- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়াল সার্ভিস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি - পর্ব ২৬
গ্রেফতার (arrest) কি? গ্রেফতারের পদ্ধতি এবং গ্রেফতারের পর একজন আসামীকে কি কি আইনী সহায়তা পাওয়ার অধিকারী?
জামিন (bail) কি? জামিন মঞ্জুর করার জন্য আদালত কি কি বিষয় বিবেচনা করে?
চূড়ান্ত বিচারের পর খালাসপ্রাপ্ত আসামীকে কি পুনরায় একই অপরাধের জন্য বিচার করা যায়?
গ্রেফতার, জামিন এবং খালাসপ্রাপ্ত আসামীর বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
গ্রেফতার (Arrest)
গ্রেফতার হলো কোনো ব্যক্তিকে আইন দ্বারা স্বীকৃত পদ্ধতিতে, সাধারণত কোনো অপরাধ করার অভিযোগে, তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা। ফৌজদারি কার্যবিধি (Code of Criminal Procedure), ১৮৯৮-এ গ্রেফতারের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।
গ্রেফতারের পদ্ধতি ও আইনি সহায়তা:
গ্রেফতারের পদ্ধতি (Method of Arrest):
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৬: এই ধারায় বলা হয়েছে, গ্রেফতারকারী অফিসার (পুলিশ) গ্রেফতার করার সময় কোনো ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে স্পর্শ করতে বা আটকে রাখতে পারেন, যদি না সে আত্মসমর্পণ করে। যদি কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার এড়াতে বা বাধা দিতে চেষ্টা করে, তবে গ্রেফতারকারী অফিসার তাকে গ্রেফতার করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
![]() |
| গ্রেফতারকারী অফিসার (পুলিশ) গ্রেফতার করার সময় কোনো ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে স্পর্শ করতে বা আটকে রাখতে পারেন |
গ্রেফতারের কারণ জানানো (Inform the reason for arrest): ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫০(১) অনুযায়ী, পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের কারণ এবং যে অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে জানাতে বাধ্য।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (Arrest without warrant): ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪ অনুযায়ী, পুলিশ কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কোনো ম্যাজিসেট্রট বা আদালতের পরোয়ানা (warrant) ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। যেমন:
১. কোনো আমলযোগ্য (cognizable) অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে।
২. যেকোনো ব্যক্তির বৈধ আটকাদেশ থেকে পালিয়ে গেলে।
৩. পুলিশকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে।
৪. ঘোষিত অপরাধী হলে।
৫. যার কাছে ঘর ভাঙার সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আইনি সহায়তা (Legal Aid for the Arrested Person):
আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের অধিকার: বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৩৩(১) অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে তার পছন্দের একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা: ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৬১ অনুযায়ী, কোনো পুলিশ অফিসার গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (ভ্রমণের সময় বাদে) নিকটস্থ ম্যাজিসেট্রটের সামনে হাজির করতে বাধ্য। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ম্যাজিসেট্রটের সামনে হাজির করা না হয়, তাহলে সেই আটক অবৈধ বলে গণ্য হতে পারে।
নির্যাতন থেকে সুরক্ষা: বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৩৫(৫) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না।
জামিন (Bail)
জামিন হলো আদালতের একটি আদেশ, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (বন্ড) বা শর্ত সাপেক্ষে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। এই মুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে ওই ব্যক্তি আদালতের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট তারিখে বিচারিক কার্যক্রমে উপস্থিত থাকবেন।
জামিন মঞ্জুর করার জন্য আদালত যে বিষয়গুলো বিবেচনা করে:
জামিন মঞ্জুর করার সিদ্ধান্তটি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা (discretionary power) এবং প্রতিটি মামলার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে:
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৭ এবং ৪৯৮: জামিনের বিষয়ে এই ধারাগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে।
অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুত্ব: আদালত প্রথমে অপরাধটি আমলযোগ্য (cognizable) না অ-আমলযোগ্য (non-cognizable) এবং তা জামিনযোগ্য (bailable) না জামিন-অযোগ্য (non-bailable) তা বিবেচনা করে।
জামিনযোগ্য অপরাধ (Bailable Offence): এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখে। পুলিশ বা আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য।
অ-জামিনযোগ্য অপরাধ (Non-bailable Offence): গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা আদালতের ইচ্ছাধীন (discretionary)। আদালত জামিন মঞ্জুর করার আগে অপরাধের গুরুত্ব, অপরাধীর পূর্ববর্তী অপরাধের রেকর্ড এবং সমাজের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে।
আসামীর পালানোর ঝুঁকি (Risk of flight): আসামী যদি জামিনে মুক্তি পেলে দেশের বাইরে চলে যেতে পারে বা বিচার চলাকালীন পলাতক হতে পারে, তবে আদালত জামিন না-ও দিতে পারে।
সাক্ষ্য-প্রমাণে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা (Possibility of tampering with evidence): আদালত বিবেচনা করে যে আসামী জামিন পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে বা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে পারে কি না।
আসামীর পূর্ববর্তী রেকর্ড: আসামী যদি অতীতেও একই ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে থাকে, তবে আদালত জামিন দিতে সতর্ক থাকে।
সমাজের ওপর প্রভাব: অপরাধটি যদি সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে আদালত জামিন মঞ্জুর নাও করতে পারে।
খালাসপ্রাপ্ত আসামীর পুনরায় বিচার
চূড়ান্ত বিচারের পর খালাসপ্রাপ্ত কোনো আসামীকে একই অপরাধের জন্য পুনরায় বিচার করা যায় না। এটি আইনের একটি মৌলিক নীতি, যা ‘ডাবল জিওপার্ডি’ (double jeopardy) নামে পরিচিত।
আইনগত ভিত্তি (Legal Basis):
বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৩৫(২): এই ধারায় বলা হয়েছে, "একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একবারের বেশি ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ড দেওয়া যাইবে না।" এর অর্থ হলো, একজন ব্যক্তি একবার কোনো অপরাধের জন্য বিচার পেয়ে খালাস পেলে তাকে পুনরায় একই অভিযোগের জন্য বিচার বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪০৩: এই ধারায়ও এই নীতির প্রতিফলন দেখা যায়। ধারাটিতে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি যদি একবার কোনো অপরাধের জন্য উপযুক্ত আদালত কর্তৃক বিচার পেয়ে খালাস বা দণ্ডিত হয়, তবে সে পুনরায় একই অপরাধের জন্য বা সেই অপরাধের অংশ হিসেবে কোনো ভিন্ন অভিযোগের জন্য বিচার করা যাবে না।
তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন: যদি কোনো উচ্চতর আদালত (যেমন আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট) নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে দেয় এবং নতুন করে বিচার করার নির্দেশ দেয়, তখন সেই বিচার হতে পারে। কিন্তু এটি পুনরায় বিচার নয়, বরং বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ।
