- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিশিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ৫
১. ট্রাস্ট সংক্রান্ত (Trusts):
একজন ট্রাস্টি তার ট্রাস্টের ক্ষমতা লঙ্ঘন করে ট্রাস্টের সম্পত্তি অপব্যবহার করেছেন। বেনিফিসিয়ারিরা কি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারবে? (ধারা ৬৩, ৬৫)
২. তামাদির মূল নীতি ও উদ্দেশ্য (Basic Principles and Objectives of Limitation):
তামাদি আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য কি? (সাধারণ ধারণা)
তামাদি আইন কি অধিকারকে বিলুপ্ত করে, নাকি প্রতিকারকে বারিত করে? ব্যাখ্যা করুন।
৩. তামাদির মেয়াদ গণনা (Computation of Period of Limitation) সংক্রান্ত:
সময় শুরু: একটি চুক্তির ভঙ্গের জন্য কখন থেকে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে?
ছুটির দিন: যদি তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনটি আদালতের ছুটির দিন হয়, তবে বাদী কখন মামলা দায়ের করতে পারবে?
অক্ষমতা (Disability): একজন নাবালক ব্যক্তি একটি চুক্তির ভঙ্গের জন্য কখন মামলা দায়ের করতে পারবে? যদি কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার কারণে মামলা করতে অক্ষম হন, তার ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ কিভাবে গণনা হবে?
প্রতারণা বা ভুল: 'ক'কে প্রতারণা করে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। 'ক' কখন থেকে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে তার উপর ভিত্তি করে তামাদির মেয়াদ কিভাবে গণনা হবে?
স্বীকৃতি (Acknowledgement): ঋণের তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে দেনাদার ঋণ স্বীকার করে একটি লিখিত স্বাক্ষর দিলেন। এই স্বীকারোক্তির ফল কি হবে?
আংশিক পরিশোধ (Part Payment): একটি ঋণের তামাদি মেয়াদ চলাকালীন দেনাদার আংশিক পরিশোধ করলেন। এর ফল কি হবে?
আলোচনা
১। ট্রাস্ট সংক্রান্ত: ট্রাস্টির অপব্যবহার এবং প্রতিকার
![]() |
একজন ট্রাস্টি তার ট্রাস্টের ক্ষমতা লঙ্ঘন করে ট্রাস্টের সম্পত্তি অপব্যবহার করেছেন |
হ্যাঁ, একজন ট্রাস্টি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের সম্পত্তি অপব্যবহার করলে বেনিফিসিয়ারিরা তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারবে।
একজন ট্রাস্টি যখন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের সম্পত্তির অপব্যবহার করেন, তখন বেনিফিসিয়ারিদের আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন (Specific Relief Act) এর ধারা ৬৩ এবং ৬৫ অনুযায়ী, বেনিফিসিয়ারিরা আদালতে মামলা করে ট্রাস্টের সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে বা ট্রাস্টিকে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে পারে। ট্রাস্টি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করলে বেনিফিসিয়ারিরা ট্রাস্টের সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, ট্রাস্টিকে অপসারণ, এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারে।
২. তামাদির মূল নীতি ও উদ্দেশ্য
তামাদি আইন (Limitation Act) প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হলো দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা এবং বিচার প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বজায় রাখা। এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:
বিবাদ নিষ্পত্তি: দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা আইনি বিবাদ এড়িয়ে চলা।
সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ: সময়ের সাথে সাথে সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায় বা মিথ্যা সাক্ষ্যের ঝুঁকি বাড়ে, তাই একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করা আবশ্যক।
আইনি স্থিতিশীলতা: এটি সম্পত্তি এবং অধিকারের ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীলতা তৈরি করে, যাতে কেউ দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে কোনো পুরনো দাবি নিয়ে আসতে না পারে।
তামাদি আইন অধিকারকে বিলুপ্ত করে না, বরং প্রতিকারকে বারিত করে। এর অর্থ হলো, তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আপনার অধিকার বা দাবিটি বৈধ থাকে, কিন্তু আপনি আর আদালতের মাধ্যমে সেই অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারেন না। যেমন, যদি আপনার কোনো পাওনা থাকে যার তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাহলে আপনি পাওনাদার হিসাবে সেই টাকা পাওয়ার অধিকারী হলেও আদালতের মাধ্যমে আর তা আদায় করতে পারবেন না।
৩. তামাদির মেয়াদ গণনা
তামাদি আইন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মেয়াদ গণনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করে।
১. সময় শুরু
একটি চুক্তির ভঙ্গের জন্য তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হয় যে দিন চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে সেই দিন থেকে। তামাদি আইনের ধারা ৩ এবং ৪ অনুযায়ী, যদি মামলাটি তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দায়ের করা হয়, তবে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেবে, যদিও প্রতিপক্ষ এই বিষয়ে কোনো আপত্তি না তোলে।
২. ছুটির দিন
যদি তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনটি আদালতের ছুটির দিন হয়, তাহলে বাদী ছুটি শেষ হওয়ার পর প্রথম যে দিন আদালত খোলে সেই দিন মামলা দায়ের করতে পারবে। এটি তামাদি আইনের ধারা ৪ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
৩. অক্ষমতা (Disability)
নাবালক: একজন নাবালক ব্যক্তি একটি চুক্তির ভঙ্গের জন্য তার সাবালক হওয়ার পর তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে। অর্থাৎ, সাবালক হওয়ার পর থেকে সে তার মামলা দায়ের করতে পারবে।
মানসিক অসুস্থতা: যদি কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার কারণে মামলা করতে অক্ষম হন, তবে তার অক্ষমতা দূর হওয়ার পর থেকে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে। যদি অক্ষমতা থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়, তবে তার উত্তরাধিকারীর জন্য তামাদির মেয়াদ তার মৃত্যুর পর থেকে গণনা শুরু হবে। এটি ধারা ৬ এবং ৭ এর অধীনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪. প্রতারণা বা ভুল
যদি 'ক'-কে প্রতারণা করে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়, তবে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে যে দিন 'ক' প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারল বা যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন করলে জানতে পারত সেই দিন থেকে। এটি তামাদি আইনের ধারা ১৭ অনুযায়ী নির্ধারিত।
৫. স্বীকৃতি (Acknowledgement)
ঋণের তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে দেনাদার যদি ঋণ স্বীকার করে একটি লিখিত স্বাক্ষর দেন, তবে সেই স্বীকারোক্তির দিন থেকে একটি নতুন করে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে। এটি ধারা ১৯ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা ঋণের মেয়াদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৬. আংশিক পরিশোধ (Part Payment)
যদি একটি ঋণের তামাদি মেয়াদ চলাকালীন দেনাদার আংশিক পরিশোধ করেন, তবে আংশিক পরিশোধের দিন থেকে নতুন করে তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে। এটি ধারা ২০ এর অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটিও ঋণের মেয়াদকে দীর্ঘায়িত করে।