- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান ৮
আসন্ন বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি।
বিগত বছরের বার কাউন্সিল আয়োজিত অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। পরীক্ষা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার। প্রশ্ন নং ৮ এর ক ও খ
৮। ক. সাক্ষ্য প্রদানের জন্য যোগ্য ব্যক্তি কে? একটি মামলা প্রমাণের জন্য ন্যূনতম কতজন সাক্ষী আবশ্যক?
খ. ”দেওয়ানী মোকদ্দমায় ডিক্রি পেতে হলে হলে বাদীকে অবশ্যই তার নিজের মোকদ্দমা প্রমাণ করতে হবে; বাদী বিবাদীর দূর্বলতার উপর নির্ভর করতে পারে না।” The Evidence Act, 1872 এর বিধান অনুসারে ‘প্রমাণের দায়িত্ব’ সংক্রান্ত নীতির আলোকে মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
৮। ক) কে সাক্ষ্য দিতে পারে?
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১১৮ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে পারে, যদি না আদালত মনে করে যে সে শিশুসুলভ বুদ্ধিমত্তা বা শারীরিক/মানসিক অসুস্থতার কারণে প্রশ্ন বুঝতে বা যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে অক্ষম। তাই, কোনো ব্যক্তি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যোগ্য কিনা, তা নির্ভর করে তার সুস্থ মনের উপর। এমনকি একজন শিশুও যদি বুদ্ধিমান হয় এবং সে যা দেখেছে বা শুনেছে তা সঠিকভাবে বলতে পারে, তবে সেও সাক্ষ্য দেওয়ার যোগ্য।
মামলা প্রমাণের জন্য কতজন সাক্ষী প্রয়োজন?
সাক্ষ্য আইনের ১৩৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো মামলার প্রমাণের জন্য কতজন সাক্ষীর প্রয়োজন হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। একটি মামলার সত্যতা একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারাও প্রমাণিত হতে পারে। সাক্ষীর সংখ্যা নয়, বরং তার সাক্ষ্যের গুণগত মান, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রাসঙ্গিকতার উপরই মামলার জয়-পরাজয় নির্ভর করে।
৮। খ) প্রমাণের দায়িত্বের নীতি
প্রদত্ত মন্তব্যটি সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১০১, ১০২, এবং ১০৩ ধারায় বর্ণিত ‘প্রমাণের দায়িত্ব’ (burden of proof) নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। এই নীতি অনুযায়ী, যিনি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার অস্তিত্ব দাবি করেন, তাকেই তা প্রমাণ করতে হয়।
* ১০১ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, যিনি আদালতে কোনো অধিকার বা দায়বদ্ধতার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চান, তাকেই সেই ঘটনা প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ, 'যে অভিযোগ করে, তাকেই প্রমাণ করতে হবে'। দেওয়ানী মামলায়, বাদীকে তার দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে হয়। বাদী যদি তার মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে বিবাদীর দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে না।
* ১০২ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, প্রমাণের দায়িত্ব সাধারণত সেই ব্যক্তির উপর থাকে, যে মামলায় হেরে যাবে, যদি কোনো পক্ষই কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করে। দেওয়ানী মামলায়, যদি বাদী তার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারে, তাহলে আদালত বিবাদীর পক্ষে রায় দেবে। তাই, শুরুতেই প্রমাণের দায়িত্ব থাকে বাদীর উপর।
* ১০৩ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, যখন কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা প্রমাণের প্রয়োজন হয়, তখন সেই ঘটনা প্রমাণের দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর বর্তায়, যিনি সেই ঘটনাটি দাবি করেছেন। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি দাবি করে যে কোনো বিশেষ দলিল জাল, তবে তাকেই তা প্রমাণ করতে হবে।
সুতরাং, মন্তব্যটি একদম সঠিক। দেওয়ানী মামলায় বাদীকে নিজের দাবির সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করতে হয়। বিবাদীর দুর্বলতা বা ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ বাদীর পক্ষে রায় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বাদীকে নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে মামলা প্রমাণ করতে হয়। এটি আইনের একটি মৌলিক নীতি, যা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।