- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন নং ১ ক ও খ
ক)The Code of Civil Procedure, 1908 এর Order-1, Rule-10 এর আলোকে মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে আদালত কর্তৃক পক্ষসমূহকে কর্তন বা সংযোজন করার বিধান আলোচনা করুন।
খ) বাদী স্বত্ব ঘোষণার দাবীতে দেওয়ানী ৬৫/২০২৪ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন যা উভয় বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রি প্রদানে নিষ্পত্তি হয়। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিবাদীদের প্রতিকারসমূহ কী?
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর Order-1, Rule-10 এর আলোকে পক্ষসমূহকে কর্তন বা সংযোজন
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর Order-1, Rule-10 (আদেশ-১, বিধি-১০) হলো মোকদ্দমার পক্ষসমূহ (Parties to Suits) সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এই বিধিটি আদালতকে মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে পক্ষদের সংযোজন (Addition) বা কর্তন (Striking out) করার ক্ষমতা প্রদান করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো মোকদ্দমার প্রকৃত বিরোধ সম্পূর্ণ ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করা এবং অপ্রয়োজনীয় মামলা এড়ানো।
সংযোজন (Addition)
আদালত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তিকে মোকদ্দমায় পক্ষ হিসেবে সংযোজন করতে পারে:
* প্রয়োজনীয় পক্ষ (Necessary Party): যদি কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার ফলাফলের সাথে সরাসরি জড়িত থাকেন এবং তার উপস্থিতি ছাড়া মোকদ্দমার সঠিক ও সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি সম্ভব না হয়, তবে তাকে প্রয়োজনীয় পক্ষ হিসেবে সংযোজন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধে যদি প্রকৃত মালিককে পক্ষ করা না হয়, তাহলে মোকদ্দমার নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।
* উচিত পক্ষ (Proper Party): যদি কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি মোকদ্দমার বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হয়, তবে তাকে উচিত পক্ষ হিসেবে সংযোজন করা যেতে পারে, যদিও তার উপস্থিতি অপরিহার্য না-ও হতে পারে। এটি মোকদ্দমার জটিলতা কমাতে এবং একই সাথে একাধিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক।
* ভুল বা বাদ পড়া পক্ষ (Mistake or Omission): যদি কোনো পক্ষকে ভুলবশত অন্তর্ভুক্ত করা না হয় বা বাদ পড়ে যায়, তবে আদালত তাকে সংযোজন করার আদেশ দিতে পারে।
* আদালতের নিজ উদ্যোগে বা পক্ষের আবেদনক্রমে: আদালত নিজ উদ্যোগেও (suo motu) কোনো পক্ষকে সংযোজন করতে পারে, অথবা মোকদ্দমার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতেও এই কাজটি করতে পারে।
সংযোজনের ক্ষেত্রে আদালত নিশ্চিত করে যে, নতুন সংযোজিত পক্ষকে শুনানির সুযোগ দেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য সময় দেওয়া হয়।
কর্তন (Striking out)
আদালত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে মোকদ্দমা থেকে কোনো পক্ষকে কর্তন করতে পারে:
* অপ্রয়োজনীয় পক্ষ (Unnecessary Party): যদি কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার সাথে সংশ্লিষ্ট না হন বা তার উপস্থিতি মোকদ্দমার নিষ্পত্তির জন্য অপ্রয়োজনীয় হয়, তবে তাকে মোকদ্দমা থেকে কর্তন করা যেতে পারে।
* ভুলভাবে যুক্ত পক্ষ (Improperly Joined): যদি কোনো পক্ষকে ভুলভাবে মোকদ্দমায় যুক্ত করা হয়, তবে আদালত তাকে কর্তন করার আদেশ দিতে পারে।
* মামলার অপব্যবহার রোধ (Preventing Abuse of Process): যদি কোনো পক্ষকে মামলার অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে বা হয়রানির জন্য যুক্ত করা হয়, তবে আদালত তাকে কর্তন করতে পারে।
Order-1, Rule-10 এর মূল উদ্দেশ্য হলো মোকদ্দমার বিচারকে ন্যায়সংগত ও কার্যকর করা। এর মাধ্যমে আদালত নিশ্চিত করে যে, মোকদ্দমায় কেবল তারাই পক্ষ হিসেবে থাকবেন যারা প্রকৃত বিরোধের সাথে সংশ্লিষ্ট, এবং কোনো প্রয়োজনীয় পক্ষ যেন বাদ না পড়েন। এই ক্ষমতা আদালতকে মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়, যা বিচার প্রক্রিয়ার নমনীয়তা নিশ্চিত করে।
দেওয়ানী ৬৫/২০২৪ নং মোকদ্দমায় ক্ষতিগ্রস্ত বিবাদীদের প্রতিকার
বাদী স্বত্ব ঘোষণার দাবীতে দেওয়ানী ৬৫/২০২৪ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন যা উভয় বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রি (Ex-parte Decree) প্রদানে নিষ্পত্তি হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিবাদীদের জন্য দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ অনুযায়ী বেশ কয়েকটি প্রতিকার বিদ্যমান।
প্রতিকারসমূহ ও সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ
