- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ প্রশ্ন নং ৫
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০। প্রশ্ন নং ৫ এর ক ও খ
৫। (ক) “ফৌজদারী মামলার তদন্তে পুলিশের ক্ষমতা অবারিত।”—তদন্তে পুলিশের জন্য অনুসরণীয় আইন উল্লেখপূর্বক The Code of Criminal Procedure, 1898 এর সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে মন্তব্যটি পর্যালোচনা করুন।
(খ) X ঢাকা মহানগরের মতিঝিলে এক খন্ড জমি নিয়ে Y এর সাথে বিরোধের সূত্রে পরবর্তী ১৫ দিন পর শান্তিভঙ্গ রোধের প্রার্থনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা বরাবরে একটি আবেদন দাখিল করলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ১৪৪ ধারাধীনে আদেশ দ্বারা পরবর্তী ৩ মাস Y কে নালিশী জমিতে প্রবেশ থেকে বিরত থাকার এবং শান্তি বজায় রাখার নির্দেশনা জারি করেন। Y এর আইনজীবী হিসাবে আপনার আইনগত পদক্ষেপ কী হবে? জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদেশের বিরুদ্ধে আইনানুগ যুক্তি প্রস্তুত করুন।
৫। (ক) ফৌজদারী মামলার তদন্তে পুলিশের ক্ষমতা অবারিত'—উক্তিটি আংশিকভাবে সত্য, কারণ পুলিশের ক্ষমতা ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পুলিশকে তদন্তের সময় অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তাদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ বা সীমাহীন নয়, বরং সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হয়।
তদন্তে পুলিশের জন্য অনুসরণীয় আইন
ফৌজদারী মামলার তদন্তে পুলিশের ক্ষমতা ও পদ্ধতি প্রধানত The Code of Criminal Procedure, 1898 (CrPC) এবং Police Regulations Bengal, 1943 (PRB) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও, সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এবং বিশেষ আইন যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনেও কিছু বিশেষ ক্ষমতা ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
CrPC, 1898 এর সংশ্লিষ্ট বিধান:
ধারা ১৫৪ (FIR): আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশকে লিখিত বা মৌখিক এজাহার (First Information Report - FIR) গ্রহণ করতে হবে। এজাহার ছাড়া পুলিশ সাধারণত তদন্ত শুরু করতে পারে না।
ধারা ১৫৬ (তদন্তের ক্ষমতা): ধারা ১৫৪ অনুযায়ী এজাহার দায়েরের পর পুলিশ বিনা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে আমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত করতে পারে। এই ধারার অধীনে পুলিশকে অপরাধস্থল পরিদর্শন, সাক্ষ্য সংগ্রহ, সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার এবং অন্যান্য তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ধারা ১৬০ (সাক্ষীকে তলব): পুলিশ সাক্ষীকে তাদের সামনে হাজির হওয়ার জন্য লিখিত আদেশ দিতে পারে। তবে, ১৫ বছরের কম বয়সী বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী কোনো ব্যক্তি, কোনো নারী বা অসুস্থ ব্যক্তিকে তাদের বাসস্থান থেকে অন্য কোথাও যেতে বাধ্য করা যাবে না।
ধারা ১৬১ (সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ): পুলিশ মৌখিকভাবে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করতে পারে। তবে, এই জবানবন্দি সাক্ষর করা বাধ্যতামূলক নয়।
ধারা ১৬২ (জবানবন্দি ব্যবহার): পুলিশি তদন্তের সময় প্রদত্ত কোনো জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, তবে তা জেরা বা সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ধারা ১৬৪ (ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবানবন্দি): পুলিশ কোনো সাক্ষীর গুরুত্বপূর্ণ জবানবন্দি বা আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট লিপিবদ্ধ করার জন্য আবেদন করতে পারে।
ধারা ১৭২ (কেস ডায়েরি): পুলিশকে অবশ্যই তদন্তের প্রতিটি দিনের কার্যক্রম একটি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে, যা কেস ডায়েরি নামে পরিচিত। এই ডায়েরি তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড।
