- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ২২
মানহানি (Defamation) সংক্রান্ত:
'ক' একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করে যেখানে 'খ' সম্পর্কে মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য ছাপানো হয়, যা 'খ' এর সুনাম নষ্ট করে। 'ক' কি মানহানির জন্য দায়ী হবে?
মিথ্যা সাক্ষ্য (False Evidence) সংক্রান্ত:
একজন সাক্ষী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। তার বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ:
ফৌজদারি বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust): 'ক' তার বন্ধুর কাছে কিছু টাকা জমা রেখেছিল, কিন্তু বন্ধু সেই টাকা আত্মসাৎ করে। এটি কি অপরাধ?
প্রতারণা (Cheating): 'ক' নিজেকে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে 'খ' এর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এটি কি প্রতারণা?
আলোচনা
দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর অধীনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে প্রতিটি অপরাধের আইনি সংজ্ঞা, প্রাসঙ্গিক ধারা এবং পরিস্থিতির আলোকে এর দায়বদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মানহানি (Defamation)
'ক' একটি সংবাদপত্রে 'খ'-এর সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ করায় মানহানির অপরাধ করেছে।
![]() |
'ক'একটি সংবাদপত্রে 'খ'-এর সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ করা |
মানহানি হলো এমন কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা, যা কোনো ব্যক্তির সম্মান বা সুনামকে ক্ষুণ্ন করে। দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৯ মানহানির সংজ্ঞা দেয়। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো শব্দ, চিহ্ন, বা দৃশ্যমান প্রকাশের মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তির সুনাম বা সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোনো মিথ্যা অভিযোগ প্রকাশ করে, তবে তা মানহানি বলে গণ্য হবে। তবে, কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন: জনস্বার্থে প্রকাশিত সত্য, সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ সম্পর্কিত মন্তব্য, বা জনসভায় উপস্থাপিত বিষয়।
মিথ্যা সাক্ষ্য (False Evidence)
একজন সাক্ষী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তা একটি গুরুতর অপরাধ। প্রশ্নে উল্লিখিত পরিস্থিতি অনুযায়ী, ওই সাক্ষীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
ধারা ১৯১ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি শপথ বা আইনের অধীনে কোনো বিষয়ে সত্য কথা বলতে বাধ্য থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বিবৃতি দেয় বা এমন কোনো বিবৃতি দেয় যা সে মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে, তবে সে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে বলে গণ্য হবে।
ধারা ১৯৩ এই অপরাধের শাস্তির বিধান করে। যদি কোনো ব্যক্তি বিচারিক কার্যক্রমে (Judicial Proceeding) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তবে তার সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে। যদি বিচারিক কার্যক্রমের বাইরে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হয়, তবে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust)
'ক' তার বন্ধুকে টাকা জমা রাখতে দিয়েছিল এবং বন্ধু সেই টাকা আত্মসাৎ করায় তা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ-এর অপরাধ।
ধারা ৪০৫ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি তার কাছে অর্পিত কোনো সম্পত্তি বা সেটির ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে ব্যবহার করে, আত্মসাৎ করে, বা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তিটি হস্তান্তর করে, তবে তা ফৌজদারি বিশ্বাসভঙ্গ বলে গণ্য হবে।
এই অপরাধের শাস্তি ধারা ৪০৬-এ উল্লেখ আছে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ করে, তবে তার তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয়ই হতে পারে।
প্রতারণা (Cheating)
'ক' নিজেকে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে 'খ'-এর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় প্রতারণা-এর অপরাধ করেছে।
ধারা ৪১৫ প্রতারণার সংজ্ঞা দেয়। এই ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে প্রতারিত করে অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করতে বা মূল্যবান কিছু করতে প্ররোচিত করে, তবে তা প্রতারণা বলে গণ্য হবে। প্রতারণা করার জন্য এটি যথেষ্ট যে প্রতারক জেনেশুনে মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে বা মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে।
ধারা ৪২০ প্রতারণার জন্য শাস্তির বিধান করে। যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণা করে কাউকে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য প্ররোচিত করে, তবে তার সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
এই আইনি ধারাগুলো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় জনগণের সম্পত্তি ও সুনাম রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট ধারা, সংজ্ঞা এবং শাস্তির বিধান রয়েছে, যা অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সহায়তা করে।