- Get link
- X
- Other Apps
অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান পরীক্ষা ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ প্রশ্ন নং ১০
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০। প্রশ্ন নং ১০ এর ক ও খ
১০। (ক) The Limitation Act, 1908 এর সংশ্লিষ্ট বিধান উল্লেখপূর্বক বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্বের ধারণা আলোচনা করুন ।
(খ) “The Limitation Act, 1908 এর ৫ ধারার এখতিয়ার প্রয়োগ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।"—আপনি এই বক্তব্যের বিরোধিতায় কিরূপ যুক্তি উপস্থাপন করবেন?
আলোচনা
১০। (ক) বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্ব (Adverse Possession)
বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্ব বলতে বোঝায়, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তির প্রকৃত মালিক না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে শান্তিপূর্ণ, প্রকাশ্য এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে সেই সম্পত্তি নিজের দখলে রাখে এবং এর ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় সেই সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে।
The Limitation Act, 1908 এর সংশ্লিষ্ট বিধান:
The Limitation Act, 1908 এর মাধ্যমে বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্বের ধারণাটি সুপ্রতিষ্ঠিত। এই আইনের ধারা-২৮ এবং অনুচ্ছেদ ৬৫ সরাসরি এই ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত।
ধারা-২৮: এই ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (যা আইনের তফসিলভুক্ত) কোনো সম্পত্তির মালিকানা দাবি করার অধিকার প্রয়োগ না করে, তবে সেই সময়ের পর তার সেই সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ, প্রকৃত মালিকের অধিকার হারিয়ে গেলে, বিরুদ্ধ দখলকারী ব্যক্তি সেই সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে।
অনুচ্ছেদ-৬৫: এই অনুচ্ছেদটি স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির কোনো স্থাবর সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার পর, সেই সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তাকে ১২ বছরের মধ্যে আদালতে মামলা করতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে মামলা করা না হয়, তাহলে সেই সম্পত্তির ওপর থেকে তার স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং দখলকারী ব্যক্তি বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্বের মাধ্যমে মালিকানা লাভ করে।
সংক্ষেপে, বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্ব অর্জনের জন্য চারটি শর্ত পূরণ করতে হয়:
১. প্রকাশ্য (Open): দখলটি গোপনীয় হবে না, বরং সবার কাছে দৃশ্যমান ও প্রকাশ্য হতে হবে।
২. নিরবচ্ছিন্ন (Continuous): দখলটি নির্দিষ্ট সময়কাল (সাধারণত ১২ বছর) ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে হবে।
৩. শত্রুতাপূর্ণ বা বিরুদ্ধ (Hostile): দখলটি প্রকৃত মালিকের অধিকারের বিরুদ্ধে হতে হবে।
৪. শান্তিপূর্ণ (Peaceful): দখলটি কোনো ধরনের জবরদস্তি বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হবে না, বরং শান্তিপূর্ণভাবে হবে।
(খ) “The Limitation Act, 1908 এর ৫ ধারার এখতিয়ার প্রয়োগ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।"
এই বক্তব্যটি সাধারণভাবে সত্য হলেও, এর বিরোধিতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি উপস্থাপন করা যায়।
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৫ অনুযায়ী, কোনো আপিল, আপিলের আবেদন, বা অন্যান্য নির্দিষ্ট আবেদন নির্ধারিত সময়ের পরে ফাইল করা যেতে পারে, যদি আবেদনকারী আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে তিনি সময়মতো আবেদন দাখিল করতে না পারার জন্য 'যথেষ্ট কারণ' (Sufficient Cause) দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন।
ধারা ৫-এর ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন বা Arbitrary বলা যায় না। কারণ, এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালতকে কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।
যুক্তি ১: স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নয়, বরং বিচক্ষণ ক্ষমতা (Judicial Discretion)
ধারা ৫-এর ক্ষমতাকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা (Arbitrary Power) না বলে বিচক্ষণ ক্ষমতা (Judicial Discretion) বলাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলতে বোঝায় যে কোনো ধরনের নীতিমালা বা যুক্তি ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু বিচক্ষণ ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালতকে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ বিবেচনা করতে হয়, যেমন:
১. মামলা দায়েরের বিলম্বের কারণ কী?
২. দেরি হওয়ার পেছনে বাদী বা আবেদনকারীর কোনো অসতর্কতা ছিল কি?
৩. দেরিটি কি ন্যায়সংগত কারণে (sufficient cause) হয়েছে?
৪. আবেদনকারী কি বিলম্বের জন্য সরল বিশ্বাসে কাজ করেছেন?
আদালত এই বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন। যদি বিলম্বের কারণ যুক্তিসঙ্গত না হয়, তাহলে আবেদনটি বাতিল করে দেন।
যুক্তি ২: 'যথেষ্ট কারণ' (Sufficient Cause) এর ওপর নির্ভরশীলতা
ধারা ৫ এর মূল শর্তই হলো, আবেদনকারীকে দেরির জন্য 'যথেষ্ট কারণ' দেখাতে হবে। এই 'যথেষ্ট কারণ' কী, তা আদালত বিচারিক নজির (judicial precedents) এবং মামলার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নির্ধারণ করেন। যেমন:
১. আবেদনকারীর গুরুতর অসুস্থতা।
২. আইনজীবীর ভুল পরামর্শ।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বিলম্ব।
যদি বিলম্বের পেছনে এমন কোনো যথেষ্ট কারণ না থাকে, তাহলে আদালত কখনো ধারা ৫ প্রয়োগ করে না। অর্থাৎ, আদালত তার ইচ্ছামতো যখন খুশি তখন এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।
যুক্তি ৩: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা (To Advance Justice)
ধারা ৫-এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শুধুমাত্র সময়সীমার সামান্য ভুলের কারণে কোনো ন্যায়সংগত মামলা যাতে খারিজ হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করা। এটি একটি ত্রুটি সংশোধনমূলক বিধান। তাই এর প্রয়োগের মাধ্যমে আদালত মূলত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। যদি আদালত নির্বিচারে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতো, তাহলে তা আইনের উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করতো এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়তো।
যুক্তি ৪: সুপ্রিম কোর্ট ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা
বিভিন্ন বিচারিক নজির (case laws) এবং উচ্চ আদালতের রায়ে বারবার বলা হয়েছে যে, ধারা ৫-এর ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালতকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিটি মামলার স্বতন্ত্র প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। এটি কোনো ঢালাও বা সীমাহীন ক্ষমতা নয়।
সার্বিকভাবে, যদিও ধারা ৫ আদালতকে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয়, তবে তা আইনসম্মতভাবে এবং নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করতে হয়। তাই একে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা না বলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের বিচক্ষণ ক্ষমতা বলাই অধিক সঠিক।