ধারা ১৭৩ (চূড়ান্ত প্রতিবেদন): তদন্ত শেষে পুলিশকে আদালতে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন (Final Report) দাখিল করতে হয়। এই প্রতিবেদনে হয় চার্জশীট (Charge Sheet) বা চূড়ান্ত রিপোর্ট (Final Report) দাখিল করা হয়, যেখানে মামলার ফলাফল উল্লেখ করা হয়।
পর্যালোচনা:
উপরোক্ত বিধানগুলো থেকে বোঝা যায়, পুলিশের ক্ষমতা অবারিত নয়। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ CrPC এবং অন্যান্য আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পুলিশকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যেমন এজাহার দায়ের, কেস ডায়েরি সংরক্ষণ, এবং আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল। পুলিশ যদি কোনো আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে, তবে সেই তদন্ত বা প্রাপ্ত সাক্ষ্য আদালতে বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। তাই, 'ফৌজদারী মামলার তদন্তে পুলিশের ক্ষমতা অবারিত' উক্তিটি সঠিক নয়, বরং সীমিত এবং আইনি বিধান দ্বারা সুসংগঠিত।
(খ) Y এর আইনজীবী হিসাবে আইনগত পদক্ষেপ:
Y এর আইনজীবী হিসাবে, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব:
১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন: CrPC এর ১৪৪(৫) ধারা অনুযায়ী, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আদেশটি বাতিল বা সংশোধন করার জন্য একটি আবেদন করব। এই আবেদনের মূল ভিত্তি হবে যে, আদেশটি আইনসম্মত হয়নি এবং এর পেছনের কারণগুলো অযৌক্তিক।
২. হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন আবেদন: CrPC এর ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিভিশন আবেদন করব।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে আইনানুগ যুক্তি:
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশটি CrPC এর ১৪৪ ধারার মূল উদ্দেশ্য এবং বিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এর বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলো উপস্থাপন করা যেতে পারে:
সময়সীমা লঙ্ঘন: CrPC এর ১৪৪(৪) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, ১৪৪ ধারার অধীনে কোনো আদেশ দুই মাসের বেশি বলবৎ থাকবে না, যদি না সরকার এটি বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে। এই ক্ষেত্রে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ৩ মাসের জন্য নির্দেশনা জারি করা আইনসম্মত নয় এবং ১৪৪ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছে।
জরুরি পরিস্থিতির অভাব: ১৪৪ ধারা সাধারণত জরুরি পরিস্থিতিতে শান্তিভঙ্গ রোধের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি কোনো দেওয়ানী বিরোধ বা সম্পত্তির মালিকানার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা যাবে না। X এবং Y এর মধ্যেকার বিরোধটি একটি দেওয়ানী প্রকৃতির (জমি নিয়ে) এবং এর জন্য দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার চাওয়া উচিত ছিল। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন।
একতরফা আদেশ: ১৪৪ ধারার আদেশ সাধারণত একটি পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে জারি করা হয় এবং এটি অপর পক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় না। তবে, এই ধারাটি স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য নয়, বরং একটি সম্ভাব্য গুরুতর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। যেহেতু এটি একটি দেওয়ানী বিরোধ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা উচিত ছিল।
শান্তিভঙ্গ রোধে ব্যর্থতা: ১৪৪ ধারার মূল উদ্দেশ্য শান্তিভঙ্গ রোধ করা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, Y কে তার নিজের সম্পত্তিতে প্রবেশে বাধা দিয়ে উল্টো নতুন বিরোধের জন্ম দেওয়া হয়েছে। এটি শান্তিভঙ্গের কারণ হতে পারে, যা ১৪৪ ধারার মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
সুতরাং, Y এর আইনজীবী হিসাবে, আমি এই যুক্তিগুলো ব্যবহার করে প্রমাণ করার চেষ্টা করব যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশটি আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ এবং তা বাতিল বা সংশোধন করা প্রয়োজন।