১. একতরফা ডিক্রি রদের জন্য আবেদন (Application for setting aside Ex-parte Decree):
* দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর Order-9, Rule-13 (আদেশ-৯, বিধি-১৩) এই প্রতিকারের প্রধান ভিত্তি।
* বিধান: যদি কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রি প্রদান করা হয়, তবে সেই বিবাদী উক্ত ডিক্রি রদের জন্য আবেদন করতে পারে। এই আবেদনের মূল ভিত্তি হলো:
* সমন জারি না হওয়া: যদি বিবাদী প্রমাণ করতে পারে যে, তার উপর সঠিকভাবে সমন জারি হয়নি এবং একতরফা ডিক্রি তার অজ্ঞাতে প্রদান করা হয়েছে।
* যথেষ্ট কারণ (Sufficient Cause): যদি বিবাদী প্রমাণ করতে পারে যে, তার শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ার জন্য একটি "যথেষ্ট কারণ" ছিল। উদাহরণস্বরূপ, গুরুতর অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অথবা এমন কোনো পরিস্থিতি যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
* সময়সীমা: এই আবেদন একতরফা ডিক্রি সম্পর্কে জানার ৩০ দিনের (ত্রিশ দিন) মধ্যে (তামাদি আইন, ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ১৬৪) করতে হয়।
* ফলাফল: আদালত যদি আবেদন মঞ্জুর করে, তাহলে একতরফা ডিক্রি বাতিল হয়ে যায় এবং মোকদ্দমা পুনরায় শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়, যেখানে বিবাদীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।
২. রিভিউ (Review):
* দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা ১১৪ (Section 114) এবং Order-47, Rule-1 (আদেশ-৪৭, বিধি-১) রিভিউয়ের বিধান প্রদান করে।
* বিধান: যদি ডিক্রি প্রদানকারী আদালত তার নিজের রায়ে বা আদেশে কোনো সুস্পষ্ট ভুল বা ত্রুটি (Error apparent on the face of the record) দেখতে পান, বা কোনো নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ (New and Important Matter or Evidence) আবিষ্কৃত হয় যা যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা সত্ত্বেও পূর্বে উপস্থাপন করা যায়নি, তবে সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে পারে।
* সময়সীমা: রিভিউ আবেদন ডিক্রি বা আদেশের তারিখ থেকে ৯০ দিনের (নববই দিন) মধ্যে (তামাদি আইন, ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ১৭৩) করতে হয়।
* ফলাফল: রিভিউ মঞ্জুর হলে আদালত তার পূর্বের রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করে সংশোধিত রায় বা আদেশ প্রদান করতে পারে।
৩. আপিল (Appeal):
* দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা ৯৬ (Section 96) আপিলের সাধারণ বিধান।
* বিধান: যদি কোনো একতরফা ডিক্রির বিরুদ্ধে Order-9, Rule-13 এর অধীনে আবেদন করা না হয়, বা আবেদন করে প্রতিকার না পাওয়া যায়, তবে সংক্ষুব্ধ বিবাদী ওই ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। আপিলের ক্ষেত্রে মূলত আইনের প্রশ্ন বা বাস্তবতার ভুল উপস্থাপনা (Error in law or misappreciation of facts) তুলে ধরা হয়।
* সময়সীমা: আপিল করার সময়সীমা একতরফা ডিক্রির তারিখ থেকে ৩০ দিন (ত্রিশ দিন) (তামাদি আইন, ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ১৫২), যদি সংশ্লিষ্ট আদালতের সামনে আপিলের জন্য নির্দিষ্ট কোন ভিন্ন সময়সীমা না থাকে।
* ফলাফল: আপিল আদালত যদি আপিল মঞ্জুর করে, তাহলে একতরফা ডিক্রি বাতিল হতে পারে, বা মোকদ্দমা পুনরায় শুনানির জন্য নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
৪. পুনর্গঠনের আবেদন (Application for Restitution):
* দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা ১৪৪ (Section 144) এই বিধান প্রদান করে।
* বিধান: যদি কোনো ডিক্রি বাতিল, সংশোধিত বা উল্টে দেওয়া হয়, এবং সেই ডিক্রির বলে কোনো পক্ষ কোনো সুবিধা পেয়ে থাকে, তবে আদালত ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে সেই সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিতে পারে। এটি মূলত একটি সহায়ক প্রতিকার যা অন্য কোনো প্রতিকারের (যেমন একতরফা ডিক্রি রদ বা আপিল) সাফল্যের পর প্রযোজ্য হয়।
* সময়সীমা: পুনর্গঠনের আবেদনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবে এটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে করতে হয়।
৫. নতুন মোকদ্দমা দায়ের (Filing a Fresh Suit):
* যদিও এটি সরাসরি একতরফা ডিক্রি রদের প্রতিকার নয়, তবে যদি উপরের কোনো প্রতিকার সম্ভব না হয় বা ব্যর্থ হয়, এবং ডিক্রিটি জালিয়াতি (Fraud) বা প্রতারণার (Misrepresentation) মাধ্যমে প্রাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়, তবে সংক্ষুব্ধ পক্ষ নতুন করে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত।
ইউটিউব ভিডিও- বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। ২৮ জুন ২০২৫। প্রশ্ন নং ১ ক ও খ