- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান। ২৮ জুন ২০২৫ প্রশ্নপত্রের ২ নং প্রশ্নের ক ও খ সমাধান।
দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ এর উপর দুটি প্রশ্নের সমাধান
ক) কোন কোন বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করে আর্জি মুসাবিদা করতে হবে তা The Code of Civil Procedure, 1908 এর Order- 7 এর প্রাসঙ্গিক বিধানসমূহ উল্লেখে বর্ণনা করুন ।
খ) মামলা দায়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আর্জিতে বাদীর দাবিকৃত সুস্পষ্ট প্রতিকারকে প্রভাবিত করতে পারে কি না তা সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
আর্জি (Plaint) মুসাবিদা করার ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) এর Order-৭ এ সুনির্দিষ্ট বিধানাবলি রয়েছে। এই বিধানগুলো অনুসরণ করে একটি কার্যকর ও ত্রুটিমুক্ত আর্জি প্রস্তুত করা সম্ভব। নিচে Order-৭ এর প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো উল্লেখ করে আর্জিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ বর্ণনা করা হলো:
আর্জিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ (Order-৭ অনুযায়ী)
দেওয়ানি কার্যবিধির Order-৭, Rule-১ এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতিটি আর্জিতে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:
* ১. আদালতের নাম: যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে, সেই আদালতের সঠিক নাম আর্জিতে উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(a))
* ২. বাদীর নাম, বিবরণ ও বাসস্থান: আর্জিতে বাদীর পুরো নাম, তার পরিচয় (যেমন: পিতার নাম, পেশা) এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(b))
* ৩. বিবাদীর নাম, বিবরণ ও বাসস্থান: একইভাবে, বিবাদীর পুরো নাম, তার পরিচয় এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে, যতদূর সম্ভব সঠিকভাবে। (Order-৭, Rule-১(c))
* ৪. নাবালক বা অসুস্থতার বিবরণ: যদি বাদী বা বিবাদী নাবালক হন বা মানসিকভাবে অসুস্থতার কারণে মামলা করার অযোগ্য হন, তবে সেই মর্মে একটি বিবৃতি আর্জিতে থাকতে হবে। (Order-৭, Rule-১(d))
* ৫. মামলার কারণ এবং কখন তা উদ্ভব হয়েছে: মামলা দায়ের করার সুনির্দিষ্ট কারণ বা ঘটনাগুলো আর্জিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও, কখন এই কারণগুলো উদ্ভব হয়েছে, অর্থাৎ ঘটনার তারিখ বা সময় উল্লেখ করা আবশ্যক, যাতে আদালতের এখতিয়ার এবং তামাদির প্রশ্ন বিচার করা সহজ হয়। (Order-৭, Rule-১(e))
* ৬. আদালতের এখতিয়ারের বিবরণ: যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে, সেই আদালতের এই মামলা বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আর্জিতে উল্লেখ করতে হবে। যেমন, যদি এখতিয়ার মূল্যমানের উপর নির্ভর করে, তাহলে মামলার সম্পত্তির মূল্যমান বা দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(f))
* ৭. দাবিকৃত প্রতিকার: আর্জিতে বাদী যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (যেমন: অর্থ আদায়, সম্পত্তির দখল, চুক্তি বাস্তবায়ন, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি) চাচ্ছেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(g))
* ৮. সেট-অফ বা দাবিকৃত অংশের পরিত্যাগের বিবরণ: যদি বাদী তার দাবিকৃত প্রতিকারের কোনো অংশ স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করেন বা সেট-অফের সুবিধা গ্রহণ করেন, তবে তার বিস্তারিত বিবরণ আর্জিতে উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(h))
* ৯. আদালতের ফি সংক্রান্ত বিবৃতি: যদি তামাদির আইনের বাইরে কোনো কারণে মামলা দায়ের করা হয়, তবে সেই কারণের একটি বিবৃতি আর্জিতে প্রদান করতে হবে। (Order-৭, Rule-১(i))
* ১০. সম্পত্তির সঠিক বর্ণনা (যদি স্থাবর সম্পত্তি হয়): যদি মামলাটি স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়, তবে সেই সম্পত্তির সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা আর্জিতে দিতে হবে, যাতে সম্পত্তিটি সহজেই চিহ্নিত করা যায়। (Order-৭, Rule-৩)
