- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ১৫
বিশেষজ্ঞের মতামত (Expert Opinion) সংক্রান্ত:
একটি জালিয়াতির মামলায়, অভিযুক্তের স্বাক্ষর পরীক্ষা করার জন্য একজন হস্তলিপি বিশেষজ্ঞের মতামত চাওয়া হলো। বিশেষজ্ঞের মতামত আদালতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?
একজন ডাক্তার একটি মামলার ফরেনসিক রিপোর্টে তার মতামত দিয়েছেন। আদালত কি এই মতামত গ্রহণ করতে বাধ্য? যদি না হয়, কেন?
আলোচনা
জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্তের স্বাক্ষর পরীক্ষার জন্য একজন হস্তলিপি বিশেষজ্ঞের মতামত আদালতে গ্রহণযোগ্য কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞের মতামতকে একটি প্রাসঙ্গিক তথ্য (relevant fact) হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে এটি চূড়ান্ত প্রমাণ (conclusive proof) নয়।
বিশেষজ্ঞের মতামত ও আদালতের ভূমিকা
ধারা ৪৫ অনুযায়ী, যখন আদালতে কোনো বিদেশী আইন, বিজ্ঞান, বা শিল্পের কোনো বিষয়ে মতামতের প্রয়োজন হয়, অথবা কোনো হস্তাক্ষর বা আঙুলের ছাপের পরিচয় নির্ধারণের জন্য কোনো মতামতের প্রয়োজন হয়, তখন এই বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের মতামত প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয়।
গ্রহণযোগ্যতা: বিশেষজ্ঞের মতামত আদালতের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হয়। আদালত এই মতামতকে অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের সঙ্গে তুলনা ও যাচাই করে দেখেন।
![]() |
বিশেষজ্ঞের মতামত আদালতের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হয় |
বাধ্যবাধকতা নেই: আদালত বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করতে বাধ্য নন। আদালত মনে করলে, অন্য কোনো সাক্ষ্য বা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞের মতামতের বিপরীত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর কারণ হলো, বিশেষজ্ঞ শুধু তার দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে একটি মতামত দেন, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেবল আদালতের।
উদাহরণস্বরূপ, হস্তলিপি বিশেষজ্ঞের মতামত একটি সহায়ক প্রমাণ (corroborating evidence) হিসেবে কাজ করে। আদালত শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞের মতামতের ওপর ভিত্তি করে কোনো রায় দেন না, বরং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রমাণ, যেমন—সাক্ষীর জবানবন্দি, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং দলিলপত্রের সত্যতা—এগুলোকেও বিবেচনা করেন।
ডাক্তারের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং আদালতের অবস্থান
একজন ডাক্তার যদি কোনো মামলার ফরেনসিক রিপোর্টে তার মতামত দেন, তাহলে আদালত সেই মতামত গ্রহণ করতে বাধ্য নন। এর পেছনের কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
ধারা ৪৫: এই ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ধারা ৪৫ প্রযোজ্য। ডাক্তার একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার ফরেনসিক মতামত দিতে পারেন, যা একটি প্রাসঙ্গিক তথ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপিত হয়।
মুক্ত বিচার ও বিবেক: আদালতের বিচারক স্বাধীনভাবে মামলার সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করার অধিকারী। বিচারকের বিবেক, অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং মামলার সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। যদি আদালতের কাছে মনে হয় যে, ডাক্তারের মতামতটি দুর্বল, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, বা অন্য প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তাহলে আদালত সেই মতামতকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।
ভুল বা পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা: একজন বিশেষজ্ঞ, এমনকি একজন ডাক্তারও, তার মতামতে ভুল করতে পারেন অথবা কোনো কারণে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেন। আদালত এই সম্ভাবনাগুলো যাচাই করে দেখেন। তাই, আদালতের দায়িত্ব হলো শুধু একটি ফরেনসিক রিপোর্ট গ্রহণ করা নয়, বরং এর পেছনের যুক্তি, পদ্ধতি এবং নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করা।
পরিপূরক প্রমাণ: ডাক্তারের ফরেনসিক রিপোর্টকে প্রায়শই একটি পরিপূরক প্রমাণ (corroborative evidence) হিসেবে দেখা হয়, যা মামলার মূল সাক্ষ্যপ্রমাণকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আদালত মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে সাক্ষীর জবানবন্দি, প্রত্যক্ষদর্শী প্রমাণ, এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক প্রমাণের সঙ্গে ফরেনসিক রিপোর্টকে তুলনা করেন।
সুতরাং, আদালত কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করতে বাধ্য নন। বিশেষজ্ঞের মতামত আদালতে একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা বিচারককে মামলার সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে আদালতের।