকোর্ট বা দায়রা আদালতকে জামিন প্রদানের বিশেষ ক্ষমতা দেয়, যাকে অ্যাডভান্সড বেল (Anticipatory Bail) বা আগাম জামিন বলা হয়। যখন কোনো ব্যক্তি আশঙ্কা করেন যে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হতে পারে বা অ-জামিনযোগ্য অপরাধে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, তখন তিনি এই ধারার অধীনে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন।
জামিন নামঞ্জুর করার ক্ষেত্রে:
ধারা ৪৯৭: আদালত সাধারণত অ-জামিনযোগ্য (Non-bailable) অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন নামঞ্জুর করে। বিশেষ করে, যদি অভিযোগটি এমন হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ করেছেন, তবে আদালত সাধারণত জামিন দেয় না।
জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচ্য বিষয়গুলি কি কি?
জামিনের আবেদন বিবেচনা করার সময় আদালত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে। এইগুলি হলো:
অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুত্ব: অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি কতটা গুরুতর, তা আদালত বিবেচনা করে। গুরুতর অপরাধে জামিন সাধারণত দেওয়া হয় না।
অপরাধের প্রমাণ: আদালত দেখে যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি না।
অভিযুক্তের ব্যক্তিগত তথ্য: আদালত অভিযুক্তের চরিত্র, পূর্বের কোনো অপরাধের রেকর্ড এবং তার সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে।
পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা: আদালত নিশ্চিত হয় যে জামিন পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন কি না।
সাক্ষী বা প্রমাণ প্রভাবিত করার সম্ভাবনা: আদালত বিবেচনা করে যে অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে বা মামলার প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন কি না।
গণশৃঙ্খলার উপর প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে, জামিন দিলে সমাজে বা গণশৃঙ্খলায় কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না, তা-ও আদালত বিবেচনা করে।
একজন অ-আমলযোগ্য অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি কি জামিন পাওয়ার অধিকারী?
হ্যাঁ, ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ অনুযায়ী একজন অ-আমলযোগ্য (Non-cognizable) অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকারী। ধারা ৪৯৬ এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হন যা জামিনযোগ্য (Bailable), তাহলে তাকে জামিন পেতে হবে। যেহেতু অ-আমলযোগ্য অপরাধগুলো সাধারণত জামিনযোগ্য হয়ে থাকে, তাই একজন ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হলে জামিন পাওয়ার অধিকারী।
একজন মহিলাকে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে কি রাতে পুলিশ হেফাজতে রাখা যাবে?
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৬(৪) অনুসারে, বিশেষ কোনো পরিস্থিতি বাদে একজন মহিলাকে সূর্যাস্তের পর বা সূর্যোদয়ের আগে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যদি কোনো মহিলাকে জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে একজন মহিলা পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতি নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। সাধারণত, সূর্যাস্তের পর গ্রেপ্তারকৃত একজন মহিলাকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় না, কারণ এটি আইনের পরিপন্থী। তাকে দ্রুততম সময়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা জরুরি।