- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ২৪
দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮
আদালত কর্তৃক জারিকৃত Warrants কয় প্রকার ও কি কি? Warrants জারির পদ্ধতি ঊআলোচনা করুন।
মামলার রায় (judgment) কি? একটি ভাল রায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারা আলোচনা করুন।
আদালতের এখতিয়ার (jurisdiction) বলতে কি বুঝায়? দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার কত প্রকার ও কি কি আলোচনা করুন।
দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮: আদালতের এখতিয়ার (Jurisdiction)
দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ার (jurisdiction) বলতে আদালত যে বিষয়ে কোনো মামলা বা আপিল শুনতে এবং বিচার করতে পারে, সেই ক্ষমতাকে বোঝায়। এটি আদালতের মামলার বিষয়বস্তু, আর্থিক মূল্য বা ভৌগোলিক সীমানার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। আদালতের এখতিয়ার ছাড়া কোনো রায় বা আদেশ বৈধ বলে গণ্য হয় না। এটি দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা ৯, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, এবং ২২-এর অধীনে আলোচনা করা হয়েছে।
দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ারের প্রকারভেদ
দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ার সাধারণত তিন প্রকার:
বিষয়বস্তু সংক্রান্ত এখতিয়ার (Subject-matter Jurisdiction): এই এখতিয়ার নির্ধারণ করে যে কোনো নির্দিষ্ট মামলাটি একটি দেওয়ানী আদালত বিচার করতে পারবে কিনা। এটি মামলার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে, যেমন: পারিবারিক মামলা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা, ইত্যাদি। দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৯ অনুযায়ী, আদালত দেওয়ানী প্রকৃতির সমস্ত মামলা গ্রহণ করতে পারে, যদি না তা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction): এটি আদালতের আর্থিক ক্ষমতা নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, একটি আদালত সর্বোচ্চ কত টাকার মামলা বিচার করতে পারে। দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ১৫ অনুযায়ী, প্রতিটি মামলা সর্বনিম্ন এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দায়ের করতে হবে। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতগুলোর ওপর মামলার চাপ কমানো হয়।
ভৌগোলিক এখতিয়ার (Territorial Jurisdiction): এই এখতিয়ার আদালতের ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ করে। দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ১৬ থেকে ধারা ২০ পর্যন্ত এই এখতিয়ারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ধারা ১৬: স্থাবর সম্পত্তির মামলা সেই আদালতের এখতিয়ারে দায়ের করতে হবে, যার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে ওই সম্পত্তি অবস্থিত।
![]() |
স্থাবর সম্পত্তির মামলা সেই আদালতের এখতিয়ারে দায়ের করতে হবে, যার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে ওই সম্পত্তি অবস্থিত। |
ধারা ১৭: যদি কোনো সম্পত্তি একাধিক আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত হয়, তবে যেকোনো একটি আদালতে মামলা করা যায়।
ধারা ১৮: যদি একাধিক আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে কোনো স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে, তবে একটি নির্দিষ্ট আদালত সেই মামলা গ্রহণ করতে পারে।
ধারা ১৯: ব্যক্তিগত ক্ষতির জন্য মামলা (যেমন: মানহানি, শারীরিক আঘাত) যেকোনো এক পক্ষ যে স্থানে বাস করে বা ব্যবসার কাজ করে, সেই আদালতের এখতিয়ারে দায়ের করা যায়।
ধারা ২০: অন্যান্য সব মামলা যেখানে বিবাদী বাস করে বা ব্যবসার কাজ করে, সেই আদালতের এখতিয়ারে দায়ের করা যাবে।
আদালতের এখতিয়ার: ওয়ারেন্ট ও রায় (Judgment)
আদালতের জারি করা ওয়ারেন্ট (Warrants) 🚨
আদালত কর্তৃক জারি করা ওয়ারেন্ট (Warrants) সাধারণত দুই প্রকার। দেওয়ানী কার্যবিধিতে এই দুটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা (Arrest Warrant): এই ওয়ারেন্ট কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য জারি করা হয়। দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৩২ অনুসারে, কোনো ব্যক্তির আদালতে হাজির হওয়ার জন্য জারি করা সমন (summons) অমান্য করলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে।
ডিক্রি জারির পরোয়ানা (Warrant for execution of a decree): ডিক্রি জারির জন্য এই ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি যদি আদালত কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ডিক্রি অনুযায়ী কোনো কিছু করতে ব্যর্থ হয়, তবে তার সম্পত্তি জব্দ করার জন্য আদালত এই ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে।
ওয়ারেন্ট জারির পদ্ধতি: দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ২১ (Order 21) ওয়ারেন্ট জারির পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে। আদালত ওয়ারেন্ট জারির জন্য লিখিত আদেশ প্রদান করে, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হয়। ওয়ারেন্ট জারির জন্য যথাযথ ফি এবং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
মামলার রায় (Judgment)
একটি মামলার রায় (judgment) হলো বিচারক কর্তৃক লিখিত একটি বিবৃতি, যেখানে তিনি মামলার শুনানি শেষে তার সিদ্ধান্ত বা চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন। এতে মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সংশ্লিষ্ট আইনি ধারা, বিচারকের সিদ্ধান্ত, এবং তার সিদ্ধান্তের কারণ উল্লেখ থাকে। দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ২(৯) অনুযায়ী, রায় (judgment) হলো ডিক্রি বা আদেশের ভিত্তি।
একটি ভালো রায়ের বৈশিষ্ট্য
একটি ভালো রায় হওয়া উচিত:
সুস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত (Clear and Concise): রায়টি সহজ ভাষায় লেখা হবে, যাতে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। এতে অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা থাকবে না। আদেশ ২০, বিধি ৪ অনুযায়ী, ক্ষুদ্র-আদালতের রায় সংক্ষিপ্ত হবে এবং শুধুমাত্র চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত উল্লেখ থাকবে।
যুক্তিযুক্ত (Reasoned): রায়ে বিচারকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে। এটি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহৃত যুক্তির ধাপগুলো বর্ণনা করবে।
সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতির প্রয়োগ (Application of Law and Principles): রায়ে বিচারক কোন আইনি বিধান বা নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা উল্লেখ থাকবে।
সুনির্দিষ্ট ও নির্ভুল (Specific and Accurate): রায়ে মামলার সব পক্ষের নাম, মামলার নম্বর এবং তারিখ, বিচারকের নাম এবং সিদ্ধান্তের ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
ডিক্রির ভিত্তি (Basis of the Decree): রায় (judgment) ডিক্রির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। রায় থেকে একটি ডিক্রি তৈরি করা হয়, যা আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ধারা ৩৩ অনুযায়ী, রায় প্রদানের পর আদালত একটি ডিক্রি বা আদেশ প্রস্তুত করবে।