- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১৪
মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying Declaration) সংক্রান্ত:
'ক' কে গুলি করে আহত করা হলো। হাসপাতালে নেওয়ার পথে 'ক' তার বন্ধু 'খ' কে বলে যে 'গ' তাকে গুলি করেছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর 'ক' মারা যায়। 'ক' এর এই উক্তিটি কি আদালতে মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে? যদি 'ক' জ্ঞান হারানোর আগে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যেত, তার গ্রহণযোগ্যতা কি হতো?
একজন ব্যক্তি হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় একজন ডাক্তারের কাছে তার উপর আক্রমণের বিস্তারিত বিবরণ দেন। পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। তার দেওয়া পূর্বের বিবৃতিটি কি আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে?
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (Evidence Act, 1872) এর ধারা ৩২ এর আলোকে আলোচনা করা হলো।
প্রথম অংশের উত্তর: 'ক' এর মৌখিক ও লিখিত উক্তির গ্রহণযোগ্যতা
সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩২(১) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো বিবৃতি দেন, তবে সেই বিবৃতিটি প্রাসঙ্গিক (relevant) হবে, যদি সেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এটিই মূলত 'মৃত্যুকালীন ঘোষণা' হিসেবে পরিচিত।
১. বন্ধুর কাছে দেওয়া মৌখিক উক্তির গ্রহণযোগ্যতা:
'ক' তার বন্ধু 'খ' কে হাসপাতালে নেওয়ার পথে যে উক্তিটি করেছে, সেটি আদালতে মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
![]() |
হাসপাতালে নেওয়ার পথে 'ক' তার বন্ধু 'খ' কে বলে যে 'গ' তাকে গুলি করেছে |
শর্ত হলো, এই উক্তিটি 'ক' এর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে করা হয়েছে এবং 'ক' পরবর্তীতে মারা গেছে।
ধারা ৩২(১) অনুযায়ী, এই ধরনের উক্তিটি লিখিত বা মৌখিক, যে কোনো রূপেই হতে পারে এবং এটি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসারের সামনে না হলেও চলবে। এমনকি এটি একজন সাধারণ মানুষের কাছে করা হলেও, যদি তা প্রমাণ করা যায়, তবে তা আদালতে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে, এর সাক্ষ্যগত মূল্য (evidential value) নির্ভর করবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর, যেমন—উক্তি করার সময় 'ক' এর মানসিক অবস্থা কতটা সুস্থ ছিল, 'খ' এর সাক্ষ্য কতটা নির্ভরযোগ্য, ইত্যাদি।
২. লিখিত বিবৃতির গ্রহণযোগ্যতা:
যদি 'ক' জ্ঞান হারানোর আগে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যেত এবং তাতে তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করত, তবে সেই লিখিত বিবৃতিটিও মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হতো।
আইন অনুসারে, মৌখিক বা লিখিত—উভয় ধরনের মৃত্যুকালীন ঘোষণাই প্রাসঙ্গিক এবং গ্রহণযোগ্য। লিখিত বিবৃতির সুবিধা হলো, এতে উক্তিটি বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
সুতরাং, এই ধরনের লিখিত বিবৃতিও ধারা ৩২(১) অনুযায়ী আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতো।
দ্বিতীয় অংশের উত্তর: সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির বিবৃতির গ্রহণযোগ্যতা
দ্বিতীয় প্রশ্নটি ধারা ৩২ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমী দিক তুলে ধরে।
একজন ব্যক্তি মুমূর্ষু অবস্থায় যে বিবৃতি দেন, তা ধারা ৩২ এর অধীনে তখনই প্রাসঙ্গিক হয়, যখন সেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
যেহেতু আলোচ্য ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাই তার সেই পূর্বের বিবৃতিটি ধারা ৩২(১) এর অধীনে আর মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
কারণ, ধারাটির মূল ভিত্তি হলো 'মৃত্যু আসন্ন' এই বিশ্বাসে দেওয়া উক্তি, যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। যদি মৃত্যু না হয়, তবে সেই ভিত্তিটিই আর থাকে না।
এক্ষেত্রে, ঐ ব্যক্তির বিবৃতিটি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করতে হলে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ায় উপস্থিত হয়ে তা বলতে হবে। যদি তিনি তার পূর্বের বিবৃতির সঙ্গে ভিন্ন কিছু বলেন, তবে সেই পূর্বের বিবৃতিটি তাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৫৭ এর অধীনে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
সংক্ষেপে, মৃত্যুকালীন ঘোষণা শুধুমাত্র তখনই প্রাসঙ্গিক যখন ঘোষকের মৃত্যু হয়। যদি তিনি বেঁচে থাকেন, তাহলে তার বিবৃতিটি সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হয়।