* ১১. বাদীর দাবি: আর্জিতে বাদীর দাবি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। (Order-৭, Rule-৭)
মামলা দায়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আর্জিতে বাদীর দাবিকৃত সুস্পষ্ট প্রতিকারকে প্রভাবিত করতে পারে কি না
হ্যাঁ, মামলা দায়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আর্জিতে বাদীর দাবিকৃত সুস্পষ্ট প্রতিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। দেওয়ানি কার্যবিধির Order-৬, Rule-১৭ (আরজি বা জবাব সংশোধন) এবং Order-৭, Rule-৭ (প্রতিকার) এর বিধানাবলি এই ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
আলোচনা ও উদাহরণ
সাধারণত, মামলা দায়েরের সময় বাদী যে প্রতিকার দাবি করেন, আদালত সেই প্রতিকারই মঞ্জুর করে থাকেন। তবে, কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে, মামলা দায়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ (Subsequent Events) আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে এবং এটি আদালতের রায়কে প্রভাবিত করতে পারে। একে "প্রতিকার প্রদানের ক্ষমতা" বা "পরবর্তী ঘটনার উপর ভিত্তি করে প্রতিকার প্রদান" বলা হয়।
Order-৭, Rule-৭ অনুযায়ী, আদালত কেবলমাত্র আর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারই নয়, বরং মামলার সকল তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, এমনকি আর্জিতে সুস্পষ্টভাবে দাবি না করা হলেও, বাদীকে এমন প্রতিকার দিতে পারেন যা মামলার ন্যায়বিচারের জন্য উপযুক্ত। এর অর্থ হলো, আদালত যখন মামলার সকল পক্ষের অধিকার ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন তারা মামলা দায়েরের পরবর্তী ঘটনাগুলোকেও বিবেচনায় নিতে পারেন।
উদাহরণ:
ধরা যাক, 'ক' নামের একজন ব্যক্তি 'খ' এর বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের সময় 'খ' ওই সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে আছেন বলে আর্জিতে উল্লেখ করা হলো। কিন্তু মামলা চলাকালীন সময়ে 'খ' স্বেচ্ছায় ওই সম্পত্তির দখল 'ক' এর কাছে হস্তান্তর করে দিলেন।
এই ক্ষেত্রে, মামলা দায়েরের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ (দখল হস্তান্তর) বাদীর মূল দাবিকৃত প্রতিকারকে (দখল পুনরুদ্ধার) সরাসরি প্রভাবিত করেছে। যদিও 'ক' দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা করেছিলেন, এখন যেহেতু তিনি দখল ফিরে পেয়েছেন, তাই আদালতের জন্য নতুন করে দখল পুনরুদ্ধারের আদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে, আদালত কেবল দখল হস্তান্তরের বিষয়টি রেকর্ডভুক্ত করতে পারেন এবং প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো প্রতিকার (যেমন- ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, যদি থাকে) নিয়ে আদেশ দিতে পারেন।
আরেকটি উদাহরণ হতে পারে, একটি চুক্তি ভঙ্গের মামলা যেখানে বাদী চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের (Specific Performance) জন্য প্রতিকার চেয়েছেন। যদি মামলা চলাকালীন সময়ে চুক্তির বিষয়বস্তু (যেমন: একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য) ধ্বংস হয়ে যায়, তবে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের প্রতিকার আর সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে, আদালত পরবর্তী ঘটনা বিবেচনা করে বাদীর জন্য বিকল্প প্রতিকার, যেমন: ক্ষতিপূরণ, মঞ্জুর করতে পারেন।
এই নীতিটি বিচার ব্যবস্থায় নমনীয়তা নিয়ে আসে এবং আদালতকে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ন্যায়বিচার প্রদানের সুযোগ দেয়। তবে, এই ধরনের পরবর্তী ঘটনা অবশ্যই মামলার মূল বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত হতে হবে এবং এটি আদালতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাসঙ্গিক হতে হবে।