- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১০
সমন (Summons) ও পরোয়ানা (Warrant) সংক্রান্ত:
একজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। তিনি হাজির না হলে আদালত কি পদক্ষেপ নিতে পারে?
একটি জামিনযোগ্য (Bailable) অপরাধের জন্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পুলিশ কি আসামিকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করবে, নাকি জামিনের সুযোগ দেবে?
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ (Attachment of Property) সংক্রান্ত:
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালত থেকে পলাতক। আদালত কি তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারে? যদি পারে, কিভাবে?
এখানে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ (Code of Criminal Procedure)-এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী সমন, পরোয়ানা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ সম্পর্কিত আইনি বিধানগুলো আলোচনা করা হলো।
আলোচনা
সাক্ষীর সমন এবং পদক্ষেপ:
![]() |
সাক্ষীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা |
একজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হলে, যদি তিনি হাজির না হন, আদালত তার বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারে:
ধারা ৬৮: সমন জারির পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সমন সাধারণত পুলিশের একজন কর্মকর্তা, আদালতের কোনো কর্মকর্তা বা অন্য কোনো সরকারি কর্মচারী দ্বারা জারি করা হয়।
ধারা ৬৯: সমন কিভাবে জারি করতে হবে, তার বিস্তারিত প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। সাক্ষীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে সমনের কপি হস্তান্তর করা হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তার বাসস্থানে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো পুরুষ সদস্যের কাছে কপি রেখে আসা যেতে পারে।
ধারা ৭২: যদি কোনো সাক্ষী সমন পাওয়া সত্ত্বেও আদালত থেকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আদালত তার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য বা অ-জামিনযোগ্য পরোয়ানা (Warrant) জারি করতে পারে।
ধারা ৭৩: আদালত পরোয়ানা জারি করার পর যদি সাক্ষী হাজির না হন, তবে আদালত তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে। এই ধারায় আদালত এমন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করতে পারে, যাকে হাজির করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, সমন জারির পরও হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আদালতের একটি স্বাভাবিক পদক্ষেপ।
জামিনযোগ্য অপরাধের পরোয়ানা
একটি জামিনযোগ্য (Bailable) অপরাধের জন্য যখন পরোয়ানা জারি করা হয়, তখন পুলিশ আসামিকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করবে না, বরং তাকে জামিনের সুযোগ দেবে।
ধারা ৭৫: এই ধারা অনুযায়ী, পরোয়ানার মধ্যে অবশ্যই আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশনা, আদালত বা বিচারকের সীলমোহর এবং স্বাক্ষর থাকতে হবে।
ধারা ৭৬: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা। এই ধারা বলে, যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য অপরাধের জন্য পরোয়ানা জারি করা হয়, তখন সেই পরোয়ানায় একটি endorsement বা অনুমোদন থাকবে। এই অনুমোদন অনুযায়ী, আসামি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে বা মুচলেকা (bond) সম্পাদন করে জামিন নিতে রাজি হয়, তাহলে তাকে গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে। পুলিশ অফিসার পরোয়ানায় উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী জামিন মঞ্জুর করতে পারেন এবং আসামিকে জামিনে মুক্তি দিয়ে পরে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন। এর অর্থ হলো, পুলিশ আসামিকে সরাসরি কারাগারে পাঠাবে না, বরং জামিনের সুযোগ দেবে।
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ
যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালত থেকে পলাতক (Absconding) থাকে, তাহলে আদালত তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারে।
ধারা ৮৭: এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো আদালত মনে করে যে কোনো ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, পলাতক বা নিজেকে লুকিয়ে রাখছে, তাহলে আদালত তার বিরুদ্ধে একটি হুলিয়া (Proclamation) জারি করতে পারে। এই হুলিয়ায় ঘোষণা করা হয় যে ওই ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে আদালতে হাজির হতে হবে।
ধারা ৮৮: যদি হুলিয়া জারির পরও অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাজির না হন, তাহলে আদালত তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত (Attachment of Property) করার নির্দেশ দিতে পারে। এই বাজেয়াপ্তকরণ অস্থাবর বা স্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি হতে পারে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য আদালত নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে পারে:
অস্থাবর সম্পত্তি: বাজেয়াপ্ত করার জন্য তা আটক করা বা রিসিভার নিয়োগ করা।
স্থাবর সম্পত্তি: রাজস্ব কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা, রিসিভার নিয়োগ করা, বা উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে।
সুতরাং, যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক হন, আদালত প্রথমে হুলিয়া জারি করবে এবং তারপরেও যদি তিনি হাজির না হন, তাহলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেবে।