- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১৭
প্রমাণের বোঝা (Burden of Proof) সংক্রান্ত:
একটি ফৌজদারি মামলায়, প্রমাণের বোঝা কার উপর থাকে? এটি দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে কিভাবে ভিন্ন হয়?
'ক' দাবি করছে যে 'খ' তাকে ৫০০০০ টাকা ধার দিয়েছে। এখন 'ক' কি প্রমাণ করবে নাকি 'খ' প্রমাণ করবে যে সে টাকা পায়নি?
অনুমিতি (Presumption) সংক্রান্ত:
একটি বিবাহে ৭ বছর ধরে স্বামীর খোঁজ না পাওয়া গেলে, স্ত্রীকে কি বিধবা বলে গণ্য করা হবে? এটি কি ধরনের অনুমিতি?
একটি শিশুর বৈধতা সংক্রান্ত মামলায়, সন্তানের পিতার পরিচয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে আদালত কি ধরনের অনুমিতি নিতে পারে?
প্রমাণের বোঝা (Burden of Proof) এবং অনুমিতি (Presumption) সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলি আলোচনা করা হলো।
![]() |
ফৌজদারি মামলায় প্রমাণের বোঝা সর্বদা রাষ্ট্রপক্ষের (prosecution) ওপর থাকে |
প্রমাণের বোঝা (Burden of Proof)
প্রমাণের বোঝা বলতে বোঝানো হয়, কোনো একটি ঘটনা বা সত্যকে প্রমাণ করার আইনি দায়িত্ব কার ওপর বর্তায়। এটি মামলার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
ফৌজদারি মামলা:
ফৌজদারি মামলায় প্রমাণের বোঝা সর্বদা রাষ্ট্রপক্ষের (prosecution) ওপর থাকে। এটি বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১০১ ও ১০২ ধারা দ্বারা পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে (beyond a reasonable doubt) প্রমাণ করতে হবে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ বলেই বিবেচিত হয়, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অভিযুক্তের ওপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের কোনো দায়িত্ব নেই।
দেওয়ানি মামলা:
দেওয়ানি মামলায় প্রমাণের বোঝা ভিন্ন। এখানে প্রমাণের বোঝা এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষে স্থানান্তরিত হতে পারে। যে পক্ষ কোনো দাবি বা অভিযোগ উত্থাপন করে, প্রাথমিকভাবে তার ওপরই তা প্রমাণের দায়িত্ব বর্তায়। এটি সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১০১ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে, কোনো ঘটনা একবার প্রমাণিত হলে, তা অপ্রমাণ করার দায়িত্ব প্রতিপক্ষের ওপর চলে যায়। যেমন, যদি কোনো চুক্তিপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যিনি চুক্তির বৈধতা দাবি করছেন, তাকে তা প্রমাণ করতে হবে।
'ক' এবং 'খ'-এর মধ্যকার ধার সংক্রান্ত মামলা
'ক' দাবি করছে যে 'খ' তাকে ৫০০০০ টাকা ধার দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে, সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১০১ ধারা অনুযায়ী প্রমাণের বোঝা 'ক'-এর ওপর বর্তাবে।
আইনের নীতি হলো, "যে ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা অধিকার দাবি করে, তাকেই তা প্রমাণ করতে হবে।" যেহেতু 'ক' দাবি করছে যে 'খ' তাকে টাকা ধার দিয়েছে, 'ক'-কেই প্রমাণ করতে হবে যে এই লেনদেনটি ঘটেছে। 'খ'-এর ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না যে সে প্রমাণ করবে যে টাকা পায়নি, কারণ সে কোনো দাবি করছে না।
অনুমিতি (Presumption) সংক্রান্ত
অনুমিতি হলো এমন একটি আইনি ধারণা, যেখানে আদালত কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের পর কোনো ঘটনাকে সত্য বলে ধরে নেয়, যতক্ষণ না তার বিপরীত প্রমাণ উপস্থাপিত হয়।
স্বামীর নিখোঁজ এবং বিধবা গণ্য হওয়া:
একটি বিবাহে যদি স্বামী ৭ বছর ধরে নিখোঁজ থাকেন এবং তার কোনো খোঁজ না পাওয়া যায়, তবে স্ত্রীকে বিধবা বলে গণ্য করা হবে। এটি মৃত্যুর অনুমান (Presumption of Death) নামে পরিচিত। এটি সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১০৮ ধারা দ্বারা পরিচালিত হয়।
ধারা ১০৭: এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তিকে জীবিত প্রমাণ করা হয়, তবে তাকে জীবিত বলেই ধরে নেওয়া হয়, যদি না তার মৃত্যুর কোনো খবর থাকে।
ধারা ১০৮: এই ধারাটি ১০৭ ধারার ব্যতিক্রম। যদি কোনো ব্যক্তি ৭ বছর ধরে নিখোঁজ থাকে এবং তার বন্ধুরা বা পরিবারের সদস্যরা তার কোনো খবর না পায়, তবে আদালত ধরে নিতে পারে যে তিনি মারা গেছেন। এটি একটি আইনের অনুমান (Presumption of Law) এবং এটিকে অপ্রমাণ করার দায়িত্ব বিরোধী পক্ষের ওপর বর্তায়।
শিশুর বৈধতা সংক্রান্ত মামলা
একটি শিশুর বৈধতা সংক্রান্ত মামলায় যখন তার পিতার পরিচয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, আদালত সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১১২ ধারা অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমিতি গ্রহণ করে।
ধারা ১১২: এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো শিশু তার মায়ের সঙ্গে বৈধ বিবাহের সময়কালে বা বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর ২৮০ দিনের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, তবে সেই শিশুটিকে সেই ব্যক্তির বৈধ সন্তান বলেই ধরে নেওয়া হবে।
এই অনুমিতিটি অত্যন্ত শক্তিশালী। এই ধরনের মামলায়, এটি একটি চূড়ান্ত অনুমিতি (Conclusive Proof)। এর অর্থ হলো, এই অনুমিতির বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ গ্রহণযোগ্য নয়, যদি না এটি প্রমাণিত হয় যে সেই সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো যৌন সম্পর্ক হয়নি এবং সেই কারণে সন্তানের জন্ম হওয়া অসম্ভব।