- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১১
রায় ও দণ্ড (Judgment & Sentence) সংক্রান্ত:
আদালত একজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। দণ্ড প্রদানের আগে আদালত কি অভিযুক্তের কোনো বক্তব্য শুনতে বাধ্য?
একজন ব্যক্তি একই অপরাধের জন্য একাধিকবার দণ্ডিত হতে পারেন কি? (ধারা ৪০৩)
আপিল ও রিভিশন (Appeal & Revision) সংক্রান্ত:
একজন ব্যক্তি নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট। তিনি কি আপিল করতে পারবেন? আপিলের সময়সীমা কত?
একটি মামলায় হাইকোর্ট রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কখন?
আলোচনা
একজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার পর দণ্ড প্রদানের আগে আদালত অভিযুক্তের বক্তব্য শুনতে বাধ্য। একই অপরাধের জন্য একজন ব্যক্তিকে একাধিকবার দণ্ড দেওয়া যায় না। নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন এবং এর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। হাইকোর্ট বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
রায় ও দণ্ড (Judgment & Sentence)
দণ্ড প্রদানের আগে অভিযুক্তের বক্তব্য
![]() |
একজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার পর দণ্ড প্রদানের আগে আদালত তার বক্তব্য শুনতে বাধ্য |
একজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার পর দণ্ড প্রদানের আগে আদালত তার বক্তব্য শুনতে বাধ্য। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ২৬৫জি-এর অধীনে একটি বাধ্যতামূলক বিধান। এই ধারার মূল উদ্দেশ্য হলো, অভিযুক্ত যেন তার নিজের সম্পর্কে এবং অপরাধের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে পারে, যা আদালতকে একটি যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত দণ্ড নির্ধারণে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ, অভিযুক্ত তার পারিবারিক অবস্থা, বয়স, স্বাস্থ্য, বা অপরাধের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে পারেন। এই তথ্যগুলো দণ্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একই অপরাধে একাধিকবার দণ্ড
না, একজন ব্যক্তি একই অপরাধের জন্য একাধিকবার দণ্ডিত হতে পারেন না। এটি দ্বৈত দণ্ড বা 'ডাবল জিওপার্ডি' (Double Jeopardy) নামে পরিচিত, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০৩-এর অধীনে সুরক্ষিত। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি একবার কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত বা খালাস পান, তাহলে তাকে একই অপরাধের জন্য পুনরায় বিচার করা যাবে না। এই নীতিটি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে এবং বিচারপ্রার্থীর অধিকার রক্ষা করে।
আপিল ও রিভিশন (Appeal & Revision)
আপিল করার অধিকার ও সময়সীমা
একজন ব্যক্তি নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট হলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০৪ থেকে ৪২৬ পর্যন্ত আপিলের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন, হাইকোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে রাষ্ট্রপক্ষকে অনুমতি নিতে হয় (ধারা ৪১৭)। আপিলের জন্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। যেমন:
১. জেলা জজ বা দায়রা জজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময়সীমা হলো ৬০ দিন।
২. ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময়সীমা হলো ৩০ দিন।
৩. হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময়সীমা হলো ৯০ দিন।
এই সময়সীমাগুলো আপিল দায়েরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাইকোর্টের রিভিশন ক্ষমতা
হাইকোর্ট ডিভিশন ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৩৯ অনুযায়ী যেকোনো নিম্ন আদালতের নথি তলব করে তার কার্যকারিতা, বৈধতা বা যথার্থতা পরীক্ষা করতে পারে। এই ক্ষমতাকে রিভিশন বলে। হাইকোর্ট এই ক্ষমতা সাধারণত তখন প্রয়োগ করে যখন আপিল করার সুযোগ থাকে না অথবা যখন কোনো গুরুতর আইনগত ত্রুটি বা অবিচার ঘটেছে বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নিম্ন আদালত আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে বা তাদের ক্ষমতার বাইরে কোনো আদেশ জারি করে, তখন হাইকোর্ট রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই আদেশ সংশোধন বা বাতিল করতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তগুলোর উপর উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধান বজায় রাখা।