- Get link
- X
- Other Apps
কুরবানী যারা দেয় কেন তাদের অনেকের কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়া।
কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কবুল হওয়া না হওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন, তবুও কিছু বিষয় আছে যা আমাদের ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে। নিচে কিছু প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
১. নিয়তের বিশুদ্ধতা না থাকা (ইখলাসের অভাব)
কুরবানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়ত বা উদ্দেশ্য। যদি কুরবানি শুধু লোক দেখানো, সামাজিক প্রথা পালন, বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা আল্লাহর কাছে কবুল নাও হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কেবল সেই ইবাদত কবুল করেন যা একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, "তাদের (কুরবানীর পশুর) গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা হজ্ব: ৩৭)। এর মানে হলো, কুরবানির পেছনের উদ্দেশ্য, আল্লাহভীতি এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যই আসল বিষয়।
২. হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থে কুরবানি করা
যদি কুরবানির পশু হারাম বা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা হয়, তাহলে সেই কুরবানি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ইসলামে হালাল উপার্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম (সা.) বলেছেন, "আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি শুধু পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।" (সহীহ মুসলিম)। তাই, সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে কুরবানি করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
৩. শরীয়তের নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করা
কুরবানির কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে যা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। যেমন:
* পশুর বয়স: কুরবানির পশুর নির্দিষ্ট বয়স হতে হবে (উট ৫ বছর, গরু/মহিষ ২ বছর, ছাগল/ভেড়া ১ বছর)।
* পশুর সুস্থতা: পশু সম্পূর্ণ সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। গুরুতর অসুস্থ, কানা, খোঁড়া, অতিশয় দুর্বল বা কান কাটা পশু দ্বারা কুরবানি জায়েজ নয়।
* বণ্টনের নিয়ম: কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব – এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর জন্য, এবং এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের জন্য। এই নিয়ম পুরোপুরি উপেক্ষা করা হলে কুরবানির সওয়াব কমে যেতে পারে।
এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন না করা হলে কুরবানি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
৪. অহংকার ও অপচয়
যদি কেউ অহংকারবশত বড় বা দামি পশু কুরবানি করে এবং তার মধ্যে গর্ব বা দাম্ভিকতা থাকে, তাহলে সেই কুরবানি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নাও হতে পারে। ইসলামের শিক্ষা হলো বিনয় ও নিরহংকারতা। একইভাবে, কুরবানির নামে অপচয় বা লোক দেখানো খরচ করাও অনুচিত।
৫. কুরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন না করা
অনেকে কুরবানিকে নিছক একটি প্রথা বা লোক দেখানো অনুষ্ঠানে পরিণত করে। তারা কুরবানির পেছনের আত্মত্যাগ, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাহর তাৎপর্য উপলব্ধি করে না। যখন ইবাদতের গভীরতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকে না, তখন তা কেবল একটি রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে পালিত হয়, যা এর আধ্যাত্মিক মূল্য কমিয়ে দেয়।
৬. মুসলিমদের অধিকার লঙ্ঘন করা
কুরবানির সাথে মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ জড়িত। যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানি করে কিন্তু তার প্রতিবেশীর হক আদায় করে না, অথবা গরিব-দুঃখীদের প্রতি উদাসীন থাকে, তাহলে তার কুরবানি কবুল হওয়ার পথে বাধা হতে পারে। কুরবানির উদ্দেশ্যই হলো সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির বন্ধন তৈরি করা।
পরিশেষে বলা যায়, কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য শুদ্ধ নিয়ত, হালাল উপার্জন এবং শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সবার কুরবানিকে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন। আমিন।